ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ১০:৪৫ অপরাহ্ন

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে স্কুলগুলোতে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছেন শিক্ষা অফিসার

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Tuesday, October 1, 2024 - 10:19 am
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 22 বার

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহ সংবাদদাতা: ময়মনসিংহের সদরে করোনাকালে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করা প্রাথমিকের অনেক শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরেনি। দারিদ্রতা আর বাল্যবিবাহের কারণে স্কুলে উপস্থিত হতে পারেনি প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে নানা পদক্ষেপ নিয়ে তাতে সফলতা হিসাবে স্কুল গুলোতে নবজাগরণ তৈরী করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন। আর এই কাজে তাকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে উৎসাহীত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ স্থানীয় শিক্ষা বিভাগীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে উপজেলার চরাঞ্চল হিসাবে পরিচিত অষ্টধার, কুষ্টিয়া,পরাণগঞ্জ,বোররচর, সিরতা,ঈশ্বরদিয়া ও চরনিলক্ষিয়া ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অনুপস্থিতির হার ছিলো সর্বাধিক।তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন এর বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে ঝড়ে পড়া অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীরা স্কুলে নিয়মিত হয়েছে। এতে স্কুলগুলোতে যেন নবজাগরণ তৈরী হয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় আসেন সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন । এলাকার ছেলে মেয়েদের স্কুলে আনতে বাড়ি-বাড়ি যাওয়া, বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, বিনামূল্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই বিতরণ,স্কুল ব্যাগ,চকলেট,স্কুল ড্রেস,খেলাধুলা সরঞ্জাম সহ তাদের নানা উপহার দিতেন তিনি।
এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরতে আগ্রহী হয় শিক্ষার্থীরা অপরদিকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী হয়ে উঠে অভিভাবকরা। আর শিক্ষকরা জানালেন, শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন সহ সংশ্লিষ্টদের চেষ্টায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। নতুন পরিবেশে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে উৎফুল­ শিক্ষার্থীরা। উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানালেন, দায়িত্ববোধ থেকেই ঝরে পড়া শিক্ষার্থী কমানোর উদ্যোগ নিয়ে অনেকটাই সফল হয়েছেন তিনি।

উপজেলার অষ্টধার ইউনিয়ন একটি উন্নয়ন বঞ্চিত ও অবহেলিত এলাকা। যেখানে নেই কোন ভাল রাস্তা ঘাট,স্কুল প্রতিষ্ঠান। তবে এই ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী অবহেলিত মশিউর নগর তথা ঝাপারকান্দা গ্রাম। এই গ্রামে নেই কোন রাস্তা,নেই স্কুল প্রতিষ্ঠান, অপরদিকে স্বাস্থ্য ঝুকিতেও রয়েছে গ্রামের কোমলমতি শিশুরা। তার উপর আবার নদী ভাঙ্গন। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের শতাদিক পরিবার। এ যেন এদের দেখার কেউ নাই। গত ১৬সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালের শনিবার এই এলাকায় গিয়ে তাদের দুঃখ কষ্টের কথা শুনেন সদর উপজেলার মানবিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসার।

মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও স্থানীয় শিক্ষা বঞ্চিত ও ঝড়ে পড়া শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা । প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই ছুটে যান প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। ইতোমধ্যে তিনি উপজেলার প্রায় ২০-৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে উৎসাহিত করতে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন স্কুল ড্রেস,টিফিন বক্স,ব্যাগ,চকলেট,শিক্ষা উপকরণ । তার হাতে দেওয়া পোষাক ও শিক্ষা উপকরণ পেয়ে শিক্ষার্থীরা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন।

তিনি অবহেলিত ঝাপারকান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে খোজ নেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির। যেখানে নেই কোন ভবন,ক্লাশ রুম,যেটুকু আছে টিন শেড ঘর,প্রচন্ড রোধের তাপে শিশুরা হয়ে যায় অসুস্থ।এর ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা পরিদর্শন করে দ্রুত ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ নেন। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস, খাতা ও পেন্সিল বিতরণ, টুল বেঞ্চ প্রদান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান, খেলাধূলার ব্যবস্থাকরণ, শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করণে মনিটরিং,আইসিটি সামগ্রী বিতরণ, প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন নিব্ন্ধ প্রকাশ, মিড ডে মিল চালু, মাসিক সমন্বয় সভায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে অষ্টধারের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিন্তে অবদান রেখেছেন মনিকা পারভীন।

সুত্র মতে জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়মুখী হয়েছে। এটা ৯৫ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীনের। ময়মনসিংহ সদরের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে তাদের শ্রেণীকক্ষে ফেরানোর উদ্যোগে সফলতা এসেছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন এর প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে স্কুলে-স্কুলে শিশুদের সত্যিকারের ‘আনন্দ’ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ অভিভাবকগণ।