আপত্তির মুখে রাবির সেই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের (আইবিএসসি) সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বোর্ড বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উপাচার্যের বাসভবনে বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের সভায় সদস্যদের আপত্তির মুখে এই সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোর্ডে উপস্থিত থাকা একাধিক অধ্যাপক।
গত মঙ্গলবার শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল প্রশাসন। এই নিয়ে সোমবার প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘যোগ্য হয়েও প্রবেশপত্র পাননি ৫ প্রার্থী’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষার পর অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫ জন নয়, ২টি পদের ওই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রবেশপত্র পাননি ১৩ প্রার্থী।
নিয়োগ পরীক্ষার পর অনুসন্ধানে জানা যায়, ২টি পদের ওই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রবেশপত্র পাননি ১৩ প্রার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে তাঁর বাসভবনে আজ ওই বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে বেরিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অধ্যাপক বলেন, অনেক প্রার্থী ছিলেন। তাঁদের নানা অজুহাতে বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু বিশেষ প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাঁদের প্রবেশপত্র দেওয়া হয়েছে। পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া অসংখ্য ত্রুটিতে ভরা ও পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ, জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এই নিয়োগ প্রক্রিয়াসংক্রান্ত নানা ত্রুটি ও অনিয়ম তুলে ধরেন। পরে বোর্ড সভার অন্য সদস্যরাও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন। এ পরিস্থিতিতে বোর্ডের সভাপতি উপাচার্য নিয়োগটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি কীভাবে এই সমস্যা নিরসন করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করা যায়, সে বিষয়ে সুপারিশ করেন।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের তিনটি পুরোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বর্তমান প্রশাসন সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক—এই দুই পদে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেয় মঙ্গলবার। সহকারী অধ্যাপকের একটি পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছিল মোট সাতটি। এর মধ্যে সাক্ষাৎকার বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন মাত্র দুজন। এ কারণে ওই পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। অপর দিকে সহযোগী অধ্যাপকের দুটি পদের বিপরীতে আবেদন করেন মোট ১৭ জন। এর মধ্যে নানা অজুহাতে ১২ জনকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আবেদনকারীরা। তবে সাক্ষাৎকার বোর্ডে ওই দিন চারজন উপস্থিত থাকায় সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছিল প্রশাসন। ইনস্টিটিউটগুলোর নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর প্রথমে একটি বোর্ড অব গভর্ন্যান্স সভা হয়ে পরে সিন্ডিকেটে গিয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়। কিন্তু এই বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগপ্রক্রিয়াটিকে অবৈধ দাবি করেন। পরে সদস্যদের আপত্তির মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ করার ঘোষণা দেন।
অনেকগুলো সুপারিশ এসেছে। সেগুলোর ব্যাপারে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হবে।
মো. ফিরোজ আলম, পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (আইবিএসসি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আবেদনকারীদের একটি অংশ অভিযোগ করে আসছিল, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের পুরোনো বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক মিলিয়ে চার পদে মোট ২৪ জন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অন্যায়ভাবে তাঁদের প্রবেশপত্র দেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের অনেকের এশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি ছিল। অনেকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যোগ্যতাও ছিল। কর্তৃপক্ষ প্রবেশপত্র না দেওয়ার কারণ হিসেবে এশিয়ার ডিগ্রি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তাঁদের মৌখিকভাবে জানিয়েছিল। ওই আবেদনকারীরা অভিযোগ করেন, এক প্রার্থী একটি কলেজ থেকে দুই বছরের ভুয়া অভিজ্ঞতার কাগজপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু আদৌ তিনি সেই কলেজের শিক্ষক ছিলেন না বলে তাঁরা প্রমাণ পেয়েছেন। তবু ওই প্রার্থীকে প্রবেশপত্র দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. ফিরোজ আলম বলেন, অনেকগুলো সুপারিশ এসেছে। সেগুলোর ব্যাপারে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হবে।