“ভ্রমণ করলে জ্ঞানের পরিধি বারে” নেত্রকোণা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষ সফর সম্পন্ন
সফর থেকে ফিরে, ফারুক আহমেদ : সফরে গেলে নতুনত্বকে চেনা যায়, জানা যায়। এছাড়াও জ্ঞানের পরিধি বারে। এরই লক্ষ্যে উদ্দেশ্যে নেত্রকোণা সরকারি কলেজ এর উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম সহ ৪৭ সদস্যের একটি দলের শিক্ষা সফর সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
গত ৬জুন মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে নেত্রকোনা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত ইংরেজ কবরস্থানের (War Cemetery) সামনে গিয়ে ৭জুন ভোর ৫টার দিকে পৌঁছাই।
দলটিতে নেত্রকোণা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ মুনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত ইংরেজ কবরস্থান (War Cemetery), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শালবন বিহার, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (BARD) সহ কুমিল্লার বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য এই শিক্ষা সফরের আয়োজন করেছিল।
দলটি সর্বপ্রথম ময়নামতিতে অবস্থিত “ওয়্যার সিমেট্রিতে” প্রবেশ করে। এটি একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই সমাধিক্ষেত্র গুলো তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণসমাধিক্ষেত্র আছে। তার অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। এখানে মোট ৭৩৬টি কবর রয়েছে।
এরপর দলটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে। মোটামুটি বেশ কয়েকটি পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত অনেক সুন্দর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। কিছু সময় কাটানোর পর সেখান থেকে বের হয়ে যায়।
তারপর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি সভ্যতা শালবন বিহার পরিদর্শন করে। সেখানে শুধু ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছু নেই। এ গুলোই বাংলার প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে। সেখানে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে অল্প কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় বের হয়ে যায়। যেহেতু উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা সফর তাই বিশ্রামের এক ফাঁকে সফর সঙ্গী বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উদ্ভিদ সম্পর্কে পাঠ্য বইয়ের আলোকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ক্লাস দেন।
এপর পরিদর্শনের প্রধান আকর্ষণ “বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে” প্রবেশ করে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনস্থ একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান।
১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা পল্লীর দারিদ্র্য বিমোচনে নিরলস সহায়তা করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে কোটবাড়ীতে অবস্থিত।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর এ স্থানটি অত্যন্ত চমৎকার এবং সুন্দর। এখানে রয়েছে আকর্ষণীয় কিছু উচু জায়গা যেগুলো সমতলভূমি থেকে বেশ উপরে। এখানে অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ, ফল ও ঔষধি বৃক্ষ রয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর সেই উঁচু জায়গাতেই দুপুরের নামাজ পড়ার পর বিশ্রাম করে তারপর ক্যাফেটেরিয়াতে চলে যাই।
বিকেলের খাবার শেষ করে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আবারো সন্ধ্যার আগে নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। পথিমধ্যে দেবিদ্ধার এলাকায় বাস থামিয়ে মাগরিবের নামজ পড়া হয়। তার পর রাত ১১টার দিকে ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় বাস থামিয়ে রাতের খাবার শেষ করে। তার পর নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ৮জুন প্রথম প্রহরের শেষ দিকে সফলভাবে শিক্ষা সফর থেকে ফিরে পুনরায় নেত্রকোনা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে এসে বাস থামে। পরে বিভাগীয় প্রধান স্যারে শেষ বক্তব্যের মাধ্যমে এই শিক্ষা সফরের সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে সবাই যার যার বাসগৃহে চলে যায়।
দলটির দলনেতা উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমি মনে করি এই শিক্ষা কোনো পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা নয়। একাডেমিক পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও আরও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। প্রকৃতি থেকেও অনেক শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি এবং জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন জায়গা পরিদর্শন করা ধরকার। ধর্মীয় নীতিতেও দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের নির্দেশনা রয়েছে। পুঁতিগত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মেমোরিতে বেশি সময় থাকেনা। তাদের যদি পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় এই শিক্ষা মেমোরিতে বেশি সময় স্থায়ী থাকে। এছাড়াও তিনি আরও বলে উদ্ভিদ আমাদের চরম বন্ধু। উদ্ভিদ যেমন আমাদেরকে কাঠ, ফুল, ফল ও অক্সিজেন দিয়ে থাকে তেমনি উদ্ভিদ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে বিভিন্ন রোগের ভেষজ ঔষধের উপকারিতাও পাওয়া যায়। তাই উদ্ভিদ সম্পর্কে আমাদের ভালো জ্ঞান রাখতে হবে।