ঢাকা | ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪ - ১:৪০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

আমতলীতে ঋণ না পেয়ে ফেইজবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ব্যবসায়ী যুবকের আত্মহত্যা

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Thursday, July 4, 2024 - 5:07 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 38 বার

মল্লিক জামাল, স্টাফ রিপোর্টার:-“সবাই আমাকে মাফ করে দিবেন, আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি। কিছুক্ষণ পরে আমি আত্মহত্যা করবো। আমি চার পাশে অনেক ধার দেনা হয়ে গেছি। নিজেকে আর সামলাতে পারছি না। একটা লোন হওয়ার কথা ছিল আজকে তা হলো না। আমি আমার বউয়ের সকল গহনাগাটি টাকা পয়সা খরচ করে পথের ভিখারী হয়ে গেছি। আমার বউ অথবা পৃথিবীর কারো দোষ নেই আমার মৃত্যুর জন্য। সকলে আমাকে মাফ করে দেবেন। মা, বাবা, ভাই ও বোন সকলে আমাকে মাফ করে দিবেন”।

ঋণের এক লক্ষ টাকা না পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর দেরটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইজবুকে) এমন স্ট্যাটাস দিয়ে আমতলী উপজেলা রেভিনিউ মসজিদের পাশে ব্যবসায়ী খোকন কাজী আত্মহত্যা করেছে। ফেইজ বুকে এমন স্ট্যাটাস দেখে স্বজনরা দ্রুত দোকানে চলে আসে। কিন্তু গিয়ে দেখে দোকানের ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষনা করেছেন।
জানাগেছে, বরিশাল শহরের লাকুটিয়া খাশিপুর এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন কাজীর ছেলে খোকন কাজী ২০২০ সালে কাজের সন্ধানে আমতলীতে আসেন। ওইখানে এসে উপজেলা রেভিনিউ মসজিদের পাশে চায়ের দোকান দিয়ে সংসার পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু এ ব্যবসায় তার সংসার ভালো চলছিল না। গত দুই বছর আগে জনসেবা নামক একটি স্থানীয় সংস্থা থেকে চরা মুল্যে ঋণ নেয় খোকন। ওই ঋণ পরিশোধ করতে তার হীমশীম খেতে হয়। ধার দেনা করে ওই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতো খোকন। পুনরায় এক লক্ষ টাকা ঋণ পাওয়ার আসায় আবারো ধার দেনা করে গত জুন মাসে ঋণের সমুদয় কিস্তি পরিশোধ করে দেয় সে। কিন্তু জনসেবা ঋণ সংস্থার ম্যানেজার রিয়াজুল হাসান তাকে পুনরায় ঋণ দিতে গরিমসি করে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তাকে ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেয় সংস্থার ম্যানেজার রিয়াজুল হাসান কিন্তু ঋণ দেয়নি। এতে ক্ষোভে তিনি বৃহস্পতিবার দুপুর দেরটার দিকে নিজের ফেইজবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে গলায় রশি পেচিয়ে দোকানের ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এমন অভিযোগ স্ত্রী তানিয়া আক্তারের। ফেইজবুকের স্ট্যাটাস পেয়ে স্বজনরা দ্রæত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে। পরে তারা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মনিরুজ্জামান তাকে মৃত্যু ঘোষনা করেছেন।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে স্ত্রী তানিয়া আক্তারের বুকফাটা অর্তনাতে আকাশ পাতাল ভারী হয়ে উঠে। তিনি কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী মৃত্যুর জন্য দাবী ঋণ সংস্থার লোকজনের শাস্তির দাবী করছি।

জনসেবা ঋণ সংস্থার ম্যানেজার মোঃ রিয়াজুল হাসান বলেন, খোকন আমার সংস্থার সদস্য ছিল। এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে গত জুন মাসে সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন কিন্তু ঋণের আবেদন করেননি। আজকে ঋণ দেয়ার কথা ছিল কিন্তু আপনী দেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

জনসেবা ঋণ সংস্থা পরিচালক এসএম সোহেল মাহমুদ বলেন, ওই ব্যাক্তি আমার সংস্থায় ঋণের আবেদনই করেনি তাকে ঋণ দেব কিভাবে? ঋণের যে কথা উঠছে তা মিথ্যা।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মনিরুজ্জামান খাঁন বলেন, ব্যবসায়ী খোকন কাজী হাসপাতালে আনার পুর্বেই মারা গেছেন। তার গলায় ফাঁসের চিহৃ রয়েছে।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আমির হোসেন সেরনিয়াবাদ বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ও অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।