ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ৩:৩১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

এনায়েতপুরে আন্দোলনে আহত ৪৯৮ জনকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেলে বিনামূল্যে চিকিৎসা

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Thursday, September 26, 2024 - 5:19 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 19 বার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : গত ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ছাত্র, জনতা, পুলিশ সহ ৪৯৮ জনকে সুস্থতায় পাশে ছিল খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল। সাধারণ সহ মুমূর্ষ এসব রোগীদের দ্রুত বিনামূল্যে সার্বিক চিকিৎসা প্রদান করে অনেকের জীবন বাঁচিয়েছিল চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য এই হাসপাতালে চিকিৎসা সহায়তা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে তারা।

জানা যায়, গত ৪ আগস্ট রবিবার সকাল ১০টায় খামারগ্রাম ডিগ্রী কলেজ ও খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও ছাত্র জনতার ৫ সহস্রাদিক আন্দোলনকারী স্বৈরাচার হটাও এক দফা দাবিতে এনায়েতপুর এর বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করে। এরপর তারা ১১টার দিকে এনায়েতপুর হাট সহ থানা এলাকায় পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তা ছড়িয়ে পড়ে নানা ভাবে। এতে ছোরা গুলি ও মারধরে আহত হয় অন্তত ৫ শতাধিক মানুষ। মারা যান থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক সহ ১৩ জন পুলিশ। এছাড়া  মাধবপুরের শফি মিয়ার ছেলে কলেজ ছাত্র মোঃ শিহাব হোসেন (১৯),  গোপরেখীর কুদ্দুস আলীর ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র হাফেজ মোঃ সিয়াম হোসেন (২০) এবং খুকনীর ঝাওপাড়ার তাঁত শ্রমিক ইয়াহিয়া আলী (৩৬) গুলিবৃদ্ধ হয়ে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সেদিন বেলা সাড়ে ১১টা হতে পুরো এলাকা রনক্ষেত্র পরিণত হয়। শত শত ছাত্র জনতা গুরুতর আহত অবস্থায় পাঠানো হয় খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। জরুরি রক্তের প্রয়োজন দেখা দিলে আন্দোলনকারী অন্যান্য ছাত্র জনতা রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের পর তা সংগ্রহ করে রোগীকে দেয়া হয়। এরপর আরো আসতে থাকেন অগনিত রোগীরা। সেখানে রোগী এবং তাদের স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। তাদের শান্ত করে হাসপাতালের দুই শতাধিক চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা প্রাণান্তর জরুরী চিকিৎসা সেবা দিতে থাকে।

জরুরী এসব রোগীদের বাঁচাতে যার যে রকম চিকিৎসা প্রয়োজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সব রকম সহায়তা প্রদান করা হয়। যেকোনো মূল্যে রোগীদের বাঁচাতে হবে সেই প্রত্যয় নিয়ে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা সেবায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ২০০৪ সালে মানবিক কর্মবীর ডাঃ এম এম আমজাদ হোসেনের উদ্যোগে দেশের বৃহৎ ৬শ বেডের বিশ্বমানের চিকিৎসার এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর একসাথে অগনিত এত রোগীর একসাথে চিকিৎসা নিয়ে এমন অবস্থায় কখনো পড়েনি। এরমধ্যে কয়েক ঘন্টা চিকিৎসা শেষ করে অনেকেই বাড়ি ফিরে যান স্বজনের সাথে। আবার অনেককেই ভর্তি রাখা হয় হাসপাতালে। এরমধ্যে পুলিশও ছিল ১৮ জন। তাদের কয়েকদিন হাসপাতালে সুচিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়। এজন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ রোগীদের জন্য ব্যয় পরিশোধের নিয়ম থাকলেও সকলকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যা মহানুভতার বিরল দৃষ্টান্ত বলে দাবি করেছে চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া রোগীরা।

চিকিৎসা নেয়া খুকনী ঝাউপাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম, ইয়ামিন হোসেন, ব্রাহ্মণগ্রামের বরাদ আলী ও আলামিন হোসেন জানান, আমরা আহত হলে সাথে সাথে আমাদের সহযোগীরা খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বিনামূল্যে সুচিকিৎসার পর আমরা বাড়ি ফিরে আসি। আমাদের চারপাশে অনেক রোগী ছিল। যাদের সকলেই দরিদ্র মানুষ। সবাইকেই বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে তারা। এজন্য তাদের মানবতাবোধকে আমরা সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

সেদিন জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়া হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মাসুদার রহমান ও সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ শিউলি আক্তার জানান, সারা দেশ থেকে আমাদের হাসপাতালে নানান রোগের চিকিৎসায় রোগীরা আসেন। তবে তা স্বাভাবিক নিয়মে। অথচ গত ৪ আগস্ট সেদিন ছিল একেবারে ভিন্ন। সংঘর্ষে আহত শত শত রোগী আসতে থাকে নানা ভাবে। আমাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়, তাদের সর্বোত্তম চিকিৎসা সেবা দিতে। প্রথম অবস্থায় আমরা ৪০-৫০ জন নার্স চিকিৎসক যখন চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। তখন আরো দেড় শতাধিক চিকিৎসক নার্স কর্মচারী এ কাজে যোগ দেয়। চরম পরিশ্রম হলেও সবার প্রচেষ্টায় আমরা সেদিন অনেকের জীবন বাঁচাতে পেরেছি, এটাই আমাদের সার্থকতা।

এদিকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের ব্যবস্থাপক কৌশিক আহমেদ জানিয়েছেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেদিন অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রেখে সবাই ছুটে গিয়েছিলাম আহত রোগীদের বাঁচাতে। সবার সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় আমরা ৪৯৮ জন রোগীকে সুচিকিৎসা দিয়েছি। এজন্য বিপুল পরিমাণ টাকা চিকিৎসায় ব্যয় হলেও কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কারো কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়নি। বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে চিকিৎসা।

এ বিষয়টি নিয়ে এলাকা জুড়ে সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ব্যাপারে বিএনপি’র রাজশাহী বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, স্বৈরাচারকে উৎখাত করতে এ আন্দোলন সফলে পুরো দেশবাসীর অবদান রয়েছে। সেরুপ মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করা গুরুতর আহত এনায়েতপুরের অসংখ্য রোগীদের বাঁচাতে বিনামূল্যে সর্বাত্মক চিকিৎসা দেয়ায় খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের মহানুভবতাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। তাদের সেদিনের সহযোগিতার ঋণ শোধ হবার নয়।