মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে কখন
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের প্রেসিডেন্টের শপথে জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবছর প্রথমত করোনাভাইরাসের আঘাত, তার ওপর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের উগ্র-সন্ত্রাসী মনোভাবে বাধ্য হয়েই একেবারে ছোট পরিসরে আয়োজন হচ্ছে অভিষেক অনুষ্ঠান। নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বগ্রহণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ জানুয়ারি (বুধবার) দিনভর থাকছে বিভিন্ন আয়োজন। এর কিছু হয়তো আইনি প্রয়োজনে, বাকিগুলো ঐতিহ্য রক্ষার খাতিরেই আয়োজিত হবে।
যেভাবে অভিষেক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে সাধারণত অভিষেকের দিন সকালেই নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে পৌঁছে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে তারা একসঙ্গে অভিষেক অনুষ্ঠানে যান। কিন্তু, এবার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যাবেন না। একারণে সেদিন সকালে বাইডেনের হোয়াইট হাউস ভ্রমণ হবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। হোয়াইট হাউস ভ্রমণ শেষে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটল ভবনে পৌঁছালেই শুরু হয় অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমে শপথবাক্য পাঠ করেন নতুন প্রেসিডেন্ট। এরপর রীতি মেনে অভিষেকের বক্তব্য রাখেন।
১৯৩৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে প্রার্থনার নিয়ম চলছে। অনেক সময় নতুন প্রেসিডেন্টের পরিচিত যাজকরাই এটি করে থাকেন। এরপর কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গ দুপুরের খাবার খান প্রেসিডেন্ট। পরে মিছিল নিয়ে হোয়াইট হাউসে পৌঁছান তিনি। সেখানে অভিষেক উপলক্ষে জাঁকজমক পার্টিতে যোগ দেন নতুন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি।
কিন্তু এবছর অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন একেবারে সীমিত করে ফেলা হয়েছে। ইতোমধ্যে জানা গেছে, হোয়াইট হাউসে যাওয়ার মিছিলটি হবে ভার্চুয়াল। হচ্ছে না কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ। বাদ অভিষেক পার্টিও।
অনুষ্ঠান শুরুর সময়
যুক্তরাষ্ট্রের সময় বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হবে বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শপথ নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
তারকাদের উপস্থিতি
অবশ্যই! যুক্তরাষ্ট্রের ছোটখাটো অনুষ্ঠানেও যেখানে তারকা উপস্থিতি দেখা যায়, সেখানে প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে থাকবেন না, তা কী করে হয়! বাইডেনের অভিষেকে ক্যাপিটল ভবনের অনুষ্ঠানে মঞ্চ আলোকিত করতে উপস্থিত থাকবেন একঝাঁক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
ইউএস ক্যাপিটলের পশ্চিমভাগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন পপ তারকা লেডি গাগা। এরপর একটি মিউজিক্যাল পারফরমেন্সে অংশ নেবেন গায়িকা-অভিনেত্রী জেনিফার লোপেজ।
এতে আরও অংশ নেবেন সঙ্গীতশিল্পী জাস্টিন টিম্বারলেক, জন বন জোভি, ডেমি লোভাটো এবং অ্যন্ট ক্লেমনস। বাইডেনের শপথগ্রহণ উপলক্ষে ৯০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন দুইবার অস্কারজয়ী অভিনেতা টম হ্যাংকস।
পরিবর্তন আনা হয়েছে যেসব সিদ্ধান্তে
সহিংসতার শঙ্কায় ওয়াশিংটন ডিসিতে বর্তমানে হাই-অ্যালার্ট চলছে। শহরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে ২০ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য। বাইডেনের অভিষেক উপলক্ষে ক্যাপিটল ভবনের চারপাশে সামরিক ‘গ্রিন জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে, যে ন্যাশনাল পার্কে অন্য সময় লাখো মানুষের ভিড় থাকে, এবার সেটি খালিই দেখা যাবে। অন্যবার মানুষজনকে অভিষেক অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার হচ্ছে উল্টোটা। তাদের ওই এলাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, এবার প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে মাত্র এক হাজার টিকিট ছাড়া হয়েছে। সেগুলোও পাওয়া যাচ্ছে শুধু সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের মাধ্যমে। বদলেছে ক্যাপিটলের দৃশ্যও। আগে উন্মুক্ত থাকলেও বর্তমানে ভবনটির চারপাশে বসানো হয়েছে সাত ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়া।