গাজীপুর কোনাবাড়ী থানার ২ এসআই বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ভুয়া সাংবাদিক চক্র তৈরির অভিযোগ!
নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুর কোনাবাড়ী থানার দুই এসআই ও ভুয়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মো: জুনায়েদ হৃদয় এসব অভিযোগে করেন। জুনায়েদ এর ছোট ভাই এইচ এসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তাকেও পুলিশ পরীক্ষার আগে ধরে নিয়ে মিথ্য মামলা দেয়। সে কারণে পরীক্ষাটাও দিতে পারেনি। ভুক্তভোগী জুনায়েদ জানান, আমি ছোট পরিসরে ঝুট ব্যবসা করি। আমি গত ৩ বছর ধরে এ গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসার সাথে জড়িত। কোনাবাড়ী এলাকার মানুষ আমাকে খুব সৎ ও ভালো ছেলে হিসেবে জানে।
এছাড়া এলাকার নানা উন্নয়নমূলক কাজের সাথেও আমি জড়িত। তিনি বলেন, আমাকে এবং আমার কলেজ পড়ুয়া ভাইকে মিথ্যা মামলা ও ভুয়া সাংবাদিক দিয়ে ফেসবুকে আমাদের ছবি প্রচার করার অভিযোগে সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে আমি পুলিশ সদর দপ্তর ও আইজিপি’র কাছে একটি একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
অভিযোগকারী জানান, পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা ও ভুয়া সাংবাদিক মোকলেছুর রহমানের ষড়যন্ত্র করে আমার ভাইকে মামলায় জড়িয়ে দেয় এবং তারা আমার বাবাকে ও মারধর করেন ও নানা ভাবে অপমান করেন। আমি রাষ্ট্রের কাছে এই ঘটনার সুষ্ট বিচার চাই।
অভিযোগে জুনায়েদ জানান, গত বছর ২০২৩ সালে কাশিমপুর একটি ফ্যাক্টরি থেকে ঝুটের মাল কিনতে যাই। সেখানে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোকলেছুর রহমান (৩৬) নামের এক ব্যক্তি আমাকে মাল কিনতে বাধা দেয়। একই সাথে তাকে মাল কিনতে সুযোগ দেওয়ার জন্য চাপাচাপি করতে থাকে। আমি রাজি না হওয়ায়, বিভিন্নভাবে হুমকি এবং এক পর্যায়ে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। আমি তাতেও রাজি না হওয়ায়, আমাকে দেখে নেওয়া এবং পরবর্তীতে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে আমার জীবন শেষ করার হুমকি দেয়। এ অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই দিন মাল না কিনে ব্যবসায়ী স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হই। পরবর্তীতে ভুয়া সাংবাদিক, মোকলেছুর রহমান কোনাবাড়ী থানার দুই এসআইয়ের (এসআই মোঃ লিটন ও এসআই সোহাগ চৌধুরী) সহযোগিতায় আমার নামে সাজানো মামলা দায়ের করেন। প্রথম মামলা দায়ের হয় ২০২৩ সালের ১৯ মে।
তিনি অভিযোগ করেন, মামলার আগেই এসআই লিটন কোনো নোটিশ ছাড়া অসৎ উদ্দেশ্যে আমাকে রাস্তা থেকে থানায় তুলে নেন এবং প্রস্তুতিমূলক ডাকাতি মামলার অভিযোগে চালান করেন। সে যাত্রায়, ১ম মামলার জামিন হয় ২০২৩ সালের ১১ জুন। এরপর তাদের উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়ায় আমার জীবনে দুর্বিষহ অভিশাপ নেমে আসে। আমার কাছে চাঁদা দাবি সহ ব্যবসা গুটিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিতে থাকে দুই এসআই। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উপর মহলে অভিযোগ এবং সংবাদ সম্মেলন করার কথায় তাদের ক্ষোভ বেড়ে যায় হাজার গুণে। আমার নামে আবারও ২য় দফা সাজানো মামলা দেন- এসআই লিটন। আমি মসজিদ থেকে রমজানের মধ্যে তারাবি নামাজ শেষে বাড়িতে আসার পথে আবারও আমাকে তুলে থানায় নেন তারা। বলে আমি এবং আমার আপন ভাই ভুয়া ডিবি বা অনেক অপরাধ করেছে। পরে আমাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলার দায়ের হয় চলতি বছর ২০২৪ সালের ২২ মার্চ। এবং আমার ২য় মামলার জামিন হয় ২৪ মার্চ। আদালত আমাকে খালাস দিয়ে দেন। এদিকে দ্বিতীয় দফা থানায় নেওয়ার পর এসআই লিটন ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে অন্যথায় প্রাণ নাশের হুমকি সহ ভুয়া মাদক, হেরোইন, ডাকাতি সহ নানা মামলা দেওয়ার ভয় দেখান। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় থানাতে আমাকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে এসআই লিটন ও তার সহযোগীরা।
