নৌকায় সিল মারা সেই আজাদ কারাগারে
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারার ঘটনায় জড়িত আজাদ হোসেনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ।
পরে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ভোরে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আজাদকে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রাম থেকে তুলে আনা হয়।
সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়দানকারীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর বাকবিতণ্ডা ও ধ্বস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে একটি মোটরসাইকেলে করে আজাদ হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের বেশ কয়েকবার কল দিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তার সাড়া মেলেনি।
তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, বিকেলে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আজাদকে হেফাজতে নেয় চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে শনিবারও জেলা পুলিশ এবং চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের কল দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের সাড়া মেলেনি। তবে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রও আজাদকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে।
গত ৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের ১১৫টি কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আজাদ ব্যালট বইয়ে নৌকায় মার্কায় অনবরত সিল মারেন। এ ঘটনার ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে ওই নেতাকে ৪৩টি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
আজাদ হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার কর্মী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এর আগে দিঘলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন তিনি। গত অক্টোবরে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করে জেলা ছাত্রলীগ।
তবে গত ৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু দাবি করেন, ব্যালটে সিল মারা যুবকটি ছাত্রলীগের কেউ নন। ছাত্রলীগ থেকে তাকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি শিবিরকর্মী।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল মারা যান। ৩ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৪ অক্টোবর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাকের পার্টির, জাতীয় পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী অংশ নেন। মোট ১১৫টি কেন্দ্রে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচনের দিন দুপুরেই অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ এনে জাপা ও জাকের পার্টির প্রার্থী ভোট বর্জন করেন।
এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই আসনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পৃথকভাবে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। তদন্ত চলমান বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
**নৌকায় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ সিল মেরে ভাইরাল ছাত্রলীগ নেতা
** প্রকাশ্যে নৌকায় ছাত্রলীগ নেতার সিল মারার ঘটনায় তদন্ত কমিটি
তদন্ত চলমান বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
** প্রকাশ্যে নৌকায় ছাত্রলীগ নেতার সিল মারার ঘটনায় তদন্ত কমিটি
**৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ব্যালটে নৌকায় সিল মারার ঘটনায় তদন্ত শুরু
** নৌকায় সিল মারা আজাদ শিবিরকর্মী, দাবি জয়ী আ. লীগ প্রার্থীর।