বিচিত্র কুমার এর কবিতা “শরতের প্রেমের রূপকথা”
বিচিত্র কুমার
শরতের বাতাসে মৃদু রং তুলি,
চারুলতার সাথে দেখা, মনের আঁকাবাঁকা পথের ধুলি।
নদীর জল সোনালী, তোমার চোখের আলোর স্রোত,
হৃদয়ের অন্তরালে লুকায় লালিত প্রেমের সেতোত।
ফুলের মধু গন্ধে ভেসে ওঠে তোমার নরম হাসি,
হৃদয়ের প্রান্তরে ঝরে পড়ে সুরের সুরে রাশি।
কাকলি পাখির কিচিরমিচিরে প্রণয়ের সুর বুনে,
চাঁদের আলোতে উজ্জ্বল তুমি, প্রান্তরের রাজকুমারী সোনে।
বৃষ্টি পড়ার ছন্দে নৃত্য করে তোমার নরম হাত,
প্রেমের রঙিন স্বপ্নে মিশে যায় রাতের সোনালী রাত।
তোমার মুখের হাসি, কিরণ আলোয় স্নিগ্ধ তৃণ,
হৃদয়ের প্রান্তে ফুলের মতো গুনগুন করে প্রেমের গুণ।
সূর্যাস্তের লাল আকাশ, তোমার চোখের তীব্রতা,
মেঘের মাঝে হাসে তুমি, প্রেমের স্নিগ্ধতা।
তোমার মৃদু কণ্ঠের গান, কোকিলের সুরের নৃত্য,
প্রেমের মধুর রূপে ভরিয়ে দেয় হৃদয়ের হাহাকারিত ছন্দ।
তাজা ফুলের পাপড়ি, তোমার চুম্বন নিখুঁত স্মৃতি,
হৃদয়ের গভীরে বসবাস করে, প্রেমের এক চিরন্তন রীতি।
বাতাসে ভাসে তোমার সুরেলা কথা, চাঁদের আলোয় পুঞ্জীভূত,
প্রেমের রাজ্যে তুমি, প্রেমিক হৃদয়ের প্রার্থনাত্মক পুত।
নক্ষত্রের আলোয় জ্বলে ওঠে তোমার অঙ্গনের প্রশান্তি,
হৃদয়ের রক্তে মিশে যায়, প্রেমের রাঙা সন্ধ্যা গাঁথা অল্পান্তি।
সূর্যের সোনালী আলো, তোমার আলিঙ্গনে রূপ নেয়,
তোমার হাসির অমল সুরে, প্রেমের এক চমৎকার রূপ তৈরী হয়।
শরতের মেঘলা আকাশ, তোমার মিষ্টি কথা শুনে যায়,
সারা বিশ্বের থেকে তুমি, প্রেমের সুরে সব কিছু অঙ্কিত যায়।
তোমার চুম্বন, ফুলের ডালির মতো স্নিগ্ধ আর কাঁপানো,
হৃদয়ের গভীরে রেখে যায়, প্রেমের এক চিরন্তন টানাও।
চাঁদের আলোতে তোমার মুখ, অমল স্নিগ্ধতা দেয়,
প্রেমের বাণী সুগন্ধে, হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটিয়ে যায়।
শরতের আকাশে তোমার সুর, প্রেমের সোনালী আলোয় বিকিরণ,
হৃদয়ের গভীরে ভেসে আসে, প্রেমের কাব্য গানের মনোজ্ঞণ।
তোমার চোখের হাসি, তাজা ফুলের সুগন্ধের মতো,
প্রেমের পাখির গান বুনে দেয়, হৃদয়ের সুরের সাদৃশ্য বহন।
সূর্যাস্তের আলোয় তোমার মুখ, এক জীবনের স্বপ্নের আসা,
প্রেমের ফুলের মতই ভরা, হৃদয়ের খুশির অসীম বাসা।
শরতের ভোরে তুমি, ফুলের মতো সজীব ও রূপবান,
প্রেমের সূর্যের আলোর মতো, হৃদয়ের পরিণতি দান।
তোমার স্পর্শে, ধরা পড়ে পাখির গানের মাধুরী,
প্রেমের মর্মে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, হৃদয়ের অন্তরঙ্গ গড়তে।
—
(০২)
এলোমেলো পরী
– বিচিত্র কুমার
আমার ঘুমের ক্যানভাসে এলো এক পরী