তিনি জানান, পূর্ব রোষানলের জেরে তিনি আমার ও আমার পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। ওই রাতেই আমার পরিবারের লোকজন সংবাদ পেয়ে থানায় আসলে, এসআই লিটন আমার বাবা সহ পরিবারের সকলকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বের করে দেন। পরের দিন এসআই লিটন চালান করার আগে আমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং মামলা হালকা করার অজুহাতে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করলে আমার বাবা ১ লক্ষ টাকা দেন। একই সাথে রিমান্ড বাঁচাতে টাকা দাবি করলে আরও ২০ হাজার টাকা দেন। টাকা পাওয়ার পর আমাকে কোর্টে চালান করা হয়। কোর্টে আমার নামে হওয়া সাজানো মামলার বাদী হাজির হয়। কিন্তু বাদী আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি বলে কোর্টে স্পষ্ট করেন এবং এসআই তার সই একটি কাগজে ভয় দেখিয়ে করিয়ে নেয় বলেও জানান। যার ফলে উক্ত ভুয়া মামলা থেকে কোর্ট আমার জামিন মঞ্জুর করেন। এমতাবস্থায় আমার পরিবার এসআই লিটন ও এসআই সোহাগ চৌধুরীর ভয়ে কোনাবাড়ী থেকে আমাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ চলে আসে। ভয়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিই। বাড়িতে কিছুদিন পর আর্থিক সংকটে পড়তে থাকি আমি ও আমার পরিবার। ফলে আমার ব্যবসা এবং জীবনের তাগিদে আবার (২ এপ্রিল ২০২৪) কোনাবাড়ী ফিরে আসি। তার দুই দিন পর আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে আটক করে এবং ৩য় মামলা দায়ের করেন ২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল। বেশ কিছু দিন জেলে থাকার পর ৩য় মামলার জামিন হয় চলতি বছরের ২ জুলাই।
জুনায়েদ অভিযোগ করেন, পরে কোনাবাড়ী ফিরে আসার ২ দিন পরই এসআই লিটন, এসআই সোহাগ, এএসআই সারোয়ার সহ কয়েকজন আমার বাড়িতে ঢুকে আমাকে তুলে নেয় এবং একই দিনে আমার আপন ছোট ভাই মিজানুর রহমানকে (শিক্ষার্থী) আমার ঝুটের গোডাউন থেকে তুলে নেয়। থানায় নিয়ে আমাদের দুই ভাইকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায় এসআই লিটন, এসআই সোহাগ ও এএসআই সারোয়ার। টানা ৩ ঘন্টা পশুর মত নির্যাতন করতে থাকে আমাদের উপর এবং আমাদের বলতে থাকে “তোদের বলছিলাম কোনাবাড়ী আর আসবি না, ব্যবসা করবি না। আবার আসছোস, তোদের এত সাহস কিভাবে হয়? অমানুষের বাচ্চা, আমাদের নামে পুলিশ কমিশনারের কাছে বিচার দিবি? এখন যা বিচার দে। তোর এবং তোর ছোট ভাইয়ের জীবন শেষ করে দেব। আমরাই কোনাবাড়ীর আইন, আমরা যা বলবো তাই হবে। তোদের যা স্বীকার করতে বলবো, যদি স্বীকার না করিস, আর না হয় মামলা দিয়ে জীবন শেষ করে দেব। এরপর আমাদের দুই ভাইকে কোর্টে চালান করা হয়। আমি তাদের পা ধরে ছোট ভাইয়ের জন্য কান্নাকাটি করি। তাদের বলি, আমার ছোট ভাই এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তাকে যেন তারা ছেড়ে দেন, তবে কোনোভাবে মন গলেনি তাদের। প্রায় ৪ মাস জেল খাটার পর আমরা জামিনে বের হয়েছি। আমার ছোট ভাই এইচএসসি পরীক্ষার হলে বসতে পারেনি, পরীক্ষা চলমান। তার শিক্ষা জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে দুই এসআই। এখন আমরা দুই ভাই ও আমার পরিবার পুলিশের নির্যাতনে জীবন-জীবিকার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তাছাড়া যাদের বাদি করে মামলা দেয় তাদের কাউকে আমরা চিনি না। আমরা আইনের সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
তিনি জানান, আমরা দুই ভাই দেশবাসীর কাছে অসৎ দুই পুলিশ কর্মকর্তা, ও ভুয়া সাংবাদিকসহ এ সিন্ডিকেটের সকলের মামলা, হামলা, চাঁদাবাজি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি।