ইউনিয়ন ভবনে আটকে রেখে বৃদ্ধকে রাত ভর নির্যাতনের মামলায় ২ ইউপি সদস্য গ্রেফতার
সুলতান মাহমুদ, জয়পুরহাট প্রতিনিধি : জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে রাত ভর আটকে রেখে বৃদ্ধকে নির্যাতনের ঘটনায় ওই ইউনিয়নের ২ ক্ষমতাধর সদস্যকে (মেম্বার) গ্রেফতার করেছে পাঁচবিবি থানা পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে পাঁচবিবি থানা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদুল ইসলাম (২৮) ও ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য শাহানুর ইসলাম (৩০)।
ঘটনা ও মামলার সূত্র ধরে ভূক্তভোগী বৃদ্ধ একই ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জোব্বারের ছেলে আব্দুল জলিল অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে মাহবুবের (২৫)কাছ একই গ্রামের বারীকের ছেলে সৈকত (২২) ৩ হাজার ২’শ টাকা ধার নিলেও দীর্ঘ দিন ধরে টাকাগুলো ফেবত দেননি।
এ নিয়ে দু’ জনের মধ্যে প্রায় কথা কাটাকাটি হয়। এরই এক পর্যায়ে ৮জুন বিকেলে রহমতপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট সদর উপজেলার মাধাই নগর বাজারে সৈকতের সাথে মাহবুবের আবারো কথাকাটি শুরু হয়। এ সময় সৈকতের পক্ষ নিয়ে ইউপি সদস্য ফরিদুলের সাথে মাহবুবের ধাক্কাধাক্কি হয়।
পরে ইউপি সদস্য ফরিদুল, তার সহযোগী একই ইউনিয়নের আরেক সদস্য শাহানুর ইসলাম ও বেশ কয়েক জন গ্রাম পুলিশ সদর উপজেলার আমদই ইউনিযনের মাধাইনগর বাজার থেকে (বিনা অনুমতিতে সদর উপজেলা ও ইউনিয়ন এলাকায় প্রবেশ করে) মাহবুবকে মারধর করে ও তাকে টেনে হিঁচরে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বাজারের লোকজনের (সাপ্তাহিক হাট বার) মারমুখি জনতার তোপের মুখে পড়েন ওই ২ ইউপি সদস্যসহ গ্রাম পুলিশর।
বাধ্য হয়ে পিছু হটে দ্রত ঘটনাস্থল স্থল ত্যাগ করে নিজ ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মাহবুবের বাবা বৃদ্ধ আব্দুল জলিলকে পথে একা দেখতে পেয়ে তাকে ধরে এনে ই্উনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখেন ওই ইউপি সদস্য ফরিদুল, শাহানুর ও তাদের গ্রাম পুলিশরা।
বৃদ্ধ জলিল আরো জানান, তার ভাতিজা, মাহবুবের চাচাতো ভাই ও শহিদুলের ছেলে একই গ্রামের মাসুদ রানা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। মাসুদ তার কর্মস্থল থেকে ফিরে খবর পেয়ে কুসুম্বা ইউনিয়নে গিয়ে তার চাচাকে আটকে রাখার কারন জানতে চান। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে চর-থাপ্পর মেরে মাসুদকেও একই কক্ষে চাচার সাথে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা।
ভূক্তভোগী জলিল বলেন, পরে একই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুসুম্বা ইউপি চেয়ারম্যান জিহাদ মন্ডল শত শত জনতার সম্মুখে (ছেলে স্বেচ্ছায় ধরা না দেওয়া পর্যন্ত) আমাকে মারতে হুকুম দেওয়া মাত্র ওই দুই মেম্বার ও গ্রাম পুলিশরা আমাকে রাত ভর দফায় দফায় লাঠি পেটা করতে থাকে। এ অবস্থায় আমার ভাতিজা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে আর না মারতে অনুরোধ করলেও তারা শোনেনি।
এ ভাবে রাত ভর ইউনিয়ন কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করার পরদিন শুক্রবার বিকালে অভিযুক্তর মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ফাঁসাতে জয়পুরহাট থানায় নিয়ে আসন। জয়পুরহাট থানা পুলিশ ঘটানটি বুঝতে পেরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাঁচবিবি থানা পুলিশকে পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় গত মধ্য রাতে বৃদ্ধ আব্দুল জলিল বাদী হয়ে মামলা করলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ফরিদুল ও শাহানুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ বৃদ্ধ জলিলকে চিকিৎসার জন্য জয়পুরপুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভতি করিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে কুসুম্বা ইউপি চেয়ারম্যান জিহাদ মন্ডল বৃদ্ধ পেটানোর হুকুম দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল হক জানান, মামলা গ্রহনের পাশাপাশি ইউপি সদস্য ফরিদুল ও শাহানুরকে গ্রেফতার করে আজ শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।