আলো মেখে চাঁদের আলোয় তার চোখ দুটি ভরি,
আমি দেখলাম, মনে হলো স্বপ্নের জালে
তার কেশের খোঁপায় যেন রাতের নক্ষত্র ঝরে।
আমি বললাম, “থেমো একটু, থাকো আমায় ঘিরে,”
হৃদয় আমার বকুলের মধুর মালা দিয়ে,
তাকে বাঁধতে চাইলাম ভালোবাসার শিকলে,
কিন্তু সে হেসে চলে গেল, এলোমেলো চুলে।
আমার ঘরের জানালাতে রইল তার ঘ্রাণ,
কেমন যেন সন্ধ্যা নেমে এলো নির্জন আকাশে;
আমি বুঝলাম না কখন সে চলে গেল গানের ছলে,
আমার স্বপ্নের বাগানে গাঁথা মেঘের ফুলে।
যেন মুক্তো ঝরে পড়ল, হৃদয় ভরা দুঃখের বৃষ্টি,
পরীটি তবু ফিরে এল না, সে চলে যায় গোপনে;
আমি খুঁজলাম তাকে চাঁদের আলোয় আরেক রাতে,
তার ঘ্রাণ রয়ে যায়, কিন্তু সে ফিরে আর আসে না।
আমি বললাম, “তবুও রবে মনে,” স্মৃতির আলপনায়,
পরীটি তো এলোমেলো চুলে খেলে যায় শুধু মনোরমায়।
আমি ধরতে পারলাম না, ধরে রাখা যায় কি ভালবাসা,
সে তো রয়ে গেল শুধু মনের আকাশে মেঘের দিশা।
(০৩)
সৌদামিনী
-বিচিত্র কুমার
তোমার চোখের দীপ্তি, পূর্ণিমার চাঁদের গাঢ় উজ্জ্বলতা,
যেন প্রতিটি স্বপ্নের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে রহস্যের মাধুরী।
তোমার হাসির মিষ্টি সুর, হৃদয়ের পুঞ্জির মতো শীতল,
যেন প্রণয়ের প্রশান্ত বালুকার মতো নিরবতার মিলন।
তোমার কণ্ঠের মাধুরী, সূর্যের প্রথম কিরণ,
যা অন্ধকার রাতকে উজ্জ্বল করে প্রেমের আলোয়।
তোমার সান্নিধ্য, বাতাসে ভেসে আসা অর্কিডের সুগন্ধি,
যেন প্রাণের প্রতিটি সেল স্নিগ্ধতায় ভরে ওঠে।
তোমার হাতের ছোঁয়া, আলোর শিরা কিরণের মতো তেজোদীপ্ত,
যা হৃদয়ের অন্ধকার কোণে উজ্জ্বল প্রভা।
তোমার চোখের মেলবন্ধন, সূর্যের সোনালী হাসি,
যেমন অনুভূতির মধ্যে প্রেমের আনন্দ বিস্তার লাভ করে।
তোমার হাসি, নদীর গাঙচিলের শান্ত উড়ান,
যেন প্রেমের জলরাশিতে ভেসে যায় হৃদয়ের চিন্তা।
তোমার কণ্ঠের গুণগান, প্রাতঃকালীন বৃষ্টির কোমলতা,
যা প্রেমের সুরে হৃদয়ে নতুন গান সৃষ্টি করে।
তোমার স্পর্শ, রাতের শীতল স্নিগ্ধতা,
যেন রাত্রির হাওয়ায় ভাসে চুম্বনের কথা।
প্রেমের প্রতিজ্ঞা, সূর্যাস্তের সোনালী প্রেরণা,
যা গভীর রাতের স্বপ্নে আলোর দীপ্তি প্রকাশ করে।
হৃদয়ের মেলবন্ধন, চাঁদের স্নিগ্ধ প্রতিচ্ছবি,
যা প্রকৃতির সৌন্দর্যকে প্রেমের অক্ষরে রূপ দেয়।
তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি ক্ষণ, পাহাড়ের চূড়ায় বাতাসের সমরূপ,
যে প্রেমের গভীরে ভরা চিরন্তন উষ্ণতার আলো।
তোমার প্রেমের আলো, রাতে চাঁদের সোনালি ঝলক,
যা অভ্যন্তরীণ সত্তার ভেতর নতুন সকাল নিয়ে আসে।
