দিনাজপুরে প্রকাশ্যে সুন্দরী হত্যাকান্ডে জড়িত প্রধান আসামী চান্দু গ্রেফতার
পি কে রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ দিনাজপুর শহরের কালুর মোড়ে মহিলা হোটেল শ্রমিক জয়া বর্মন (৩৫) কে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামী মোঃ তরিকুল ইসলাম চান্দু (৩২) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র (দাঁ) উদ্ধার করা হয়।
রবিবার ( ১ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকারীকে আটকের সংবাদ নিশ্চিত করেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “নারী হোটেল শ্রমিক জয়া বর্মন ওরফে সুন্দরী (৩৫) কুপিয়ে হত্যার পর হত্যাকারী মোঃ তরিকুল ইসলাম চান্দু (৩২) আত্মগোপনে চলে যায়।
প্রযুক্তি ব্যবহার ও গোয়েন্দা নজরদারীতে গত শনিবার দিবাগত রাতে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার পাকেরহাট বাজারের মাহিন সুইট নামীয় মিষ্টির দোকানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত মোঃ তরিকুল ইসলাম চান্দু (৩২) দিনাজপুর জেলা সদর উপজেলার মুরাদপুর দামপুকুর গ্রামের আশরাফ আলীর পালক পুত্র।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, দিনাজপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সাউদিয়া হোটেলের বাবুর্চি হিসাবে মোঃ তরিকুল ইসলাম চান্দু (৩২) কাজ করত। একই হোটেলে জয়া বর্মণ ওরফে সুন্দরী (৩৫) নারী শ্রমিক হিসাবে রান্নার কাজ করত।
একই হোটেলে কাজ করার সুবাদে সেখান থেকে তাদের পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একে অপরের ভালবাসা ও প্রেমের সর্ম্পকের কারনে মোঃ তরিকুল ইসলাম চান্দু, জয়া বর্মন ওরফে সুন্দরী (৩৫) কে বিয়ের চাঁপ দিলে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
জয়া বর্মন ওরফে সুন্দরী (৩৫) যেহেতু একজন হিন্দু নারী তার একটি মেয়ে ও স্বামী সংসার আছে। তাই সে কোন ভাবেই এই সম্পর্ক দীর্ঘায়ু করতে চাচ্ছিল না।
তাই মোঃ তরিকুল ইসলাম চান্দু (৩২) ক্ষোভে অভিমানে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, মোঃ তরিকুল ইসলাম চান্দু (৩২) গত ৯ বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেছিল। সেই স্ত্রী গত ৫ বছর পুর্বে মারা যায়। সেই স্ত্রী চার বছর সংসার করলেও কোন সন্তান হয়নি।
মোঃ তরিকুল ইসলাম চান্দু (৩২) অনেকটাই ছন্নছারা জীবন যাপন করত। হোটেলের প্রধান বাবুর্চি হওয়ায় সে হোটেল মালিকের বাসায় বসবাস করত।
উল্লেখ্য যে, গত বুধবার ( ২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ ঘটিকার দিকে দিনাজপুর শহরের মির্জাপুর বাস টার্মিনাল (কালুর মোড়) বিসমিল্লাহ হোটেলের দক্ষিণ পাার্শ্বের গলিতে জয়া বর্মন ওরফে সুন্দরী (৩৫) কে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়।
পরবতীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
এই ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদি হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দাঁয়ের করেন। যাহার মামলা নাম্বার ৫৭/৭৩৮।
নিহত জয়া বর্মন ওরফে সুন্দরী (৩৫) ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ থানার বনডাঙ্গা গ্রামের সপাল রায়ের স্ত্রী।
নিহত জয়া বর্মন ওরফে সুন্দরী (৩৫) এর ১৩ বছর বয়সি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সে লালমনিহাট জেলার বান্দরকুড়ার প্রভাস রায়ের কন্যা। স্বামী ও স্ত্রী মিলে ফকিরপাড়ার আব্দুস সামাদের একটি টিন সেটের বাড়ীতে ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। ১৪ বছর পূর্বে তাদের হিন্দু ধর্মমতে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। সংসারে অভাব অনটনের কারনে তারা দিনাজপুরে বসবাস করেন বলে জানা গেছে।