পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন -ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবেঃ
মো নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের তাণ্ডব ও সহিংসতার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
৬ জানুয়ারি বুধবার ট্রাম্পের সমর্থকেরা যেভাবে কংগ্রেস ভবনে ঢুকে হামলা চালিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়িয়েছেন, তাতে মার্কিন রাজনীতিবিদ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাবেক কর্মকর্তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কীভাবে পুলিশ কংগ্রেসে ওই ঝোড়ো হামলা চালাতে দিতে পারল, সেটি ভেবে সাধারণ মার্কিনিদের মতো তাদের মনেও জন্ম নিয়েছে অবিশ্বাস।
ওই ঘটনার সময় দায়িত্বরত এক ক্যাপিটল পুলিশ কর্মকর্তা এবং ট্রাম্প-ভক্ত বিমানবাহিনীর সাবেক এক নারী কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রাণকেন্দ্রে ঘটে যাওয়া এই সহিংস ঘটনা পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। দেশটির নাগরিকরা এখনো ভয়াবহ ওই ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। অনেকের কাছেই এখনো বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছে না।
কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই ভবনে নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের অধিবেশন চলাকালে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলার সময় হাজারো ট্রাম্প সমর্থক ওই ভবন ঘিরে সব নিরাপত্তার বলয় ভেঙে জোর করে ভেতরে প্রবেশ করে এমন তাণ্ডব চালাল তা এখনো তাদের কাছে বিরাট প্রশ্ন হয়ে আছে।
ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে অনায়াসে ঢুকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শত শত উগ্র সমর্থকের এই তাণ্ডব, চলতি অধিবেশনে বিঘ্ন ঘটানো ও আইনপ্রণেতাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ অনেক রাজনীতিবিদ। ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে সাধারণ মার্কিনদের মধ্যেও।
৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ক্যাপিটল (কংগ্রেস ভবন) পুলিশপ্রধান স্টিভেন সান্ডের পদত্যাগ করা উচিত। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট পার্টির এই কংগ্রেস সদস্য আরও বলেন, প্রতিনিধি পরিষদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস পল ইরভিং এরই মধ্যে পদত্যাগপত্র দাখিল করেছেন। ইরভিং সরাসরি তার কাছে জবাবদিহি করে থাকেন। সান্ড জবাবদিহি করেন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ উভয়ের কাছে।
সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার বলেছেন, ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন সরকারের অভিষেক ও তার (শুমার) সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই পদত্যাগ না করলে সিনেটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাইক স্টেঞ্জারকে বরখাস্ত করবেন তিনি।
এই অবিশ্বাস্য ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ক্যাপিটল পুলিশ। অথচ সুরক্ষিত কংগ্রেস ভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন এ বাহিনীর দুই হাজার সদস্য।
ওই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত কিছু ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, দাঙ্গাকারীরা যখন ভবনে ঢুকছিল, তখন কিছু কিছু পুলিশ সদস্য ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। এক পুলিশ সদস্যকে তো ভবনের ভেতরে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে ছবি তুলতে পোজ দিতে দেখা যায়।
নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানোর পরও ট্রাম্পের সমর্থকদের নির্বিঘ্নে ভবন ত্যাগ করতে দিতে দেখা গেছে। আবার বয়স্ক এক দাঙ্গাকারীকে ভবনের সিঁড়ি বেয়ে নামতে সহায়তা করেন এক পুলিশ সদস্য।
নবনির্বাচিত কংগ্রেস সদস্যদের একজন মনডেয়ার জোনস কংগ্রেসের নিরাপত্তাব্যবস্থা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ক্ষোভ ঝেড়ে বলেছেন, এই দাঙ্গাকারীরা যদি কৃষ্ণাঙ্গ হতেন, তবে তাদের ক্যাপিটলে ঢোকার আগেই গুলি করে মাটিতে ফেলে দেওয়া হতো।
নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত এই ডেমোক্র্যাট সদস্য বলেন, আমার এমন অনুভূতি জোরালো হওয়ার কারণ ভিডিও ফুটেজগুলো। যেসব সন্ত্রাসী নিরাপত্তাব্যবস্থা ভাঙল, পুলিশ তাদের সঙ্গেই কীভাবে সেলফি তোলে? আবার ওই সন্ত্রাসীদের ভবনে ঢুকতে সহায়তা করতে তারা ধাতব প্রতিবন্ধকতাগুলো সরিয়ে দিয়েছে।
ক্যাপিটল পুলিশের বাজেট বরাদ্দ দেখভাল করা কংগ্রেস কমিটির চেয়ার টিম রেয়ান বলেন, ওই সমর্থকদের কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ঢুকতে দেওয়ার ঘটনায় তিনি হতাশ। বিশেষত, যখন ক্ষমতার চেয়ারেই তাদের বসে পড়তে দেখেন। তিনি আরও বলেন, তাদের তৎপরতা ছিল অবৈধ। তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল।
একই রকমের বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাবেক কিছু কর্মকর্তা। তাদের একজন কিম ডাইন। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্যাপিটল পুলিশের প্রধান ছিলেন তিনি। ডাইন বলেন, এ যেন সত্যিকার ভৌতিক ছবি দেখা। আমরা প্রতিদিন প্রশিক্ষণ দিই, পরিকল্পনা করি, বাজেট বরাদ্দ দিই। কিন্তু তা এসব দেখার জন্য নয়। এ ঘটনা কীভাবে সম্ভব, আমার মাথায় আসে না।
সহিংসতার ঘটনায় কেন আটকের সংখ্যা এত কম তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এই দেশ বিচারের দুটি ধরনের সাক্ষী হলো। একটি হলো গতকাল ইউএস ক্যাপিটালে চরমপন্থীদের তাণ্ডব এবং অন্যটি হলো গত সামারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে (ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার) পুলিশের টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়া। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।