ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ১১:২৫ অপরাহ্ন

প্রবাসী বান্ধব মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বাংলাদেশি নারী রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Sunday, December 13, 2020 - 3:16 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 88 বার

মাহবুব আব্দুল্লাহ দক্ষিণ করিয়া প্রতিনিধিঃ : অদৃশ্য অথচ পরম পরাক্রমশালী এক অনুজীব আমাদের নতুন করে ভাবিয়েছিল, দেখিয়েছিল মুখ থুবড়ে পড়া মানবতা। সেই খণ্ডিত, ক্ষতবিক্ষত মানবতায় আমরা দেখেছি প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি সম্পর্কে, প্রতিটি কর্তব্যকর্মে আত্মগোপন বা যুগপৎ পলায়নপর ভূমিকা।

সবাই একা একা বাঁচতে চায়। সে এক উদগ্র চেষ্টা, মানবিক খরার নিদারুণ দৃষ্টান্ত। সেই দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে হাজির করলো করোনা-আক্রান্ত জননী, গর্ভধারিণীকে জঙ্গলে ফেলে রাখা, হাসপাতাল গেইটে মুমূর্ষু জন্মদাতাকে ছুঁড়ে ফেলার বিবেক কাঁপানো ঘটনাবলী কিংবা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে চিকিৎসাবিহীন মৃত্যুর মিছিল।

সেই মিছিল থামাতে, মানবিকতা উসকে দিতে, প্রতিটি প্রাণে সাহসের ফল্গুধারা ছড়িয়ে দিতে জর্ডানে একজন মানবিক রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান দাঁড়িয়েছিল প্রবাসীদের পাশে সরকারের মানবিক খাদ্য সহায়তা নিয়ে।নিজে উপস্থিত থেকে প্রতিটি এলাকায় গিয়ে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তিনি।শুধু করোনাকালে নয়, জনবান্ধব দূতাবাস হিসেবে পরিচিত গড়া এবং অর্থনৈতিক কূটনীতিকে জোরদার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ধরে গত ১০ মাস এইভাবেই কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বাংলাদেশি নারী রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান। বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রবাসীদের জন্য ‘খোলা জানালা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় ব্রত।
করোনাকালে যেভাবে প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিসন্দেহে প্রশংসার একক দাবীদার। দূতাবাসকে জনবান্ধব করা তিনি ইবাদতের অংশ মনে করেন প্রবাসীদের সকল সহযোগিতা ও সহায়তা নিশ্চিত করা আমার লক্ষ্য।
‘কনস্যুলার স্টাফরা কোনো দর্শনার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক বা অসহযোগিতামূলক আচরণ করছে কি না তা পর্যবেক্ষণে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে দূতাবাসে ক্যামেরা স্থাপন করেছেন।
দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে জোরদার করতে তিনি বদ্ধ পরিকর। আমাদের পণ্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির মাধ্যমে জর্ডানের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নীত করা হবে আমার অন্যতম প্রধান কাজ।’

মুসিলম রাষ্ট্র জর্ডানেও বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সেখানেও সবার অভ্যর্থনা পাচ্ছেন বাংলাদেশের ১৫তম বিসিএসের মাধ্যমে ফরেন ক্যাডারের ক্যারিয়ার শুরু করা এই কর্মকর্তা।

‘বাংলাদেশ একজন নারী রাষ্ট্রদূত পাঠিয়েছে, এতে জর্ডান সরকার খুব খুশি। কারণ, তারা আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে জানেন। রোহিঙ্গাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বেশ সম্মানের চোখে দেখে জর্ডান সরকার’-যোগ করেন নাহিদা সোবহান।

জর্ডানে দেড় লাখের মতো বাংলাদেশি রয়েছে। এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ নারী ধরতে পারেন।এদের নিরাপত্তার জন্য তিনি কাজ করেই চলেছেন।

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জর্ডানের শ্রম আইন খুব শক্ত। যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে তা সমাধানে এদের শ্রম মন্ত্রণালয় সবধরনের সহায়তা করে। আর তারা যখন কোনো ক্ষেত্রে নেগোসিয়েশন করে তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রায় শ্রমিকদের পক্ষেই যায় বলে জানতে পেরেছি।’

মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরবে নারীকর্মী নির্যাতিত নিয়মিত খবর এলেও জর্ডানে নারীকর্মী নির্যাতন তুলনামূলক কম কম বলে মনে করেন জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের এই রাষ্ট্রদূত।

জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের এই রাষ্ট্রদূত মনে করেন, কর্মীরা দক্ষ হয়ে বিদেশে এলে নির্যাতনের মাত্রা কমে আসবে।

নাহিদা সোবহান বলেন, ‘সংখ্যার চেয়ে কর্মীদের কোয়ালিটিতে নজর দিতে হবে। দক্ষ শ্রমিক বেশি পাঠাতে পারলে আমরা লাভবান হবো বেশ। দেশের অর্থনীতিতে এসব দক্ষ শ্রমিকরা অবদান রাখতে পারবে। পাশাপাশি বাংলাদেশি কর্মীদের সুনামও বাড়বে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৩১ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নাহিদা সোবহানকে আম্মান দূতাবাসে নিয়োগের কথা জানানোর পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ কর্মস্থলে যোগ দেন নাহিদা।

রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ছিলেন। নাহিদা সোবহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রোম, কলকাতা, জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। নাহিদা নেদারল্যান্ডের হেগ একাডেমি অব ইন্টারন্যাশনাল ল’ থেকে পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।