সিংড়া পৌর মেয়রের খোলা চিঠি
সম্মানিত সিংড়া পৌরবাসী,
আসসালামু আলাইকুম। অন্য ধর্মাবলম্বী সবাইকে আদাব ও শুভেচ্ছা।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিংড়া পৌরসভা নির্বাচনে আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেয়ার জন্য আমি আপনাদের নিকট চিরকৃতজ্ঞ।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমি সিংড়া পৌরসভার সার্বিক উন্নয়নে একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে আসছি। একের পর এক বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অবহেলিত রাস্তা-ঘাটসমূহের উন্নয়ন করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য নির্মান করা হয়েছে বড় বড় আরসিসি ড্রেন। মোড়ে মোড়ে ডাস্টবিন স্থাপনের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে উন্নত। গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিদিন বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। যানজট নিরসনে হাটের দিনগুলোতে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যাতে পৌরবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে৷ পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে সিঁড়িঘাট, আধুনিক পাবলিক টয়লেট। স্থাপন করা হয়েছে হস্তচালিত নলকূপ। সিংড়া পৌরসভার এ সকল ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকান্ড আজ শুধুমাত্র দেশেই প্রসংশিত নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত হয়েছে।
বিগত নির্বাচনে আমি বলেছিলাম “আস্থা রাখুন, পাশে থাকুন”। আপনারা আস্থা রেখে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন এই অবহেলিত বিধ্বস্ত পৌরসভাটিকে একটি মডেল পৌরসভায় প্রতিষ্ঠিত করতে। আমি এক মুহুর্তের জন্যেও সে দায়িত্ব ভুলিনি, নিজের পরিবার-পরিজন সবকিছুর উর্দ্ধে রেখেছি পৌরসভার উন্নয়ন তথা পৌরবাসীর সেবা। বিগত ৫ বছরে সুখে-দু:খে-দুর্যোগে বা পৌরবাসীর যে কোন বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছি সর্বদাই। বিশেষ করে, করোনা কালীন সময়ে আমি নিজের জীবনের কথা না ভেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে থেকেছি। আমার সামর্থ্য অনুসারে চেস্টা করেছি মানুষের পাশে থাকতে, তাদেরকে সহযোগিতা করতে।
আমি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনি। পৌরসভার সকল উন্নয়ন কাজের গুনগতমান নিশ্চিতের বিষয়েও আমি কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছি, যা আপনারা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন। তবে, দীর্ঘদিনের অবহেলিত, উন্নয়ন বঞ্চিত একটি এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য ৫ বছর সময় যথেষ্ট নয়৷ তারপরও আমরা গত ৫ বছরে প্রায় ৭টি বৈদেশিক প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত হয়েছি এবং সেই বরাদ্দকৃত অর্থে সিংড়া পৌরসভার সকল প্রধান প্রধান রাস্তা-ঘাট, ড্রেন, কালভার্টসহ অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি।
আমি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রাণপ্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। যিনি ২০১৫ সালে সিংড়া পৌরসভা নির্বাচনে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি চলনবিলের কৃতি সন্তান, আমার অভিভাবক মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী Zunaid Ahmed Palak এমপি মহোদয়ের প্রতি। সিংড়া পৌরসভার সার্বিক উন্নয়নে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। তাঁর সহযোগিতা ব্যতীত স্বল্প সময়ে এতো উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না।
আমার নির্বাচনী #ইশতেহার এর প্রায় শতভাগ প্রতিশ্রুতি আমি বিগত ৫ বছরেরও কম সময়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি। যার মধ্যে, শহর রক্ষা বাঁধ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সোলার সড়ক বাতি, শতভাগ বিদ্যুতায়ন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সিংড়া পৌরসভায় ধারাবাহিক উন্নয়ন, জননিরাপত্তা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি করণের লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করেছি।
২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় বানভাসী প্রায় ৩৭০০ অসহায় মানুষকে ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সুরক্ষিত করেছি। এর জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি “ক্রাউড ফান্ডিং” এর মাধ্যমে আমি একটি তহবিল গঠন করি, যার মাধ্যমে বাসভাসী আশ্রিত ৩৭০০ অসহায় মানুষের ৪০ দিন তিন বেলা আহার নিশ্চিত করেছি।
২০২০ সালের ভয়াবহ বন্যায় বানভাসী প্রায় ৫ হাজার অসহায় মানুষকে ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সুরক্ষিত করেছি এবং নিয়মিত তাদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি। উক্ত বন্যায় নদীগর্ভে বসতবাড়ী সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়া ৪৫টি পরিবারকে মানবিক সহায়তা, তাঁবু সহ আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে নগদ অর্থ প্রদান করেছি। বন্যাকালীন সময়ে পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রের সকল বানভাসীকে ঈদ উপহার হিসেবে লাচ্চা-সেমাই ও কোরবানীর মাংস বিতরণ করেছি।
