দুর্গাপুরে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে কৃষিজমিতে পুকুর খনন
লিয়াকত রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলায় সরকারী প্রজ্ঞাপন ও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রেসক্লাবকে ম্যানেজ করে চলছে অবৈধ পুকুর খনন।
The Building Construction Act 1952 এর ৩ ধারা অনুশারে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন বা পুণঃখনন করা যাবে না।
যদি কেউ এমনভাবে পুকুর বা সেচ নালা খনন করে ভুমি ও সড়কের পথ ব্যবহারে ভোগদখলে অসঙ্গতি সৃষ্টি করে তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে খনন বা পুঃখনন বন্ধ বা ভড়াট করার আদেশ দিতে পারেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উপজেলার প্রত্যেকটি বিল জুরে ফসলি জমি নষ্ট করে খনন করা হচ্ছে পুকুর। এতে আশপাশের বাজার স্কুলের মাঠ কৃষি জমিসহ কোন কিছুই বাদ যাচ্ছেনা এ ভূমিদস্যু ভেকু দালালদের দৌড়াতে।
এবছর সিন্ডিকেট ভাবে স্থানীয় ভেকু ব্যাবসায়ীদের দালালের সহযোগিতায় সকল প্রশাসন ও দুর্গাপুর প্রেসক্লাবকে ম্যানেজ করে পুকুরগুলো খনন করা হচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দালালরা চিটাগাং, টাঙ্গাইল, পাবনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় থেকে চুক্তি ভিত্তিক ভেকুগাড়ী নিয়ে স্থানীয় নেতার মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে নাম মাত্র টাকা দিয়ে মৌখিক অনুমতি নিয়ে বাকি টাকা ঢুকছে দালালদের পকেটে।
এ যেন দেখার কেউ নেই। যে দিকে চোখ পড়ে সেদিকেই শুধু তিন ফসলি জমিতেই অবৈধ পুকুর খননের চিত্র। গত একমাস থেকে দুর্গাপুর উপজেলার পৌর এলাকা সহ উপজেলার ৭,টি ইউনিয়নে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ধ্বনি পরিবর্তন ছাড়াই চলছে অবৈধ পুকুর খনন।
কৃষকরা পুকুর খনন বন্ধের দাবীতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দিয়েও রক্ষা করতে পারছেন না তাদের আবাদি তিন ফসলি জমি। অভিযোগ ওঠেছে উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরের কিছু কতিপয় ব্যাক্তিদের ম্যানেজ করে প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় সাংবাদিকদের ছত্র ছায়ায় এবং দুর্গাপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় চলছে এই সব পুকুর খনন।
আর এই পুকুর খননের মুল সিন্ডিকেটের ভুমিকায় রয়েছে হাফ ডর্জন মামলার আসামি ভেকু দালাল নারায়ণপুর গ্রামের মহিদুল, নওপাড়া আলিপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম, আলিপুর বাজারের ফিরোজ, কিশমত গনকৌড়ের হাফিজ, কয়ামজামপুরের জাহাঙ্গীর, নান্দিগ্রামের আমিন, ঝালুকার মান্নান ঢাকা থেকে আসা মোশারফ ও ঢাকা আমিন বাজার থেকে আসা ছলিম। তারা সন্ধ্যা হলেই থানায় বসে পুকুর খননের রেট নির্ধারণ করেন।
এই সকল দালালরা এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল কাউকে তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে দিনরাত বিরতিহীন ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে (এক্সোভেটর ভেকু) গাড়ী দিয়ে পুকুর খননের কাজ।
আর অধিকাংশ পুকুর খননের মাটি স্থানীয় ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবারহ করা হচ্ছে। আর ওই সরবাহকৃত ট্রাক্টার গাড়ীতে করে মাটি বহনের ফলে সরকারের কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণকৃত গ্রামীন পাকা কাচা পাকা রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় খানা খন্দ। এ যেন আমারা মগের মুল্লুকে বাস করছি। এতে করে আবাদি আবাদি ফসলে ধুলাবালি পড়ে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ফসল আর একদিকে দুর্ভোগে পড়ছে সকল প্রকার যানবহন ও পথচারিরা।
অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে কতিপয় বেকু দালাল ভূমিদস্যুরা।
আরও অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুর থানা পুলিশ প্রতিটি পুকুর থেকে পার বিঘাপতি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একটি দালাল চক্রকে পুকুর খননের সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছেন। এই পুকুর খননে এক্সোভেটর ভেকু দালালসহ দুর্গাপুরে অন্তত শতাধিক দালাল চক্র কাজ করছে। গত বছরে পুকুর খনন কাজে হাই কোর্ট থেকে নামে মাত্র রিটকপি নিয়ে যাচাই বাছাই ছাড়াই পুকুর খনন করলেও এবছরে কোন প্রকার রিটের প্রয়োজন হচ্ছে না। উপজেলার বাসিদের মধ্যে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কেন এই পুকুর খনন বন্ধ হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ৪ শতাধিক স্থানে পাল্লা দিয়ে বড় বড় আয়তনের পুকুর ও দিঘি খনন কাজ চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার জয়নগর, নওপাড়া, কিসমত গণকৈড়, দেলুয়াবাড়ী, পানানগর, ঝালুকা ও মাড়িয়াসহ প্রায় সকল ইউনিয়ন এলাকার বিল গুলোতে ঘুরে এর সত্যতা মিলেছে। উপজেলার ওয়াজের মোড়ে পুকুর খনন করছেন, আওয়ামীলীগ নেতা মোজাহার আলী ১৫ বিঘা, বাগমা বিলে আব্দুল হালিম ৩০ বিঘা, ঝলমরিয়া বিলে শহিদুল ইসলাম ১০ বিঘা, মাড়িয়া বিলে উজ্জল ৮ বিঘা, মোস্তাক ৭ বিঘা,পানানগর বিলে মহিদুল ইসলাম ২৫ বিঘা, আংরার বিলে আওয়াল ৯০ বিঘা, নওপাড়া ও পালশার বিলে ইসলাম ৫০ বিঘা এছাড়াও দুর্গাপুর নারায়নপুর বাক্কার মেম্বার ২০ বিঘা, পাচুবাড়ী বিলে আলম ও বাক্কার ৩০ বিঘা, ইউসুফ আলী ও ভেকু দালাল মহিদুল ৭০ বিঘা, নামুদর খালি মুনছের ২০ বিঘা, আলীপুর বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন বিলে সালাম কালামের ৪০ বিঘা, সারপুকরিয়া বিলে সাবেক কাউন্সিলন ওবায়দুল ৫০ বিঘা,চুলকানি বিলে উজ্জল ৪৫ বিঘা,আনুলিয়া বিলে শহিদুল ৪০ বিঘা। এছাড়াও ধরমপুর, তেবিলা, কয়মজমপুর, আলীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে পুকুর খনন।
পুকুর খনন করতে জমি লিজ না দিতে চাইলে জমির মালিকদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভিতি প্রদান করে জোর করে জমি লিজ নেওয়া মত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও জমি দিতে না চাইলেও জোর করে রাতারাতি কেটে ফেলা হচ্ছে তাদের জমি। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৫ থেকে ৭ বছরে এই উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পুকুর খননের ফলে বিলিন হয়ে গেছে। তবে আগামিতে এভাবে যদি পুকুর খনন চলতে থাকে তা হলে এই উপজেলার আবাদী জমি হারিকেন দিয়েও খুজে পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।
পাঁচুবাড়ি গ্রামের কৃষক সলিম আলী বলেন, আমার জমি দিতে না চাইলেও স্থানীয় পুকুর খনন কারি আলিম জোর করে তার জমিতে পুকুর খনন করছে। ওই জমি ছাড়া আমার আর কোন জমি নেই। আমি তাদের কাছে নিরুপায় হয়ে পড়েছি।
কৃষক আমজাদ আলী জানান, এবছরে যে হারে পুকুর খনন হচ্ছে তাতে করে ওষধ করারমত ফসলি মাঠ আর খুজে পাওয়া যাবে না। এছাড়াও তার পান বরজের সাথে প্রভাবশালী আব্দুল হালিম অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন করছেন। ওই পুকুর খননের ফলে আগামিতে তাদের পান