তোমার সাথে প্রত্যেক মুহূর্ত, মহাকাশের ইতিহাস,
যেখানে প্রেমের স্রোতে সকল অনুভূতি মিলে যায়।
আমার হৃদয়, তোমার নামের মধুর সুর,
যা আকাশের উচ্চতায় প্রেমের আলো জ্বলে।
তোমার সান্নিধ্য, ফুলের পাপড়ির কোমল নিঃশ্বাস,
যা প্রেমের উষ্ণ আলোয় ভরপুর, প্রতিটি দিন তে।
সৌদামিনী, তুমি আমার প্রেমের জীবনদাতা,
যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত প্রেমের সত্তায় ভরে ওঠে।
তোমার প্রেমের জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ,
যেমন প্রকৃতির প্রতিটি রূপে তুমি সঙ্গী হয়ে রয়েছ।
(০৪)
বনলতা সেন
-বিচিত্র কুমার
জীবন যদি এমনই হয় — সারাদিন ধুলো আর পথের গতি,
সন্ধ্যার শেষে একটু শান্তি, ছায়ার ভিতর নিশ্বাসের বেণ,
বনলতা সেনের মুখ, অন্ধকারে তার চমক,
পাখির মতো উড়ে আসে আর নিভৃতে থাকে সব কথা বেন।
তবে আমি কোথায় যাব? কোন বন্দরে থামবে নৌকা আমার?
নাটোরের সেই মুখে পাই সব ক্লান্তির মুক্তি, বনলতা সেন।
মেঘের মতন স্মৃতিরা জমে উঠেছিল আমার চোখের কোণে,
তবুও দেখেছি চিরনবীন তার রূপের অপূর্ব রেণ,
তার পায়ের নূপুরের মৃদু শব্দ যেন জ্যোৎস্নার ভাঙা নৌকা,
পূর্বের কোনো নগরে ফিরে যাওয়ার পথ হারিয়ে ফেলেছি বহু দিন।
তার মুখের দিকে চেয়ে মনে হয়,
বিলীন সময়ে যেখানেই যাবো, সেখানেই রয়ে যায় বনলতা সেন।
যা দেখেছি পথে, তার কিছু নেই আর মনে;
সন্ধ্যার আকাশে কেবল কালো পাখির ডানার পেন,
তবে তাকে দেখার পর যেন সময় থমকে গেছে,
সকলই মিলিয়ে গেছে, শুধু তার মুখের অমোঘ আকর্ষণ, বনলতা সেন।
বাতাসে তার কণ্ঠস্বরের মৃদু স্পন্দন —
মনে হলো, এইখানেই রয়েছে জগতের সব সীমা, বনলতা সেন।
পৃথিবীর সব দ্বিধা, সব ক্লান্তি যেন
তার চোখের গভীরে থিতিয়ে বসে নীলাভ চেন,
চুপচাপ সে বসে থাকে চিরায়ত নীরবতায়,
যেন সন্ধ্যার সমস্ত রহস্য জড়িয়েছে তার মুখে তেন;
মনে হয়, এখানেই শেষ সমস্ত যাত্রা,
সকল পথের শেষ সেই চোখের পাতা — নাটোরের বনলতা সেন।
তখন পৃথিবী থেকে একে একে মুছে যায় সব ছায়া,
রাত্রি তার সব রঙ মিশিয়ে ফেলে নীল অন্ধকারে তেন;
সেই ঘন আঁধারে সে যে কতটা কাছের,
তার ঠোঁটের মোহনায় লেগে থাকে কেবলি আগের দিনের চেন,
আঁধারের মাঝে আলো হয়ে ফুটে ওঠে কেবল সে,
অসীমের ঘূর্ণিতে হারানো কোনো নাবিকের স্বপ্ন, বনলতা সেন।
শেষ হেমন্তের হাওয়ার শেষে,
নক্ষত্রের আলো ভেদ করে নেমে আসে রাতের দেন,
তার হাসির মৃদু আলোর রেখা,
যেন পৃথিবীর সব কোলাহল থেকে মুক্তি খুঁজে ফেন।
সে যদি চায়, তবে সবই মুছে যাবে,
রয়ে যাবে কেবল সেই এক রাতের জ্যোৎস্না — নাটোরের বনলতা সেন।
—
(০৫)
অপেক্ষার শেষ কোথায়?
