ঢাকা | জানুয়ারী ১৩, ২০২৫ - ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

আগুনে দগ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ নিহত-৪ তদন্ত কমিটি গঠন, সিআইডি ও পিবিআই পরিদর্শন

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Monday, January 11, 2021 - 5:52 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 63 বার

শাহ আলম সরকার, কালিয়াকৈর প্রতিনিধি :      গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল সোমবার ভোরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে একই স্থানে চারটি কলোনিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে দগ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একে অন্যের জীবন বাঁচাতে, কেউ শেষ সম্ভলের টাকা ও কেউ পরণের কাপড় আনতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারাযান। এ সময় দগ্ধ ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। আগুনে  ৪৯টি কক্ষ ও কক্ষে থাকা টাকা-পয়সা, বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহতরা হলেন- গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার সুন্দাইলপুর গ্রামের শামসুল হুদার ছেলে মিলন মিয়া (৩৭), মিলনের স্ত্রী মুন্নি আক্তার (৩০), একই থানার জরিপপুর গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে ফরহাদ হোসেন (৩৮) ও একই জেলার পলাশবাড়ী থানার  জগন্নাথপুর গ্রামের উসমান গনির ছেলে আব্দুল আউয়াল (৪০)। এরা সবাই স্থানীয় পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন।

এলাকাবাসী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলায় কালামপুর পূর্বপাড়া রেললাইন পাকার মাথা এলাকায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। গত কয়েক দিন ধরে জনি মিয়ার কলোনির একটি কক্ষে সিলিন্ডারের গ্যাস লিকেজ করছিল। খবর পেয়ে ওই কলোনির ম্যানেজারসহ পাশে ভাড়াটে লোকজন ওই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। তাদের নিষেধের তোয়াক্কা না করে ওই কক্ষের ভাড়াটে সিলিন্ডারের উপর ইট দিয়ে গ্যাস ব্যবহার করে আসছিলেন। গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ওই কক্ষে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন জ্বলে উঠে। মুহুর্তের মধ্যে আগুন ওই কলোনির বাকী কক্ষ এবং পাশের জাকির হোসেন, জনি মিয়া, মোহাম্মদ আলী ও লিটন হোসেনের কলোনিতে ছড়িয়ে পড়ে।

এ সময় আতংকিত হয়ে এসব কলোনিতে থাকা পোশাক শ্রমিকরা তাদের শিশু ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাইরে চলে আসে। আতংকিত হয়ে পড়ে আশপাশে থাকা অন্যান্য কলোনি ও বাসা বাড়ির লোকজনও।

আগুন নেভাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সাভির্সেও তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে আগুনে দগ্ধ হয়ে মিলন মিয়া ও তার স্ত্রী মুন্নি আক্তার, পাশের ভাড়াটে ফরহাদ হোসেন ও আব্দুল আউয়ালের তাজা প্রাণ ঝড়ে যায়।পরে ফায়ার সার্ভিস ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। আগুনে পুড়ে গেছে  ৪৯টি কক্ষ ও কক্ষে থাকা টাকা-পয়সা, পরণের কাপড়, লেপ-তুষক, টেলিভিশন, ফ্রিজ, বিদ্যুতের মিটারসহ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকজন। আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। তাদের পরিচয় জানা যায়নি।এ ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের মাতম সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদশর্ী নিহত আব্দুল আউয়ালের স্ত্রী আকলিমা বেগম আহাজারিতে বলছেন, ঘরে আগুন দেখে তিনি ও তার স্বামী আওয়াল, পাঁচ বছরের ছেলে আকাশ ও তিন বছরের প্রতিবন্ধী ছেলে রাকিবকে নিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বাইরে বেড়িয়ে যাই। কিন্তু আমাদের শেষ সম্ভল ৪৫ হাজার ৫৪৩ টাকা আনতে স্বামী আউয়াল আবারও আগুনজ্বলন্ত ঘরের ভিতরে যায়।সে আর ফিরে আসেনি। সেখানেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় আমার স্বামী। অপর প্রত্যক্ষদশর্ী নিহত ফরহাদের স্ত্রী লিপি বেগম বিলাপের সঙ্গে বলেন, আগুন দেখে তিনি ও তার স্বামী ফরহাদ, তাদের দুই মেয়ে মায়া ও মনিরাকে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে যান। কিন্তু দগ্ধ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা পাশের ভাড়াটে মুন্নিকে উদ্ধার করতে গিয়ে আগুনের লেলিহানে পুড়ে আমার স্বামী ফরহাদও মারা যান।

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা কবিরুল আলম জানান, খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।তবে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের ডাইরেক্টর অপারেশন লেঃ কর্নেল জিল্লুর রহমান স্যারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এদিকে এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ কাজী হাফিজুল আমিন, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম জহিরুল ইসলাম,কালিয়াকৈর থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ওসি তদন্ত রাজীব চক্রবতর্ী, কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার্ আহম্মেদ রেজা আল মামুন, পৌর প্রশাসনিক কর্মকতার্ জাহিদুল ইসলাম, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সিকদার জহিরুল ইসলাম জয় এবং সিআইডি ও পিবিআই এর দুটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার্ (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সিআইডি ও পিবিআই এর দুটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেছে।

কালিয়াকৈর উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ কাজী হাফিজুল আমিন জানান,খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে শুকনো খাবার, কম্বলসহ বিভিন্ন অনুদান দেওয়া হবে।