#বৈশ্বিকমহামারী করোনাকালীন সময়ে লকডাউন চলাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদার অব হিউম্যানিটি জননেত্রী শেখ হাসিনার মানবিক সহায়তা আমি নিজে সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে প্রত্যেক শ্রেনী পেশার কর্মহীন, বিপদগ্রস্থ মানুষের মাঝে পৌঁছে দিয়েছি। পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ১২ হাজার পরিবারে ৩ দফায় প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান করেছি। পাশাপাশি, লকডাউনে অর্থনৈতিক সংকটের শিকার হওয়া মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষের জন্য একটি বিশেষ হট লাইন নম্বর চালু করি, যার মাধ্যমে সহায়তা প্রত্যাশী পরিবারের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে আমি নিজে তাদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। উক্ত সময়ে আমি ৫৫ দিন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে আমার নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে অসহায় মানুষগুলোর পাশে থেকেছি। এছাড়া, জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসমূহ বাড়ী বাড়ী পৌঁছানোর সকল ব্যবস্থা করেছি।
সিংড়া পৌরসভার প্রায় ১১ কিলোমিটার রাস্তায় ২টি পর্যায়ে মোট ৬২১টি সোলার সড়ক বাতি স্থাপন করে দীর্ঘদিনের অবহেলিত অন্ধকারাচ্ছন্ন পৌরসভাকে আলোকিত করেছি। এতে রিনিউয়েবল এনার্জি ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে, অপরদিকে রাত্রীকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। পরিবেশবান্ধব উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাকে বিভাগীয় পর্যায়ে “শ্রেষ্ঠ মেয়র” এর এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।
জার্মানীর জিআইজেড এর অর্থায়নে ১২টি ইলেকট্রিক গাড়ির মাধ্যমে সিংড়া পৌরসভার নিজস্ব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেছি, যেখানে মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে বিনামূল্যে উক্ত এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হচ্ছে। করোনায় লকডাউন চলাকালীন সময়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর গাড়িসমূহ বাড়ী বাড়ী খাদ্য সহায়তা প্রদানের কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখে, যা বিশেষ ভাবে প্রশংসিত হয়। আমাদের এই উদ্যোগটিও আন্তর্জাতিকভাবে পুরষ্কৃত হয়েছে৷
বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে আজ শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস, ডিজিটাল লাইব্রেরীর মাধ্যমে পড়াশুনা তথা ইন্টারনেট এর সহযোগিতায় শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেই লক্ষ্যে, ১০টি ওয়াই ফাই জোন চালু করেছি এবং পৌর কমিউনিটি সেন্টারে “ডিজিটাল ইয়ুথ কর্ণার” চালু করেছি, যাতে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে তাদের অনলাইন পড়াশুনা করতে পারে।
সিংড়া পৌরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি স্থানে প্রাথমিকভাবে ২১টি উন্নত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছি, যা পৌরসভার সকল শ্রেনী-পেশার জনসাধারণ কর্তৃক প্রসংশিত হয়েছে।
বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের কম্পিউটার আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি, যাদের মধ্যে অনেকেই এখন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে স্বাবলম্বী।
নারী উন্নয়ন তথা তাদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, যেখানে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
আমি সিংড়া পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন আদর্শিক কর্মী হিসেবে জনগনের বিপদ-আপদ-প্রয়োজন, সুখে ও দু:খে সার্বক্ষণিকভাবে মানুষের পাশে আছি।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা সহ বৈশ্বিক করোনা মোকাবেলায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের নাগরিক সেবা সবাইকে পৌঁছে দিতে প্রাণপ্রিয় নেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।
বিগত ৫ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে আমি হয়ত আপনাদের প্রত্যাশার শতভাগ পূরণ করতে পারিনি, সেজন্য আমি আপনাদের কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি৷ তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি আপনাদের কল্যাণে নিজেকে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রাখার৷
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। মহান আল্লাহ যেন আমাকে পুনরায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার তৌফিক দান করেন। আমিন
জয় বাংলা৷
জয় বঙ্গবন্ধু৷