সাবেক ছাত্রলীগ নেতার আধিপত্যের অপর নাম মাদক
তুষার ইমরান, কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে মাদকের জাল। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, শহীদ মিনার ও হলে হলে বসে মাদকের আসর। সম্প্রতি মাদক সরবরাহ করে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বির“দ্ধে। ২০১৭ সালে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী কুবি শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষপদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এজন্য তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে অর্থ ও মাদক সরবরাহ করে আসছেন।
এদিকে গত তিন মাসে রেজা এলাহীর প্রত্যক্ষ মদদে ক্যাম্পাসে অন্তত পাচঁবার মারামারি ও হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে উদ্বিগ্নতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে তার কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর ক্যাম্পাস থেকে সরে দাড়াঁন রেজা-ই-এলাহি। এরপর চলতি বছরের ৬ মার্চ কুবি ছাত্রলীগের ইলিয়াস হোসেন সবুজ-রেজাউল ইসলাম মাজেদ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলে প্রায় সাড়ে পাচঁ বছর পর ক্যাম্পাসে ফেরেন রেজা। কুবি শাখার পরবর্তী কমিটিতে তিনি নিশ্চিতভাবেই সভাপতি হচ্ছেন দাবি করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন তিনি। এর মাঝে গেল বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর কুবি কমিটি বিলুপ্তির ধোঁয়াশা তৈরি হলে শতাধিক বহিরাগত নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ফাঁকাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করেন রেজা। এরপর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে নিজ দলে ভেড়াতে মাদক ও নগদ অর্থ তুলে দেন হাতে। ফলে ক্যাম্পাসে সহজলভ্য হয়ে ওঠে মাদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে হলে বেড়েছে মাদকে আনাগোনা। সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন হলের ছাদ, কক্ষ ও কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বসে মাদকের আসর। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৫ম ও ৪র্থ তলার একাধিক কক্ষ ও এ হলের ছাদ। এ হলের একাধিক মাদকসেবীর সাথে বিভিন্ন অজুহাতে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাঁদের বক্তব্যের অডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়নি এখানে। তাঁদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের এক মাদকসেবী যিনি রাজনৈতিক পক্ষ পরিবর্তন করে সম্প্রতি রেজার পক্ষে গিয়েছেন, তিনি বলেন, আমরা চাইলেই তিনি (রেজা) আমাদেরকে টাকা দেন। সে টাকা দিয়ে আমরা শালবন ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক কিনে নিয়ে আসি। বর্ডার থেকে যেসব মাদক আসে, সেগুলো বড় ভাইরা (হলের) নিয়ে আসেন।
আরেকজন বলছেন, কর্মী হওয়ার বিনিময়ে মাদকের অর্থের যোগন দেন রেজা এলাহি। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে রেজা-ই-এলাহি বলেন, আমার সাথে যারা রাজনীতি করে তারা এসব মাদকের সাথে কেউ জড়িত না। আমি নিজেও মাদক সেবন করি না। তাদেরও এসব বিষয়ে প্রশ্রয় দেই না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর সাথে যোগাযোগ করা হলে এরকম কোনো অভিযোগ পাননি দাবি করে আর কথা বলতে চাননি তিনি।
গত বছরের ১ অক্টোবর বহিরাগতদেরকে নিয়ে ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া দিলেও সম্প্রতি নিয়মিত শিক্ষার্থীদেরকেও হাত করেছেন তিনি। গত ২৯ মে তাঁর পক্ষে নতুন করে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদেরকে সঙ্গে নিয়েই এক সাংবাদিককে হেনস্তা করেন তিনি। এসময় তিনি সাংবাদিকদেরকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকিও দেন। তাঁর হুমকি-ধামকির পরই রাতের আঁধারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
এসব বিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের মুঠোফোনে গত তিনদিন ধরে একাধিকবার ফোন ও খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।