খাগডহরের সাবেক চেয়ারম্যানের আত্নসাৎকৃত অর্থ আদায়ের হদিস জানেনা বর্তমান চেয়ারম্যান
স্টাফ রিপোর্টারঃময়মনসিংহ সদরে খাগডহর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কর্তৃক বিভিন্ন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকার বরাদ্দ আত্নসাৎ করার অভিযোগে বরখাস্ত ঘোষনা করা হলেও আত্নসাৎকৃত অর্থ আদায়ের এখনো কোন ব্যবস্তা নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট মহল। আত্নসাৎকৃত অর্থ আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা তার হদিস জানেনা বর্তমান ইউওি চেয়ারম্যান। ফলে সাধারন মানুষের মাঝে এনিয়ে ব্যপক সমালোচনা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে-ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলাধীন ০৯ নং খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান- এর বিরুদ্ধে (১)মার্চ, ২০২১ খ্রি. তারিখে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর ১%-এর তহবিল হতে ৩ টি ভূয়া প্রকল্প দিয়ে ৫,২৫,০৮৩/- টাকাসহ ইউনিয়ন পরিষদের আসবাবপত্র ক্রয় ও বাথরুম সংস্কার বাবদ ১,৫৫,৩০০/- টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে আত্মসাৎ করেছেন। ভিজিডি চক্রের ২০২১-২২ অর্থ বছরের বরাদ্দকৃত ১৬২ টি কার্ডের মধ্যে তাঁর ক্ষমতাবলে ৮৫ টি কার্ড তাঁর নিজ গ্রামের ০৩ নং ওয়ার্ড মাইজবাড়িতে বরাদ্দ প্রদান, ০৮ টি ওয়ার্ডে ৭৭ টি কার্ড বণ্টনে অনিয়ম করার অভিযোগের সত্যতা মিলে।
খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে হতদরিদ্রের মাঝে ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাউলের কার্ড উক্ত ইউনিয়নের মোট বরাদ্দ ২১২২ টি কার্ডের মধ্যে প্রায় অর্ধেক কার্ড তাঁর নিজ ওয়ার্ডে অন্য কর্মসূচীর ভাতা ভোগী এবং স্বচ্ছল পরিবারের মাঝে বিতরণে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় বলে তদন্ত কমিটি মতামত দেন।
যন্ত্র প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দের বিষয়ে ১৯ (বার) জন সদস্যের নিকট হতে প্রতি জন ২০,০০০ (বিশ) হাজার টাকা করে মোট ২,৪০,০০০/- (দুই লাখ চল্লিশ হাজার) টাকার বিনিময়ে যত্ন প্রকল্পের কার্ড বিতরণে অনিয়ম, এবং প্রতিটি কার্ডের জন্য অসহায় দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাস্ক- এর নামে কার্ড প্রতি ৩০০/- টাকা করে (৩০০ *১০০৮) ৩,০২,৪০০/- টাকা আত্মসাৎ করেন।
ভারাগাই কেন্দ্রিয় মসজিদ সংলগ্ন খেয়াঘাট ইজারা বাবদ ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা আদায় করে আদায়কৃত টাকা ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত একাউন্টে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ০৯ টি ওয়ার্ড হতে আদায়কৃত প্রায় ১০,৩০,০০০/-টাকার উপরে ট্যাক্স-এর টাকা আদায় এবং আদায়কৃত ট্যাক্স-এর টাকা দফায় দফায় আংশিক জমা করলেও কোন প্রকার প্রকল্প অনুমোদন বা রেজুলেশন ছাড়াই হোল্ডিং ট্যাক্স -এর টাকা আত্মসাৎ করেন। শুধু তাই নয় একই অর্থবছরে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ১১২২ জন হতদরিদ্র
উপকারভোগীর কাছ থেকে ২০০/- (দুইশত) টাকা হারে (২০০ *২১২২)-৪,২৪,৪০০/- টাকা হতে ৬০,০০০/- টাকা ইউনিয়ন পরিষদের একাউন্টে জমা করে বাকি টাকা আত্মসাৎ-এর অভিযোগে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের ১১ (এগার) জন সদস্য সংরক্ষিত মহিলা সদস্যগণ কর্তৃক অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে এবং সরেজমিন তদন্তে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ তদন্ত কমিটির কাছে প্রমাণিত হয়েছে।
যেহেতু, উক্ত অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে স্থানীয় সরকার
(ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৯ ধারা অনুযায়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদর, ময়মনসিংহ কর্তৃক বিশেষ সভা আহ্বান করে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট গ্রহণ করা হয় এবং অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে মোট ১১ (এগার) টি ভোট পড়ে যা দুই তৃতীয়াংশের বেশি।
তদন্ত কমিটি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, যেহেতু, ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলাধীন ০৯ নং খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান- এর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় এবং বিশেষ সভায় অনাস্থা প্রস্তাবটি দুই তৃতীয়াংশের বেশি ভোটে গৃহীত হওয়ায় বর্ণিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক জনস্বার্থে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করা সমীচীন হবে না মর্মে বিবেচিত হওয়ায় জেলা প্রশাসক, ময়মনসিংহ এর প্রেরিত অনাস্থা প্রস্তাবটি সরকার কর্তৃক স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৯ (১৩) ধারা অনুযায়ী অনুমোদিত হয়েছে:
সেহেতু, স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯ এর ৩৯ (১৩) ধারার বিধান অনুযায়ী সরকার কর্তৃক জনস্বার্থে অনাস্থা প্রস্তাবটি অনুমোদিত হওয়ায় ৩৯ নং খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান-এর পদটি একই আইনের ৩৫(১)(চ) ধারা অনুযায়ী শূন্য ঘোষনা করা হলো।
খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান-এর পদটি শূন্য ঘোষনা করা হলেও তার আত্নসাৎকৃত অর্থ আদায়ের কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা এখনো স্থানীয় কেহ জানতে পারেনি।