-বিচিত্র কুমার
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
বাতাসে শোনাই দিয়েছিল কোনো এক বর্ষার রাতে,
জ্যোৎস্নায় মাখা মাঠে কেউ এসে ডাকবে,
ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যাবে অচেনা কোনো পথে।
সেই রাত কেটে গেল, আকাশও হলো পরিষ্কার,
মাঠের ধারে বসে থাকত যে, এল না সে আর ফিরে,
তবুও আমি অপেক্ষায় আছি—কখন সে ডাকবে,
শুধু বাতাসে ভেসে আসে দীর্ঘশ্বাস, গভীর অন্ধকারে।
কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখেনি,
শৈশবের গাছতলায় বলেছিল বন্ধুরা মিলে,
“একদিন আমরা আসব ফিরে, স্মৃতির সাথে খেলতে।”
সে গাছ শুকিয়ে গেছে, কিন্তু আমি রয়েছি একা,
তাদের জন্য রেখে দিয়েছি একটু ফাঁকা।
কেউ ফেরেনি, শুধু ঝরে যায় পাতা,
জীবনটা হলো একা একা,
ফিরে এসে গেলো না কেউ, শুধু ঝরে যায় পাতা।
হাঁসের পালও একদিন বলেছিল পথ দেখাবে,
যাবে বুনো নদীর ধারে, রূপকথার দেশে।
হাঁসেরা হারিয়ে গেল, পেছনে শুধু ফেনা,
বুঝিনি, সে ছিল কল্পনার খেলা।
হাঁটি আজও, নদী নেই, নেই কোনো পাল,
সব ছিল মিছে, শুধুই একটা জাল।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কেটে গেল,
মায়ের গল্পগুলো আর সত্যি হলো না,
রাজা-রানী সব মিলিয়ে গেল মেঘে,
মায়ের সেই গল্পের কথা, আজও শোনার আশা রাখি বুকে,
এক আশার ফুল বুনে চলি প্রতিদিন,
কিন্তু কিছুই নেই, সেই গল্পের দিন।
অক্টোবরের বাতাসও বলেছিল কানে কানে—
“তোমার প্রতীক্ষার শেষ হবে এবার,”
মহুয়ার গন্ধে মোড়া সন্ধ্যা এল তবে,
কিন্তু প্রতিশ্রুতির মতো কেউ এলো না আর।
বাতাসও আজ চলে যাচ্ছে কালের ধারায়,
অন্য মৌসুম আসবে, আশায় আছে যে সবার।
যে পাথরে মাথা রেখে বলেছিলাম, “এসো,
সকালবেলা শুনবো পাখিদের গান,”
সে পাথর আজও পড়ে আছে এখানে,
কিন্তু যার কথা ছিল, সে আসেনি এ পথে।
তবু রোজ সকালে পাখির গান শুনতে বসি,
কিছুই তো বদলায় না, অপেক্ষার পালকি বয়ে চলি।
কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখেনি,
অপেক্ষার পালকি যেন তার কোনো শেষ নেই।
এ পথের শেষে আর কেউ নেই কেবল একা,
একটা মোহ, একটা অভিমান—জীবন সেঁধিয়ে গেছে ফাঁকা।
তবু ভাবি, হয়তো কেউ এসে বলবে, “এসেছি,”
কতদিনের জমে থাকা অপেক্ষা—আকাশ ছুঁয়ে ছড়িয়ে যাবে, বুঝেছি।
তেত্রিশ বছর কেটে গেল, কেউ কথা রাখেনি,
তবু মনে হয়, হয়তো কেউ আসবে কোনোদিন,
আর তখনই সব প্রতীক্ষা হবে পূর্ণ,
কোনো এক অন্তিম রাতের আকাশে ছড়িয়ে যাবে,
কিন্তু কথা রাখবে কি কেউ? কেউ কি আসবে?