নাটোরের মহারানী অর্ধেক বঙ্গেশ্বরী রানী ভবানী।
গ্রন্থঃ বরেন্দ্রভূমির বরেণ্যরা। পর্বঃ ২৪
লেখকঃ আব্দুর রাজজাক রাজু (সহকারী অধ্যাপক)।
ভুমিকাঃ
সমাজের মানুষের মঙ্গল চিন্তার মনোভাব সাধারণ জনগনের মাঝে নাটোরের ঐতিহ্যবাহী রাজ পরিবারের পুত্রবধূ রানী ভবানীকে অসাধারণ ও অসম্ভব জনপ্রিয় করে তোলে। নিজর চৌকস দক্ষতায় স্বীয় রাজ্যকে অনেক প্রসার ও জনগণের সেবায় তার দক্ষতা অনুকরণীয়। রানী ভবানী বৃহৎ রাজত্বের অধিকারী হওয়াই তাকে অর্ধেক ভঙ্গেশ্বরী বলা হতো।
পিত্র ভূমির পরিচয়ঃ
পিতা আত্মারাম চৌধুরী মাতা তোমা দেবী চৌধুরানী জন্মঃ১৭১৬ সালে বগুড়া জেলার শেষ পশ্চিম প্রান্তে আদমদিঘী থানা।আদমদিঘী থানার শেষ পশ্চিম প্রান্তে সাতিয়ান গ্রামে রাণী ভবানী জন্ম গ্রহন করেন। গ্রামটি নওগাঁ জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ।
মুর্শিদাবাদের নবাব আলীবর্দী খাঁনের আস্থাভাজন নাটোরের রানী ভবানীর স্বামী রাজা রামকান্ত। তার তিন সন্তান।দুই ছেলে এক মেয়ে।স্বামী ও ছেলেরা অকাল প্রয়াত। এক মেয়ে তারা দেবী।স্বামীর মৃত্যুর পর রানী ভবানী নিজে রাজ্যভার গ্রহণ করেন।কন্যা তারা দেবী রূপে গুণে শিক্ষায় ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন।রানীর নিজের দুই সন্তান অকাল প্রয়াত হওয়ায় তিনি রামকৃষ্ণ নামের একটি ছেলেকে দত্তক নেন।
দৃষ্টিনন্দন বৃহৎ রাজবাড়ীঃ
রানী ভাবনীর নাটোর রাজবাড়ীটি মোট আয়তন ১২০ একর। রাজবাড়ীতে শুধু ভবনই রয়েছে আটটি দুইটি বড় ও ছয়টি মাঝারি এবং ছোট ধরনের। দুইটি বড় গভীর পুকুর এবং পাঁচটি ছোট পুকুর। পুকুর গুলির নামও সুন্দর জল টঙ্গী, তারকেশ্বর, গোপীনাথ, আনন্দ ও জল মহাল, নামে তিনি নিজে জলাশয় গুলির নাম করণ করেন।
রাজবাড়ীর অভ্যন্তরী মন্দির।
মহারানী ভবানী রাজবাড়ীতে তিনটি মন্দির নির্মাণ ও পুরাতন মন্দিরগুলি সংস্কার করেন। উল্লেখযোগ্য মন্দির গুলির নাম ছিল- শ্যামা সুন্দরী মন্দির, আনন্দময়ী মন্দির, ও কালিবাড়ি মন্দির
পালিত পুত্রের দুই পুত্রকে রানী রাজবাড়ীটি ভাগ করে দেন।ছোট তরফের উল্টোদিকে বড়তরফ।বড় তরফের সামনে বিশাল পুকুর ও পরিখার সামান্য দূরে রানী মহলটিতে রানী ভবানী থাকাকালীন এবং পরবর্তীতে নাটোর আসলে বসবাস করতেন।
দত্তক পুত্রঃ
দত্তক নেওয়া ছেলেটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে রানী ভবানীর স্বামী কিছুদিনের মধ্যেই অকালপ্রয়াত হওয়ায় দত্তপুত্র রামকৃষ্ণই রাজা হন।রাজা রামকৃষ্ণের দুই সন্তান বিশ্বনাথ রায় ও শিবনাথ রায়।রামকৃষ্ণের দুই তরফ নাটোরের রাজবাড়ীতে ছোট তরফের অংশ এবং বড় তরকে অংশ হিসেবে ভাগাভাগি করে থাকতেন।
কাশিতে জলাশয় নির্মাণঃ
১৭৫৩ সালে পূর্ণধাম কাশি বা বেনারসে রানী ভবানী চারটি জলাশয় খনন করেন।(১)ভুবনেশ্বর জলাশয়।(২) দুর্গা বাড়ি জলাশয়।(৩) দুর্গা কুন্ড জলাশয়।(৪)কুরু ক্ষেত্রতলা জলাশয় নামক চারটি জলাশয় স্থাপন করেন।
মন্দির সংস্কারঃ
রানী ভবানী তারাপীঠ মন্দির সংস্কার করেন এ ছাড়া তিনি নওগাঁ জেলার মান্দা থানার রঘুনাথ মন্দির সংস্কার ও মূল ভবনটি নির্মাণ করেন।বগুড়ার শেরপুরে ভবানীপুর মন্দির টি সংস্কার ও এর উন্নয়ন করেন।
মুর্শিদাবাদে শিব মন্দির স্থাপনঃ
মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগিরতি নদীর তীরে বড়নগরে রানী ভবানীর একশতটি শিব মন্দির নির্মাণ করেন
রানী ভবানী রোডঃ
রানী ভবানী হাওড়া থেকে কাশি পর্যন্ত একটি বৃহৎ রাস্তা নির্মাণ করে ছিলেন। যা রানী ভবানী রোড নামে পরিচিত ছিল।বর্তমানে এটি বেনারস রোড নামে খ্যাত এবং বোম্বে গ্রেটার রোডের অংশ।
রেললাইন স্থাপনের সহযোগিতাঃ
উত্তরবঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনে তার সহযোগিতা উল্লেখ করার মতো
মহারানী উপাধিঃ
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, পুকুর ও দীঘি খনন করে প্রজাদের পানীয় জলের ব্যবস্থা করণ, নতুন নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, দরিদ্র ও পীড়িত জনগণের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ ও সর্ব ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার স্বীকৃতি স্বরূপ প্রজারা তাকে মহারানীর নামে আখ্যায়িত করেন।
জমিদারি হরণঃ
লর্ড ওয়ারেন হেন্টিংস (১৭৭২-১৭৮৫) বেঙ্গল প্রেসিডে ন্সির গভর্নর থাকাকালে তার নির্দেশে জোর পূর্বক রাণীর জমিদারি কেড়ে নেওয়া হয়।
মৃত্যুঃ
রানী ভবানী দত্তপুত্র রামকৃষ্ণের হাতে রাজ্যভার দিয়ে মুর্শিদাবাদ এর বড়নগরে কন্যা তারা দেবীসহ বসবাস করতেন।প্রজাদের ভালোবাসায় ধন্য রানী ভবানী ১৮০২ সালে ৫ সেপ্টেম্বর ৮৬ বছর বয়সে নাটোরে পরলোক গমন করেন।