যুক্তরাষ্ট্র কেন আওয়ামীলী বিমূখ!
মীর দিনার হোসেন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র কখনও চাইনি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হোক, কিন্তু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র বিশ্ব মানচিত্রে ঠিকই জায়গা করে নেয় এবং সময়ের ব্যবধানে তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতিও দেয়।
পরবর্তীতে জল কম ঘোলা হয়নি, হেনরি কিসিন্জার এর তলা বিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশের ঝুড়ি এখন উপচে পড়েছে।সকল দেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সংঙ্গা এক রকম নই, এর নিকট নজির পাকিস্তান। আমরা যদি নিকট পাকিস্তানের রাজনৈতিক পটভূমির দিকে তাকাই সেখানে ইমরান খানের উপর সামরিক হস্তক্ষেপ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোন মাথাব্যাথা নাই। কিন্তু এমনটি কেন? যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ যিনি বা যে রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করতে সক্ষম অনুমিতভাবে তাকেই সাপোর্ট করবে, গণতন্ত্র এখানে মূখ্য বিষয় না।
ওয়ান ইলেভেন এর সময় যুক্তরাষ্ট্র ড. মুহাম্মদ ইউনূস কে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিল, যার প্রেক্ষাপটে আমরা দেখেছি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল অথচ মুহম্মদ ইউনূস শান্তিতে নোবেল নমিশেনে অনেক তলানিতে ছিলেন, সেখান থেকে অবিশ্বাস্যভাবে তাকে নোবেল দেওয়া হয়। যা বিশ্বে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল।
হিলারি ক্লিনটনের সাথে মুহম্মদ ইউনূস সম্পর্ক সম্পর্কে আমরা সকলেই অবহিত, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইতিপূর্বে পদ্মা সেতু কেন্দ্রীক রাজনীতি কিন্তু আমরা দেখেছি যেখানে ও যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে।
জামায়াত এর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সখ্যতার কারণ কি?
শেখ হাসিনা সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া পাওয়ার ব্যাপক পার্থক্য থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে, তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ কেন্দ্রিক বর্তমান চিন্তা ভাবনায় জামায়াত অন্যতম তুরুপের তাস। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কে জঙ্গি সেটা মূখ্য বিষয় নয় কে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে এটাই মূখ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বর্তমান সরকারের দূরত্বের পেছনে কোন নিয়ামক গুলো কাজ করছে:
প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল বাংলাদেশে অস্ত্র রফতানি করতে সেটা খুব একটা এগোয়নি। আমরা জানি যুক্তরাষ্ট্র যখন তার স্পর্শকাতর প্রযুক্তিগুলো হস্তান্তর করে সেখানে শর্ত থাকে, তারমধ্যে অন্যতম আকসা ও জিসোমিয়া । এই চুক্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্যনীয় যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যুদ্ধের সময় ঐ দেশগুলিকে তাদের ভূমি ব্যবহার করতে দিতে হবে। যা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। আবার এ সকল অস্ত্র কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন আর কাদের বিরুদ্ধে না তার এক গুচ্ছ ফরমায়েস তো আছেই।
দ্বিতীয়ত , চীনকে বঙ্গপোসাগরে কাউন্টার করতে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের জন্য একটা চাপ সৃষ্টি করতে দেখেছি, সেখানেও বর্তমান সরকারকে রাজি করাতে পারে নাই, যার কারণে যারপরনাই নাখোশ।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশ কিন্তু চীনের সাথে আমদানি-রফতানি ইউয়ানে করার ব্যাপারে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। চীনা এক্সিম ব্যাংক এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন খাতে দেওয়া তাদের রাষ্ট্রায়ত্ব ঋণগুলো ইউয়ানে দিবে যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের বিকল্প ইউয়ানের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিকর।
চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ভারতের জন্য চীনা পরিকল্পনা ও অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন সুখকর নয়। এ বিষয়টি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্য যথেষ্ট মাথা ব্যাথার কারণ।
পঞ্চমত, বঙ্গপোসাগরে চীনের কারিগরী সহায়তায় বাংলাদেশের নিজস্ব সাবমেরিন বেজ এমনকি অদূর ভবিষ্যতে চীনা এটাক (কিলোক্লাস) সাবমেরিন বাংলাদেশ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়না, যা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্পষ্ট মাথাব্যাথা।
এর বাইরে রোহিঙ্গা সমস্যা তো আছেই, যেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখন বিশ্বাস করে রোহিঙ্গা সমস্যা জাতিসংঘ, পশ্চিমা বিশ্ব ইচ্ছা করে জিইয়ে রাখছে। যেটা বর্তমান সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও এর ইইউ মিত্রদের দুরত্ব স্পষ্ট হচ্ছে।
আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ খুশি করতে পারছেনা বলেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ বিমুখ।