ময়মনসিংহে বাইক রাইডার হত্যা মামলায় ৩জনকে গ্রেফতার করলো পিবিআই
আরিফ রববানী ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের কামারপাড়া হতে বকশিপাড়াগামী মাটির রাস্তা সংলগ্ন হিন্দুপল্লী গ্রামে জনৈক আব্দুর রহিমের পুকুরের দক্ষিণ দিক থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ময়মনসিংহের পিবিআই। উক্ত হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকান্ডে জড়িত সন্ধিগ্ধ তিন জন গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার রাকিবুল আক্তার। অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির নাম জুবায়েদ আহমেদ (৩১)।তিনি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার সুয়াইর ইউনিয়নের গালাগাঁও এলাকার -সামাদ তালুকদারের ছেলে। সে মিরপুরের শিয়ালবাড়ী থেকে বাইক রাইডার হিসেবে কাজ করত।
বৃহস্পতিবার (০৯ জানুয়ারি) সকাল ১১.০০ ঘটিকায় পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি।
তিনি জানান-এই ঘটনায় মৃত জুবায়েদ এর বড় ভাই আজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে ত্রিশাল থানার মামলা দায়ের করেন। যার নং-২৬, তাং-৩০/১২/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ রুজু হয়। থানা পুলিশের তদন্তকালে গত ০৭/০১/২০২৫ তারিখে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা স্বউদ্যোগে মামলাটি অধিগ্রহণ করে
পিবিআই অ্যাডিশনাল আইজিপি,মোঃ মোস্তফা কামাল এর তত্ত্বাবধানে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) অমিতাভ দাস মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে ৮ জানুয়ারী রাত অনুমান ০৪.১৫ টায় জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানাধীন বাট্টাজোড় এলাকা থেকে -মোঃ নাজমুল ইসলাম (৩০); ২। আবুল কাশেম @ সোনা মিয়া (৫৫); ৩। আব্দুল আজিজ @ আনিছ (২৪) নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার রাকিবুল আক্তার জানান- গত ৩০ডিসেম্বর সকাল ০৭.৪৫ ঘটিকায় ত্রিশাল থানা পুলিশের মাধ্যমে উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের বৈলর কামারপাড়া হতে বৈলর বকশীপাড়া গামী মাটির রাস্তা সংলগ্ন হিন্দুপল্লী গ্রামের জনৈক আঃ রহিম এর পুকুরের দক্ষিণ দিকে হাফওয়াল করা বাউন্ডারির ভিতরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে বলে সংবাদ পেয়ে পিবিআই ময়মনসিংহের ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে উক্ত অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার সুয়াইর ইউনিয়নের গালাগাও গ্রামের সামাদ তালুকদারের পুত্র
জুবায়েদ আহমেদ (৩১) এর লাশের সন্ধান করে খবরটি ডিসিস্টের পরিবারকে জানিয়ে দেয়। এব্যাপারে ডিসিস্টের বড় ভাই আজহারুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ত্রিশাল থানার মামলা নং-২৬, তাং-৩০/১২/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ রুজু হয়। থানা পুলিশের তদন্তকালে গত ০৭ জানুয়ারি তারিখে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা স্বউদ্যোগে মামলাটি অধিগ্রহণ করে পিবিআই অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই মোঃ মোস্তফা কামাল এর তত্ত্বাবধানে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার এর সার্বিক সহযোগীতায় তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) অমিতাভ দাসের
ব্যবস্থাপনায় পিবিআই ময়মনসিংহের সকল অফিসার ও ফোর্সের আন্তরিকতা, নিরলস প্রচেষ্টা মাত্র নয় দিনের মধ্যেই চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস এই হত্যাকান্ডের আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।
মামলার তদন্ত শুরু করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মাত্র নয় দিনের মধ্যেই হত্যাকান্ডে জড়িত অজ্ঞাত আসামীদের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়ে গত ৭জানুয়ারী বেলা ৪.১৫ টায় হত্যাকাণ্ডের সাথে জামালপুরের বাট্টাজোড় এলাকা থেকে তদন্তে প্রাপ্ত আসামী ত্রিশালের বৈলর পালপাড়া এলাকার জয়নাল আবেদীনের পুত্র মোঃ নাজমুল ইসলাম (৩০),
জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোড় উজানপাড়া এলাকার মৃত আবুল হাশেম এর পুত্র
আবুল কাশেম @ সোনা মিয়া (৫৫), আব্দুল হামিদ এর পুত্র আব্দুল আজিজ @ আনিছ (২৪)কে গ্রেফতার করে। এসময় আসামীদের দেখানো ও সনাক্ত মতে নিহত ব্যক্তির মোটর-সাইকেলটি উদ্ধার করে জব্দ করে।
এ বিষয়ে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এই হত্যা মামলার আসামী নাজমুলের বাড়ী ত্রিশালের বৈলরে। দীর্ঘ ৫/৬ বছর যাবত সে টঙ্গীতে ওয়েলডিং এর কাজ করত। ডিসিস্ট জুবায়েদের মিরপুরের শিয়ালবাড়ীতে বাইক রাইডার হিসেবে কাজ করত। গত ২৯ডিসেম্বর বিকাল অনুমান ০৪.০০ টায় জুবায়েদ ভাড়ার জন্য টঙ্গী স্টেশন রোডের মাথায় দাঁড়ালে সেখানে আসামী নাজমুলের সাথে দেখা হলে নাজমুল টঙ্গী হতে ময়মনসিংহ শহরে আসা-যাওয়ার কথা বলে জুবায়েদের মোটর-সাইকেল ভাড়া করে। বৈলরে পৌঁছার পর আসামী নাজমুল তার চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে পাওনা টাকা নেয়ার কথা বলে জুবায়েদকে নিয়ে ঘটনাস্থল এলাকায় যায়।
একপর্যায়ে আসামী নাজমুল বাইক রাইডার জুবায়েদের গলায় থাকা চাদর দিয়ে ফাঁস দিয়ে তাকে হত্যা করে এবং ডিসিস্ট জুবায়েদ এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মোটর-সাইকেল নিয়ে চলে আসে। আসামী নাজমুল ডিসিস্টের মোবাইল ফোনটিকে ধানিখোলা বাজারে খোকন মেকারের কাছে ২০০ টাকায় বিক্রি করে এবং মোটর-সাইকেল নিয়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জের বাট্টাজোড় এলাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে। ২/৩ দিন পর আসামী নাজমুল মোটর-সাইকেলটি বাট্টাজোড় এলাকায় তার পরিচিত আসামী সোনা মিয়ার কাছে বাইকটি বিক্রি করে। আসামী সোনা মিয়া ছিনতাইকৃত মোটর-সাইকেলটি তার ভাতিজি জামাই আসামী আব্দুল আজিজ আনিছ এর হেফাজতে রাখে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার আরও জানান-
গ্রেফতারকৃত সকল আসামীদের ৮জানুয়ারী বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। দুইজন আসামী বিজ্ঞ আদালতে নিজেদের সম্পৃক্ত করে ঘটনার বিবরণ উল্লেখপূর্বক ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। খুব দ্রুতই জড়িত সকল আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।