ঢাকা | ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ - ৯:০৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

গল্প # চিনলাম না- চিনতে পারলাম না

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Tuesday, January 12, 2021 - 12:39 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 113 বার

লেখক শরীফ শামিল :

কেন যেন ” মৌরী ” ইদানিং আমার সব কিছুতেই ঢুকে পড়ছে ,,, !

মৌরী তোমার ওইরকম জ্বলন্ত চাহনিতে কী আমি পুড়তে থাকি নাকি শোধরাতে থাকি? বিভ্রম জাগায় তোমার ডান চোখ ; তৎক্ষণাৎই বিভ্রম ভাঙায় তোমার বাম চোখ । আমি পুড়ি আবার পুড়ি না; আমি শোধরাই আবার শোধরাই না।

অবশ্য একদা তুমি ও আমি জ্বলছিলাম বেশ। দপ করে নিভেও গেছি দুজনেই । নিভে যাওয়া টা কী খুব জরুরি ছিল? ” ভেস্টাল” দের মতো, আগুনকে জ্বালিয়ে রাখতে, উসকিয়ে রাখতে , আগলিয়ে রাখতে ,পারতে তো মৌরী ।

অনেক অনেক দিনের পর। প্রাথমিক বিদ্যালয় সহপাঠী ,আমার বাল্য বন্ধু জসিমীর সাথে দেখা হয়ে গেল।তাকে দেখে মনটা আমার শান্ত হয়ে উঠলো ।আমার চোখে মুখে বোধহয় সহজ সরল একটা অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে । জসিমী আমার দিকে তাকিয়ে থাকল অবাক চোখে । তবু দ্রুত কথা বলার মেশিন হয়ে উঠলাম আমরা । অল্প সময়ের মধ্যে একথা ও কথা , নুন কথা ঝাল কথা, বলাবলি হয়ে গেল আমাদের ।

একসময় ওদের পাড়ার অন্য সহপাঠীদের কথা জানতে চাইলাম । বাসেদ রাশেদদের কথা। ওদের সাথে জসিমীর সুসম্পর্কের কথা । এ কথাতে এসেই জসিমীর চোখ মুখের অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠল এক অসহনীয় মেজাজ । যেন সাক্ষাৎ শত্রু দর্শন বা শত্রু কথন বা ওইসব বন্ধু তার অমানবিক প্রতিপক্ষ,,,

– তো চলাচল রাখিস তো রাশেদ বাসেদ দের সঙ্গে? আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করি জসিমীকে।
– হ্যাঁ । তবে মুখে মুখে । মনে মনে নয়।
– মানে?

জসিমী আবার তার একজোড়া চালাক চতুর চোখ তুলে ধরল আমার দিকে ।যে চোখ দুটোকে আমার বেইমানি চোখ বলে মনে হতে থাকে ।

– আরে ভাই আমি তো মনে মনে চলার লোক । বললাম আমি বেশ জোরে র সাথে ।

– হ্যাঁ । সেজন্য তুই সে রকমই রয়ে গেলি রে জেন্টু( জেন্টু আমার নাম)- অধ:পতিত হলি। মন দিয়ে চললে, মানুষকে মন দিয়ে ভালোবাসলে- কষ্ট পেতে হয় ।বলল জসিমী বিজ্ঞভঙ্গিতে।- তোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধু বা আত্মীয় স্বজন, সত্যিকারের স্বজন কী না- এটা ভেবে দেখিস। জসিমীর কথাতে উপদেশ ও তিরস্কার দুটোই আছে। পরিস্কার অর্থে- প্রতি উত্তরে আমি কী বলব? আমি মনে মনে শব্দ মালা হাতড়াতে থাকি। আমি হাতড়ে আর পাই না কোনো শব্দ । এতক্ষণ জসিমীকে সন্দেহপ্রবণ লোক মনে হচ্ছিল, এখন নিজকে সন্দেহবাদী মনে হচ্ছে । এভাবে যে , জীবন জগৎ অসহ্য হয়ে ওঠবে রে জসিমী! যন্ত্রণা- দর্শন শোনালি রে জসিমী!
জসিমী আমার মোবাইল ফোন নম্বর টা নিয়ে দ্রুত চলে গেল ।তাকিয়ে থাকলাম তার গমন পথের দিকে ।
জসিমী কী বলে গেল? মানুষ ও জগৎ যেমন, আমি কী জগৎ ও মানুষকে সেভাবে দেখিনি? আমি কী ক্ষীণদৃষ্টি সম্পন্ন লোক? জসিমীর কথাগুলো অবশ্য আমাকে ভাবিত করে তুললো। আমার কয়েকজন খুব কাছের মানুষের বৈরী আচরণ- দৃশ্য ভেসে ওঠে আমার চোখে র সামনে,,,

সত্যি তো আমি কী কাছে র মানুষ চিনতে পেরেছি,,,?

ধুলো উড়িয়ে মোটর সাইকেল ভটভটিয়ে চলে যাচ্ছে জসিমী। যেন একটা বিশেষ ভূমিকা য় অভিনয় করে চলে যাচ্ছে- আমার মতো দর্শকের কাছে রেখে যাচ্ছে- অভিনয় কৌশল, মায়া কায়া ও ছায়া।
একটা বিভ্রম না সম্ভ্রম নাকি একটা নতুন জন্মদিন ঘোষণা করে গেল জসিমী?

হঠাৎ করে মৌরী র জ্বলন্ত চাহনিটা ভেসে ওঠে আমার চোখে র সামনে ।ওই চোখ দিয়ে মৌরী কী আমাকে সত্যি সত্যি শোধরাতে চায় না কি পোড়াতেই চায়? পোড়াও যদি মৌরী, তবে পোড়ানটা যেন সহনীয় হয়,,,