নতুন করোনা জার্মানিতেও শনাক্ত হলো
মোঃ নাসির, বিশেষ প্রতিনিধিঃইউরোপের দেশ ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর তা শনাক্ত হচ্ছে অন্যান্য দেশগুলোতেও। ইতিমধ্যে বেলজিয়া, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, হংকং, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশে ভাইরাসটি চিহ্নিত হয়েছে। বাদ যায়নি বাংলাদেশও।
এবার তা শনাক্ত হয়েছে ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র জার্মানিতে। দেশটির ফ্রান্কফুর্টে এক নারীর শরীরে নতুন ধরনের এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা কিছুটা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে জার্মানদের মাঝে।
শুধু জার্মানি নয়, ক্রিসমাস উৎসবের মধ্যে ইউরোপের দেশগুলোতে একাকার স্বাস্থ্যবিধি। আর এতে করে সংক্রমণ আরও দ্রুত বিস্তারের সুযোগ পেয়েছে।
এদিকে, জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সহ ইউরোপজুড়ে করোনার বিধিনিষেধের মধ্যেও চিরায়ত নিয়মেই উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হচ্ছে বড়দিন। যেখানে কমতি নেই কোনকিছুর।
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পাহন জানান, ‘নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাডেন ভুর্টেমবার্গের ওই নারী গত ২০ ডিসেম্বর হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে জার্মানির ফ্রান্কফুর্টে পৌঁছানোর পর তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে তার শরীরে নতুন ভাইরাসটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমানে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া নতুন ধরণের এই ভাইরাসে শিশুরাও সংক্রমণের শিকার হতে পারে। তবে নতুন প্রকৃতির এই ভাইরাস সম্পর্কে জানার তাগিদ দিচ্ছেন ভাইরোলজিস্ট বা ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, ব্রিটেনে সম্প্রতি করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে রাজধানী লন্ডনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে প্রকোপ দেখা দিয়েছে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের। যার তাণ্ডব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশটিতে। এমতাবস্থায় জারি করা হয়েছে লকডাউন। এমনকি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এক সপ্তাহের জন্য সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের চরিত্র বদলানো নতুন কিছু নয়। চলমান করোনাভাইরাসেরও বিভিন্ন প্রজাতি আছে। তবে এখন পর্যন্ত সেই প্রজাতিগুলোর মধ্যে আর বেশি ক্ষতিকারক কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তা আগের তুলনায় অনেক বেশি ছোঁয়াচে এবং ভয়ংকরভাবে দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে।
গত মাসে দেখা গিয়েছিল, লাখ লাখ মিংক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আবার স্পেনে একটি নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, যা ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু দুটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ওই ভাইরাস মূল করোনা ভাইরাসের থেকে মারাত্মক নয়।
কিন্তু এবার যুক্তরাজ্যে গত সপ্তাহে যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে, তা আগের থেকে অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে। তবে এই ভাইরাসে মানুষের অসুস্থতা আরো জটিল চেহারা নিচ্ছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এমনিতেই মারাত্মক। ফলে করোনা হলে তাতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। সে জন্যই দ্রুত করোনা ছড়ালে তা আরো মারাত্মক হয়ে উঠতে বাধ্য।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ‘নতুন ধরনের করোনাভাইরাস আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়াচ্ছে। যার জেরে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে সম্প্রতি অতি দ্রুত গতি করোনা বিস্তার লাভ করছে।’ খবর ডয়েচে ভেলের।
ভাইরাসটি যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তা গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছিল যুক্তরাজ্য। লন্ডনে নতুন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৬০ শতাংশই নতুন ভাইরাসটির কবলে পড়েছেন।
দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত রোববারই এক হাজার ১০০ জন নতুন এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্রমেই তা আরও বাড়ছে। ভাইরাসটি প্রথম উৎপত্তি ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
এদিকে নতুন ভাইরাসকে আটকাতে প্রধানমন্ত্রী জনসন লন্ডন এবং দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছেন। গত শনিবার তিনি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, ততই এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা বেশি করে জানছি। ভাইরাস যদি চরিত্র বদল করে আক্রমণ করে, তবে আমাদেরও আত্মরক্ষার চরিত্র বদল করতে হবে।’
আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই নতুন ধরনের ভাইরাসকে আটকানো কঠিন। কারণ, এই ভাইরাস অতি দ্রুত ছড়ায়। যুক্তরাজ্যে এখন করোনার প্রতিষেধক দেয়া চলছে। এখন আশি বছরের বেশি বয়সীদের এই প্রতিষেধক দেয়া হচ্ছে।’