ঢাকা | ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ - ৮:২৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

ঐতিহাসিক বারিউড়া কবরস্থান

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Wednesday, December 23, 2020 - 5:40 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 132 বার

ফয়সাল আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ
পরিত্যক্ত ভূমি বা জায়গাকেই আমরা বলি জাঙ্গাল।সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া মোড় থেকে বারিউড়া হয়ে শাহবাজপুর পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত সরাইল দেওয়ানদের যাতায়াতের পরিত্যক্ত পুরাতন রাস্তাটিই হচ্ছে জাঙ্গাল।

যা মোঘল আমল থেকে কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।এ কবরস্থান বর্তমানে দুটি বৃহৎ অংশে বিদ্যমান। একটি সরাইল উপজেলার ইসলামাবাদ হয়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের উত্তর পাশ ঘেঁষে বারিউড়া বাজার পর্যন্ত এবং অন্যটি একই বরাবর বারিউড়া হাতির পুল হয়ে বারিউড়া গ্রামের শেষ অবধি অর্থাৎ শাহবাজপুর পর্যন্ত।

কথিত আছে, দেওয়ান শাহবাজ আলী সরাইলে দেওয়ানী লাভের পর হরষপুরের জমিদার দেওয়ান নুর মোহাম্মদের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সর্ম্পক গড়ে তুলেন। ফলে উভয় পরিবারের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সরাইল থেকে হরষপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০ মাইল দীর্ঘ একটি রাস্তা নির্মান করা হয় বলে জানা যায়। রাস্তাটি ১৬৫০ খ্রিঃ দিকে নির্মিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।এছাড়া ঐতিহাসিকগন এর মতে দেওয়ান শাহবাজআলী বর্তমানে শাহবাজপুরে তাঁর খাজনা আদায়ের কাচারী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিধায় তিনি সরাইল থেকে উক্ত রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করতেন।

পাশে নতুন একটি খাল কেটে এবং ঐখালের মাটি দিয়ে রাস্তাটি নির্মান করে।তখন খালটি ‘কাটা খাল’ নামেই পরিচিত ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তিতে দেওয়ান জাফর পূনঃখনন করিলে তার নামানুসারে খালটি ‘জাফরখাল’ নামকরন পায়।জাফর খাল দিয়ে তিতাস নদীর সাথে মেঘনা ও লাহুর নদীর সাথে সংযোগ করা হয়।অযত্ন অবহেলা এবং প্রাকৃতিক কারনে লাহুর নদীটি বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়।

রাস্তাটি নির্মিত হওয়ার পর পরই উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে রাস্তার অনেক জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দেয়।বারিউড়া গ্রামের ভাঙ্গা স্থানে যাতায়াতের সুবিধার্তে দেওয়ানরা চুন-সুরকি দিয়ে কারুকার্য খচিত একটি পুল নির্মান করেন, বর্তমানে যাহা হাতিরপুল নামে পরিচিত। হাতি বিশ্রামের একটি ছাউনীও এখানে নির্মাণ করেছিলেন।

লোক মূখে জানা যায়, সরাইল-হরষপুর জাঙ্গাল দিয়ে মানুষের চলাচল বা যাতায়াত বেশী দিন ছিল না। স্বল্প সময়েই রাস্তা দিয়ে লোক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হাতির পুলের নীচ দিয়ে ইংরেজ আমলেও লোক চলাচল করত বলে লোকমূখে জানা যায়।কারন তখন পানি পথে চলাচল সুবিধে ছিল।সবাই ‘গয়না’(যাত্রী পরিবহন যোগ্য নৌকা)দিয়েই নৌপথে চলাচল করত।

রাস্তাটি ব্যবহার বা সংস্কার না করার কারনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মোঘল আমলে নির্মিত সরাইল থেকে হরষপুর পর্যন্ত পরিত্যক্ত রাস্তার অধিকাংশ জায়গা নষ্ট হয়ে যায়।শুধুমাত্র রাস্তাটি কুট্টা পাড়ার মোড় থেকে বারিউড়া হয়ে শাহবাজপুর পর্যন্ত টিকে থাকে।মুঘল আমলেরই কোন এক সময় থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন পরিত্যক্ত রাস্তার টিকে থাকা অংশটুকু কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।

প্রায় আড়াইশত বছর পূর্বে অত্র এলাকার ৬/৭টি গ্রামের মানুষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রত্যেক গ্রামের মানুষের জন্য কবরস্থান আলাদা এবং নিদিষ্ট করে দেওয়া হয়।এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক তখন থেকে সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বাড়িউড়া, ইসলামাবাদ ও বছিউড়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মৈন্দ গ্রামসহ পার্শ্ববর্তি গ্রামের বাসিন্দারা যার যার নিদিষ্ট স্থানে মরদেহ সমাহিত করে আসছে।

এই দু’টি কবরস্থান ছাড়া সাধারণ মানুষের বিকল্প আর কোনো বড় কবরস্থান অত্র এলাকায় আর নেই।এ দুটি কবরস্থানের পাশ দিয়েই চলে গেছে বর্তমান ঢাকা সিলেট ও চট্টগ্রাম সিলেট মহাসড়ক।পাকিস্থান আমলে একটি খাল ভরাট করে ঢাকা সিলেট বা চট্টগ্রাম সিলেট মহাসড়ক নির্মাণ করা হয় কবরস্থান ও হাতিরপুল রক্ষা করে।

ভবিষ্যতে রাস্তার বৃদ্ধির কারনে যাতে এ প্রাচীন কীর্তি নষ্ট না করতে হয়, তার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রাখা আছে। সড়ক ও জনপথের এ অতিরিক্ত জায়গায় বারিউড়া বাজারসহ কয়েকটি জলাশয় রয়েছে।