ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের পরিচয় সনাক্ত
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক।
৮ জানুয়ারি শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে ওই হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে হামলাকারীদের হাতের পতাকা ও বিভিন্ন প্রতীক দেখে তাদের মতাদর্শ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে সেদিন অনেক ব্যক্তিও মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
ওই হামলায় সেসব ব্যক্তি ও সংগঠন জড়িত ছিল, সেগুলো হলো :
উগ্র ডানপন্থী সংগঠন কিউঅ্যানন
ক্যাপিটল হিলে হামলায় গোপন ‘উগ্র ডানপন্থী’ সংগঠন কিউঅ্যাননের সদস্যরা ছিলেন, হামলাকারীদের কয়েকজনের ছবি দেখে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিউঅ্যাননের সদস্যদের অনেকে অনলাইন প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তাদের অনেককে বিভিন্ন সময় ট্রাম্পের সমাবেশেও দেখা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তির চেহারায় আমেরিকার পতাকা আঁকা, মাথায় শিং সংবলিত ফারের টুপি ও হাতে বর্শায় বাঁধা আমেরিকার পতাকা। তাকে জ্যাক অ্যাঞ্জেলি হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি কিউঅ্যাননের এক সুপরিচিত সদস্য। তিনি নিজেকে ‘কিউঅ্যানন শ্যামান’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
গোপন সংগঠনটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার যোগ দেওয়ার প্রমাণ ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে। তার ফেসবুক পেজে উগ্রবাদী মতবাদ ও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারের ছবি রয়েছে।
উগ্রবাদী সংগঠন দ্য প্রাউড বয়েজ
ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের মধ্যে অপর উগ্রবাদী সংগঠন ‘দ্য প্রাউড বয়েজ’-এর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। ২০১৬ সালে গঠিত অভিবাসনবিরোধী এই সংগঠনের সব সদস্যই পুরুষ। প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে ট্রাম্প এই শ্বেতাঙ্গবাদী সংগঠনটির প্রশংসা করেছিলেন।
হামলার দিন সংগঠনটির নিক ওচস নামের এক সদস্য সেলফি তুলে টুইটারে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘হ্যালো ফ্রম দ্য ক্যাপিটল লোল।’ তিনি ক্যাপিটল হিলের ভেতর থেকে লাইভ স্ট্রিমিং করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে নিক ওচস নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘প্রাউড বয় এলডার ফ্রম হাওয়াই।’
অনলাইনে প্রভাবিত লোকজন
অনলাইন প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে অনেকে সেদিন ক্যাপিটল হিলে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত মুখ টিম জিওনেট। তিনি ‘বেকড আলাস্কা’ ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। ক্যাপিটল হিল থেকে তার লাইভ স্ট্রিম কয়েক হাজার মানুষ দেখেছিলেন। তিনি সে সময় হামলাকারীদের সঙ্গে কথা বলার দৃশ্যও প্রচার করেছিলেন। ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবেও টিম জিওনেট পরিচিত।
দোকানদারদের নাজেহাল করা ও মহামারির মধ্যেও মাস্ক পরায় টিম জিওনেটের অস্বীকৃতির ভিডিও ইউটিউবে পোস্ট করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি তার চ্যানেল গত অক্টোবরে বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে টুইটার ও পেপালও তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল।
কমিউনিস্টদের উপস্থিতি
ট্রাম্প সমর্থকদের ছদ্মবেশে কমিউনিস্টরা ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছিলেন বলে অনেকে দাবি করছেন। তারা হামলায় বামপন্থী সংগঠন ‘অ্যান্টিফা’র সদস্যদের অংশগ্রহণের কথাও বলছেন। এমন অভিযোগ যারা করছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বনামধন্য রিপাবলিকান নেতা ম্যাট গিটজ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে এক হামলাকারীর গায়ে কমিউনিস্টদের হাতুড়ির ট্যাটু দেখা গেছে। এটিকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে বলা হচ্ছে, এই ব্যক্তি ট্রাম্পের সমর্থক নন। তবে বিবিসির প্রতিবেদন মতে, একটু মনোযোগ দিয়ে তাকালে দেখা যায়, সেই হাতুড়ির ট্যাটুটি ভিডিও গেম সিরিজ ‘ডিজঅনার্ড’ থেকে নেওয়া।
পতাকা ও প্রতীক
ক্যাপিটল হিলে হামলার সময় হামলাকারীদের বিভিন্ন রকমের পতাকা ও প্রতীক বহন করতে দেখা গিয়েছিল। তাদের অন্তত একজনের হাতে ছিল কনফেডারেট পতাকা।
পতাকাটিকে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় দাসপ্রথার সমর্থকরা ব্যবহার করত। অনেকে এটিকে বর্ণবাদের প্রতীক হিসেবে মনে করে থাকেন। অনেকে আবার এই পতাকাকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যমান সংস্কৃতির অংশ বলে বিবেচনা করেন।
এই পতাকার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, এই পতাকা দাসপ্রথার প্রতীক নয়…বরং আমি মনে করি, এটি বাক্স্বাধীনতার প্রতীক।’ এ ছাড়া এক হামলাকারীর হাতে কুণ্ডলী পাকানো সাপের ছবি সংবলিত হলুদ পতাকা দেখা গিয়েছিল। অনেকে এ পতাকাকে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশবিরোধী আমেরিকান বিপ্লবের প্রতীক বলে মনে করে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে রক্ষণশীল ‘টি পার্টি’র কর্মীদের প্রতীক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরাও গত দুই দশক ধরে এই প্রতীক ব্যবহার করে আসছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মার্গারেট ওয়ার।
হামলাকারীদের শাস্তি নিয়ে আলোচনা
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দেশটির বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি মাইকেল শেরইউন সংবাদ বিফ্রিংয়ে বলেছেন, ‘সবকিছুর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও সহিংস বিক্ষোভের বিষয়টিও রয়েছে।’
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। তারা চাকরি হারাতে পারেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে হামলাকারীদের সঙ্গে নিজেদের এক কর্মীকে দেখে ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। তার পরনে প্রতিষ্ঠানটির আইডি ব্যাজ ছিল বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।