ভয়ঙ্কর প্রতারক চক্র জাল কাগজপত্রে ভূয়া মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক:সাবধান! আপনার আশেপাশেই আছে ভয়ঙ্কর প্রতারক চক্র! বিয়ে এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে বিরাট অঙ্কের টাকা নিয়ে নেয়াই এদের কাজ। এরা অতি উচ্চশিক্ষিত। সমাজের উচু স্তরে এদের চলাফেরা। প্রতারনার মাধ্যমে উপার্জিত কোটি কোটি টাকায় চলে এদের বিলাসী জীবন। সরকার-বিরোধী রাজনীতি ও বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে ফেসবুকে লিখে এরা নিজেরদের প্রগতিশীল হিসেবে পরিচয় দেয়। এমন-ই একজন হলেন সাধনা মহল ওরফে কুলসুম আসাদী মহল সাধনা।
সাধনা মহলের বয়স ৫৪ বছর। এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বিয়ে করেছেন চারটা। অনানুষ্ঠানিক বিয়ে আরো চার-পাচটা। ভয় দেখিয়ে অথবা মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা করে এসব বিয়ে থেকে উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা। সাধনা ১৯৯১ সালে অতি অল্প বয়সে প্রথম বিয়ে করেন ২০২৩ সালে অবসরে যাওয়া একজন শীর্ষ আমলাকে যিনি এখন সরকারী দলে সক্রিয়।
১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নুরুল মোমেন ভুইয়াকে। কয়েক বছরের মধ্যেই সেই বিয়ে ভেঙ্গে যায় সাধনার বেপরোয়া পরকীয়ার কারণে। কিন্তু তিনি-ই উল্টো মামলা দেন নুরুল মোমেনের নামে। ১০ লক্ষ টাকায় নুরুল মোমেন ভুইয়া আপোষ করতে বাধ্য হন।
এরপর ২০০৭ এবং ২০০৯ সালে সাধনা মহল দুটি অনানুষ্ঠানিক বিয়ে করেন এবং মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওইসব বিয়ের ডিভোর্স করেন। ২০১০ সালে বিয়ে করেন প্রাক্তন আর্মি অফিসার জাকির আহমেদ জাকিরকে। সাধনার পরকীয়া সম্পর্কের কারণে অশান্তি সৃস্টি হলে ২০১৩ সালে তিনি নারি-নির্যাতনের মামলা দিয়ে জাকির কে জেলে পাঠান। ৩০ লক্ষ টাকায় আপোষ করে জাকির রেহাই পান।
২০১৬-২০১৭ সালে সাধনা দুইজন ব্যাবসায়ীকে বিয়ে করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। ২০১৮ সালে ঈঞ্জিনিয়ার রশিদ নামে এক ব্যাবসায়ীকে বিয়ে করে সাজানো নারী-নির্যাতন মামলা দিয়ে হাতিয়ে নেন ৬০ লক্ষ টাকা।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আবার বিয়ে করেন একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ঊর্ধতন কর্মকর্তাকে। দু’জন ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় তিনি সাধনাকে বিয়ে করার জন্য নিজের ধর্মও পরিবর্তন করেন এবং ১৮৭২ সালের বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে করেন। বিয়ের আগে সাধনা মহল গোবিন্দ বরকে জানান যে তার পূর্বে একটি বিয়ে হয়েছিল কিন্তু সাধনা এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বিয়ে করেছেন চারটা। অনানুষ্ঠানিক বিয়ে আরো চার-পাচটা বলে জানা যায়।
বিয়ের এক মাসের মধ্যেই সাধনা মহল তার নতুন স্বামীর কাছে বিয়ে টিকিয়ে রাখতে হলে র নিরাপত্তা” হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকার দাবী তোলেন। সাধনা তার বন্ধুদের বলতে থাকেন যে তিনি এমন একজনকে বিয়ে করেছেন যার কোন টাকা নেই যদিও তিনি ভেবেছিলেন যে দীর্ঘদিন উচ্চপদে চাকুরী করে গোবিন্দ বর অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। বিয়ের প্রায় দেড় মাস পরে, ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর, সাধনা তার সাথে বিবাহ টিকিয়ে রাখতে হলে ৮০ লাখ টাকা দাবী করে, এবং টাকা না দিলে ডিভোর্স করার হুমকি দেয়।
জানা যায়, রাজনৈতিক দলের কাজের কথা বলে সাধনা মহল দিনে রাতে যে কোন সময় বাসা থেকে চলে যেত এবং কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করলে এই বিষয়ে জবাব দিতে সে বাধ্য নয় বলে রূঢ় ভাবে জবাব দিত। তাছাড়া বিভিন্ন অভিজাত ক্লাব-এ মদপান করা, এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার নাম করে সে প্রায়ই নিরুদ্দেশ হয়ে যেত, এবং এই সময় ফোন করলে সে ফোন ধরত না। বিবাহিত হলেও সাধনা প্রায়-ই গোবিন্দ বরের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন বন্ধুকে বাসায় নিয়ে এসে সময় কাটাত। উল্লেখ্য, গোবিন্দ বর ঐ দিন বাসায় ছিলেন না। সব কিছু জেনেও গোবিন্দ বর সাধনাকে তার উদ্দাম (লিবার্তারিয়ান) জীবনযাপন বন্ধ করতে বললে সাধনা এর মাধ্যমে তার ব্যাক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে অভি্যোগ করেন এবং গোবিন্দ বরকে খুনের হুমকি দেন।’।
১৪ মে ২০২৩ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সাধনা মহল গুলশান থানায় গিয়ে তাকে মারধর করার অভি্যোগ করে নারী-নির্যাতন মামলা দায়ের করার অনুরোধ করেন। কিন্তু অভিযোগের কোন সত্যতা না পাওয়ায় পুলিশ মামলা নেয়নি। ১৫ মে সাধনা মহল ৮/১০ জন বহিরাগত যুবক কে নিয়ে গোবিন্দ বরের তৎকালীন নিকেতনের বাসায় মিটিং করে যেখানে পাওয়া যায় সেখানে গোবিন্দ বর কে আক্রমন করার অনুরোধ করেন। ক্রমাগত হুমকির এক পর্যায়ে ১৮ মে সাধনা মহল টেলিফোনে গোবিন্দ বর কে খুন ও হাত-পা কেটে নেয়ার হুমকি দেয়- ফোনে খুনের হুমকির ট্রান্সক্রিপ্ট)। উল্লেখ্য, ১৩ মে দিবাগত রাত সাড়ে তিন টার দিকে গোবিন্দ বর তার বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে ১৮ মে সাধনা মহল বিদেশে যাওয়া পর্যন্ত গোবিন্দ বর নিজের বাসায় ফিরে যান নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাধনা মহল সাংবাদিকদের বলেছেন, গোবিন্দ এক সময় ডেইলী স্টারের সাংবাদিক ছিল। সম্প্রতি আমি এই বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে সব বলেছি। তাছাড়া তার সাথে তো আমার এখনো সংসার আছে।
তাহলে ঝামেলা কি? আপনি আগেও ৪ টা বিয়ে করেছেন আগের স্বামীদের কাছ থেকে তালাক বাবদ মোটা অংকের টাকাও নিয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন লাস্ট স্বামীর (গোবিন্দ) সাথে ও আপনার একই সমস্যা। তাছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আপনি ডির্ভোসের টাকা দাবি করেছেন- কোনো স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে কি টাকার দাবি করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ’আমি কয়টা বিয়ে করবো সেটা আমার ব্যাপার। এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’