ঢাকা | ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ - ৯:২২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

নওগাঁ মুক্তদিবস আজ

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Friday, December 18, 2020 - 11:34 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 136 বার

মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ প্রতিনিধি: মুক্তিযোদ্ধারা ভেবেছিলেন বিনা বাধায় নওগাঁয় প্রবেশ করবেন।কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের আনুষ্ঠানিক বিজয়ের পরও পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়লেন তাঁরা।

বিজয়ের পরদিনও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় নওগাঁয়।মুক্তিসেনাদের সঙ্গে এসে যোগ দেয় মিত্রবাহিনী।অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রায় দুই হাজার পাকিস্তানি সেনা।নওগাঁর বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করেছেন এ বি এম রফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণের পর মুক্তিবাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরী নওগাঁ সদরের গড়ের বাড়িতে গ্রুপ কমান্ডারদের নিয়ে বৈঠক করেন।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরের দিন সকাল সাতটায় গড়ের বাড়ি থেকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন।
দলটি শহরের কাছাকাছি জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি আসতেই পাকিস্তানি সেনারা মর্টার শেল ছোড়া শুরু করে।

শহরের ভেতরে যতই ঢুকছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা, ততই বাড়ছিল শেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা গুলি ছোড়েন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। মাঝে যমুনা নদী। পরের দিন মিত্রবাহিনী যোগ দিলে পাকিস্তানিদের পতন ত্বরান্বিত হয়।

পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের সেই দৃশ্য আজও রফিকুল ইসলামের চোখে ভাসে। ‘আমরা যখন লিটন ব্রিজ দিয়ে শহরের ভেতর প্রবেশ করছিলাম, তখন দেখি পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্র মাটিতে রেখে রাস্তার দুই ধারে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।’ বলে চলেন রফিকুল ইসলাম, সকাল ১০টার দিকে শহরের কেডি স্কুল মাঠে পাকিস্তানি মেজর সাঈদ তাঁর অধীনে ১ হাজার ৯০০ সেনা নিয়ে মিত্রবাহিনীর মেজর পিবি রাওয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। নওগাঁ কোর্ট থেকে কেডি স্কুল পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে মাটিতে অস্ত্র রেখে আত্মসমর্পণ করেন তাঁরা। পরে কেডি স্কুল, ডিগ্রি কলেজ ও হাসপাতাল মাঠে পাকিস্তানি বাহিনী মেজর চন্দ্রশেখরের কাছে ভারী অস্ত্র সমর্পণ করে। এই আনুষ্ঠানিকতায় ৭ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন গিয়াস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

একাত্তরের নয় মাস নওগাঁ সদরের বিল অঞ্চল, রানীনগর ও আত্রাইয়ে যুদ্ধ করেছেন হারুন আল রশিদ। এখন তিনি নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের কমান্ডার। সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। পরদিন বগুড়া থেকে অগ্রসরমাণ মিত্রবাহিনীর মেজর চন্দ্রশেখর ও বালুরঘাট থেকে নওগাঁ অভিমুখে অগ্রসরমাণ মেজর পিবি রাওয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিসেনা নওগাঁয় প্রবেশ করে।

আত্মসমর্পণের পর অনেক পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে কথা হয়েছে হারুন আল রশিদের। পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায়নি। নিজেদের নয় মাসের বর্বরতার কথা মাথায় রেখে তাদের মনে ভয় ছিল, হাতের কাছে পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে। অবশ্য নয় মাসের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ উঠেনি।