বিশ্ববাজারে বেড়েই চলেছে স্বর্ণের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি সপ্তাহের শুরুতেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান প্রবণতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার বিশ্ববাজারে লেনদেন শুরু হতেই স্বর্ণের দাম এক শতাংশের ওপরে বেড়ে গেছে। এতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম আবারও ১৯’শ ডলার স্পর্শ করেছে।
বিশ্ববাজারে এমন দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ার পরিকল্পনা করছেন ব্যবসায়ীরা। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে বর্তমানে স্বর্ণের যে দাম, তাতে বাজুস চাইলে ভরিতে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারে। তবে স্বর্ণের দাম কতো বাড়বে বা বাড়ানো হবে কি না সে সিদ্ধান্ত বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের আলোচনার ভিত্তিতে নেয়া হবে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, বিশ্ববাজারের সঙ্গে স্বর্ণের দাম সমন্বয়ের জন্য দু’সপ্তাহ আগে থেকেই দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তবে মাঝে বিশ্ববাজারে কিছুটা দাম কমায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অবশ্য গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান হয়। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেও লেনদেনের শুরুতে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সুতরাং যেকোনো সময় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার সিদ্ধান্ত আসেতে পারে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নভেম্বরে শেষদিকে এসে পতনের মধ্যে পড়ে স্বর্ণের দাম। এতে ২৫ নভেম্বর থেকে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়। ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৫০৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৭৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭০ হাজার ৬৮৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৬১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কামানোর পরও বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। দফায় দফায় দাম কমে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম সাড়ে ১৭’শ ডলারের কাছাকাছি চলে আসে। ফলে দেশের বাজারে আর এক দফা স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাজুস।
গত ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাজুস এর কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর থেকে স্বর্ণের দাম কমানো হয়। এ দফায় ভরি প্রতি এক হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৯ হাজার ৫১৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬০ হাজার ৭৬৯ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫০ হাজার ৪৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
অবশ্য দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়ার দিনেই (১ ডিসেম্বর) বিশ্ববাজারে আবার বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। দাম বাড়ার প্রবণতা চলে গত সপ্তাহ জুড়েও। এতে গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম এক হাজার ৮৮১ দশমিক শূন্য ৪ ডলারে উঠে যায়।
স্বর্ণের এই দাম বাড়ার প্রবণতা চলতি সপ্তাহেও দেখা যাচ্ছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২১ দশমিক শূন্য ৬ ডলার বেড়ে এক হাজার ৯০২ দশমিক ৭২ ডলারে উঠেছে। এতে সোমবার লেনদেন শুরুর প্রথমার্ধেই স্বর্ণের দাম ১ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে গেল। এর মাধ্যমে ৬ সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববাজারে এখন স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
বিশ্ববাজারে এই দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে বাজুস’র সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমরা সবসময় বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রাখার চেষ্টা করছি। এ কারণে এক সপ্তাহে (২৫ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর) স্বর্ণের দাম দুই বার কমানো হয়েছে। এখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার বিষয়টিও আমরা মনিটরিং করছি। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়তে পারে।’