ঢাকা | জানুয়ারী ১১, ২০২৫ - ১০:৫৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

ময়মনসিংহে পুলিশ সুপারের পদক্ষেপে যৌনপল্লি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন তিন কিশোরী

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Saturday, January 11, 2025 - 2:16 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 3 বার

নিজস্ব সংবাদদাতা :ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম এর পদক্ষেপে স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করলেন তিন কিশোরী যৌনকর্মী। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়েছে তাদের পরিবারে।পতিতাবৃত্তির অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আবারও সুস্থ সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরে পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান কিশোরী জবা,তিথি ও ঝর্ণার পরিবারের সদস্যরা।

সুত্র জানিয়েছে-কিশোরী ঝর্ণার (ছদ্মনাম) পরিবারে সারাবছর অভাব অনটন লেগেই থাকতো। তাই স্বপ্ন দেখেন নিজে টাকা রোজগারের। দুই বছর আগে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে রংপুর মহানগরীর বাসা থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতে ঢাকায় যান। সেখানে সাগর নামে এক যুবকের খপ্পরে পড়েন ঝর্ণা। ওই যুবক তাকে বেশি বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যান। এক পর্যায়ে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত পানি পান করিয়ে অজ্ঞান করে ময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকার রমেশ চন্দ্র সেন রোডের যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন।

একই দশা হয় আরও দুই কিশোরীর। এদের মধ্যে একজনের নাম জবা (ছদ্মনাম) ও আরেকজনের নাম তিথি (ছদ্মনাম)। তাদের সুখের সংসার থাকলেও বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পরই ওই দুই কিশোরী সৎ মায়ের বকাবকি আর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চাকরির পরিকল্পনা করেন।

২০২৩ সালের আগস্টে রংপুরের বাড়ি থেকে ঢাকায় যান জবা। এক ব্যক্তির খপ্পরে পড়েন। বিউটি পার্লারে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ময়মনসিংহ যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন।
অপরদিকে তিথি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বরিশালে গ্রামের বাড়ি থেকে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় এলে এক ব্যক্তি তাকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৌশলে নিয়ে যান ময়মনসিংহের যৌনপল্লিতে। সেখানে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে ওই তিন কিশোরীর জীবন কাটতে থাকে যৌনপল্লিতে।

অবশেষে ওই তিন কিশোরীরকে উদ্ধার করেছে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে তাদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, যৌনপল্লিতে যারা নিয়ে এসে বিক্রি করেছে তাদের বিরুদ্ধে তিন কিশোরী কোনো অভিযোগ করেননি। তাদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অশ্রুসিক্ত চোখে বাবা-মা তাদের নিয়ে গেছেন। এসময় পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের (কিশোরী) ভালো রাখার আশ্বাস দেয়।

পুলিশ জানায়, কিশোরী ঝর্ণা যৌনপল্লি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘদিন যাবত চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সুকৌশলে তার মায়ের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। যৌনপল্লিতে আসার ঘটনাটি মা-বাবাকে খুলে বলে। এমতাবস্থায় তার বাবা-মা মেয়েকে ফেরত নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওদিনই গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশ যৌনপল্লিতে গিয়ে ঝর্ণাসহ আরও দুই কিশোরীরকে উদ্ধার করে নিয়ে আনে।

উদ্ধারকৃত ভিকটিমরা পতিতাবৃত্তির অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আবারও সুস্থ সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে এবং তাদেরকে এখানে আনা সম্পর্কে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করবে না বলে অবহিত করলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাদেরকে স্ব-স্ব পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। তাদেরকে ফিরে পেয়ে অশ্রুসিক্ত পিতামাতার হৃদয়ে প্রশান্তির আবেশ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ সুপারের এই আন্তরিকতা সমাজের সর্বস্তরে ইতিবাচকতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও- জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, কোনো মেয়ে পরিবারের লোকজন ছাড়া দূরে কোথাও গেলে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তা না হলে, এসব কিশোরীর মতো অন্য যে কারও জীবনে এমন অন্ধকার নেমে আসতে পারে। তবে পুলিশ যেকোনো অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সবসময় তৎপর রয়েছে।