ঢাকা | জানুয়ারী ১১, ২০২৫ - ২:১১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

কুলাউড়া পৌর নির্বাচনে ভোট বিক্রি হচ্ছে বিকাশ ঘরে

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Wednesday, January 13, 2021 - 9:13 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 54 বার

কুলাউড়া প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে কালো টাকার ছড়াছড়ি। মহিলা ভোটারদের বাসায় নিয়ে পবিত্র গ্রন্থ স্পর্শ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে টাকা! সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলছে কালো টাকা বিতরণ। আর টাকা বিতরণে কাজ করছেন স্থানীয় যুবলীগের এক দায়িত্বশীল নেতা। এমন জনশ্রুতি ছড়িয়েছে কুলাউড়ার সবর্ত্র।

ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন কালো টাকার সন্ধান পেয়ে ভিজিল্যান্স টিমের ৫ জন কর্মকর্তা মোবাইল কোর্ট নিয়ে ঝটিকা দেন বর্তমান মেয়র শফি আলম ইউনুছের বাসায়। নির্বাচন কমিশনের কাছে খবর ছিলো মেয়র ইউনুছের বাসায় কালো টাকা ছিলো। তবে অভিযানের খবর পেয়ে আগে-ভাগেই টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করে।

পৌরসভার ১, ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডের কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে কালো টাকা বিতরণের সত্যতা মিললেও তারা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনের বাকী আর মাত্র ৩ তিন। দ্বিতীয়ধাপে ১৬ জানুয়ারি কুলাউড়া পৌরসভায় ব্যালেট পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ, ধানের শীষ প্রতীকে সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ, নারিকেল গাছ প্রতীকে (আ.লীগের বিদ্রোহী) বর্তমান মেয়র শফি আলম ইউনুস এবং জগ প্রতীকে লড়ছেন শাজান মিয়া। এছাড়া কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

একটি সূত্র জানায়, বিজয় নিজের পক্ষে নিতে মেয়র ইউনুছ ও স্বতন্ত্র এক প্রার্থী পাঁচ হাজার ভোটারকে টার্গেট করে ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাম, মোবাইল নাম্বার ও ভোটার কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহের করা হয়েছে। এছাড়া নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে ভোট আদায়ের চেষ্টাও চলছে। পরে টাকা বিতরণে ব্যবহার হচ্ছে বিকাশ, নগদ ও রকেট। টাকাসহ বেশ কয়েক জায়গায় বর্তমান মেয়রের অনুসারীরা আটক হয়েছে জনতার কাছে। এভাবে কালো টাকা বিতরণের ফলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। জয় নিয়ে করছেন দুশ্চিন্তায়। কারণ সৎ, যোগ্য প্রার্থী টাকা বিতরণ করতে পারছেন না বলে জানান স্থানীয় ভোটার।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, ১৬ জানুয়ারি হবে হিসাব-নিকাশ। তাই সৎ, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। কিন্তু যেভাবে কালো টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে। এখানে সৎ, যোগ্য প্রার্থী কি জয়ী হতে পারবেন? তাই ভোট দিতে চাই যিনি এগিয়ে আছেন, তাকেই।

এক রিকশাচালক বলেন, রিকশা চালিয়ে দৈনিক তিনশ টাকা পেতাম। বর্তমানে মেয়র প্রার্থীর সাথে কাজ করে দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা পাচ্ছি। নির্বাচন যদি আরো কয়েক মাস পর হতো। তাহলে আরো ভালো হতো। কয়েক মাস ভালোভাবেই চলতে পারতাম।

প্রার্থীরা জয়ী হতে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কালো টাকা বিতরণ করছে। এতে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী হতাশ হয়ে পড়েছেন। সাপ-মইয়ের লুডু খেলার মতো ভোটের আগে বর্তমান মেয়রের জনমত উঠা-নামা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ ভোটার জানান, কেউ টাকা নিয়ে এলে না ধরে উপায় নেই। টাকা ফেরৎ দিলে অহেতুক রোষানলে পড়তে হবে বর্তমান মেয়রের। তার চাইতে টাকা নিলেও সময়মত উপযুক্ত সৎ, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে বর্তমান মেয়র শফি আলম ইউনুছের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্ঠা করা হলেও ফোন ধরেননি।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, আমাকে কুলাউড়া উপজেলা আ.লীগ ও পৌর আ.লীগ সর্বোচ্চ সহযোীতা করছে। আ.লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দও বসে নেই। এতে কুলাউড়ায় নৌকার পক্ষে জনস্রোতে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদিন কালো টাকা বিতরণ করছেন। আমি এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছি।

এ বিষয়ে সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও কুলাউড়া উপজেলার নির্বাচন অফিসার আহসান ইকবাল বলেন, কাউকেই কালো টাকা বিতরণ করতে দেয়া হবে না। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়রের বাসায় মোবাইল কোর্ট করা হয়। আমরা উনাকে সতর্ক করেছি। নিয়মনীতি মোতাবেক প্রচারণা করতে হবে। আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।