ভিসা দালালের প্রলোভনে অসহায়ত্ব জীবন যাপন করে যাচ্ছে অসংখ্য সৌদি আরব প্রবাসী।

দেশ, আত্নীয়-স্বজন পরিবার ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে পৃথিবী জুড়ে রয়েছে অসংখ্য বাংলাদেশী প্রবাসী।পরিবারের স্বপ্ন পূরণ আর নিজেকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য মাতৃভূমি থেকে হাজারো মাইল দূরে প্রবাসীরা আসলে কেমন থাকে প্রবাসে।সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের নানা হয়রানি,যন্ত্রণাদগ্ধ বাস্তবতার আলোকে এই লেখা।
প্রবাসীদের যন্ত্রণা প্রকাশের ভাষা নাই। স্বপ্নের প্রবাস বাস্তবে বিশাল আকারের এক দানব বললে ভূল বলা হবে না। আমার এই কলামে যা লিখবো তার প্রতিটি অক্ষর বাস্তব সত্য। স্বপ্নের সাজানো প্রবাস আর বাস্তবতার মধ্যে বিশাল ব্যবধান ।আমি প্রবাসের বাস্তব রূপ দেখে অনেকদিন ধরে লিখবো বলে মনস্থির করেও লিখা হয়ে উঠেনি।সৌদি আরবে প্রতি নিয়ত প্রবাসীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। চারদিকে আতংকিত সৌদি প্রবাসীদের নেই কোন নিয়মিত চাকুরী। চাকুরী থাক বা না থাক প্রতি মাসে খরচ হয় ৩০০ থেকে ৫০০ রিয়াল মাসিক খরচ।বছর শেষে ভিসা নবায়নের জন্য সৌদি আরব সরকারি ফিস ও সৌদি কপিল কে দিতে হয় ১০ হাজার রিয়াল মতো।
একজন প্রবাসী দেশের মায়া মমতা ত্যাগ করে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাতে বিদেশ নামক সোনার হরিণের খুজে প্রবাসীর খাতায় নাম লেখায়।কিন্তু সেই সোনার হরিণ সৌদি আরবে এখন বেঁচে নাই।বর্তমান সৌদি আরবে চারদিকে গণ গ্রেফতার প্রবাসীদের কে স্বদেশে সফর করে দিচ্ছে বিভিন্ন অজুহাতে। সৌদি আরব জুড়ে শ্রম বাজারে এই মন্দা অবস্থায় একদল মানুষ রূপি ভিসার দালাল নিজেদের আর্থিক সুবিধার জন্য নামে বেনামে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশে ভিসার ব্যবসা করে যাচ্ছে।আমার স্বচক্ষে দেখা অসংখ্য যুবক নতুন ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে এসে অসহায়ত্ব জীবন যাপন করে যাচ্ছে।কপিলের সাথে দেখা নাই,নেই কোন একামা ও চাকুরী।
একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসাবে বাংলাদেশের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও অনুরোধ জানাচ্ছি সৌদি আরবের নতুন ভিসা নিয়ে আসতে ইচ্ছুক ভাইদের প্রতি। আপনারা সৌদি আরব আসবেন ওমরাহ পালন করার নিয়তে কারণ সৌদি আরবের শ্রম বাজারের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ।এখানে যদি আপনার টাকা আয় করার নিয়তে আসেন তাহলে ভূল করবেন। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে ভিসা ক্রয় করবেন না। ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে যদি সৌদি আরব আসেন তাহলে আপনার বাড়িতে ঋনের টাকা পরিশোধ করার মতো আয় থাকতে হবে। আপনার আয় থেকে ঋন পরিশোধের কথা চিন্তা করলে ভূল করবেন।৫ লক্ষ টাকা দিয়ে সৌদি আরবের ভিসা নিবেন ভাল কিন্তু বর্তমান সৌদি আরব সম্পর্কে ভাল করে জেনে ভিসা ক্রয় করবেন। বর্তমানে সৌদি আরবে শ্রমিকের মূল্য মাসিক১৫০০(এক হাজার পাঁচশত)রিয়াল তাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয়না। চাকুরী থাক বা না থাক আপনাকে নিয়মিত মাসিক সৌদি কপিল কে দিতে হবে ৩০০ রিয়াল। তারপর থাকা ও খাওয়া বাবদ ৩০০ রিয়াল খরচ হবে।এবং বছর শেষে ভিসা নবায়ন করতে ১০,০০০(দশ হাজার)রিয়াল লাগবে।এরমধ্যে আবার কপিল বদলাতে টাকা লাগতে পারে যদি কপিল পরিবর্তন করতে হয় তাহলে ২০০০(দুই হাজার)রিয়াল অতিরিক্ত করচ করতে হবে। এই ছাড়াও প্রবাসে নানা সমস্যায় সম্মুখীন হতে হয় তা একজন আর্দশবান প্রবাসী জানে। কিন্তু একজন মুনাফা লোভি ভিসার দালাল নিজের সুবিধার জন্য এই সমস্যা গুলো উল্লেখ না করে প্রলোভন দেখিয়ে অসংখ্য যুবকের ভবিষ্যত নষ্ট করে ফেলে।
এবার একটু চিন্তা করুন কি করবেন? আমার পরামর্শ ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশ নামক সোনার হরিণের খুজে না এসে স্বদেশে শ্রমিকের কাজ করা অনেক ভাল হয়।আমি আমার প্রবাস জীবনে অসংখ্য বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে দেখা ও পরিচয় এবং কাজ করা সুযোগ হয়েছে। এরমধ্যে লক্ষ্য করলাম একজন পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তানির আন্তরিকতা। ভারতের প্রতি ভারতের আন্তরিকতা। এবং আমি আরো লক্ষ্য করলাম অসংখ্য মায়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে সৌদি আরবে নানা রকম অপরাধ জগতে লিপ্ত হচ্ছে যার কারনে বাংলাদেশের শ্রম বাজারে সুনাম নষ্ট হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট।
আসুন আমরা সবাই একটু সচেতন হয়। ভিসার দালালদের কে বয়কট করুন।সব কিছু জেনে এবং ভিসার কাজ কি,বেতন কত, সুযোগ সুবিধা জেনে ভিসা ক্রয় করার অনুরোধ রইল।অন্যতায় কষ্টের মধ্য প্রবাসে জীবন যাপন করতে হবে।
লেখক : তারেক আজিজ চৌধুরী
তরুণ সংগঠক ও গণমাধ্যম কর্মী,সৌদি আরব