ঢাকা | ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ - ৮:১০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

আমেরিকা-ব্রিটেন নারাজ-শেখ হাসিনার আপাতত ভারতেই

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Thursday, August 8, 2024 - 9:11 am
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 40 বার
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ দেশ ছাড়ার আগে কেমন কেটেছিল শেখ হাসিনার?
এনিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। শেষ মুহূর্তে বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছিলেন বাংলাদেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার সকাল থেকে এব্যাপারে পুলিস ও তিন বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে চাপও দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, কিছুতেই মানতে চাইছিলেন না। পরে অবশ্য পরিবারের চাপে পদত্যাগ করতে রাজি হন। সেনাবাহিনীর তরফে তাঁকে দেশ ছাড়ার জন্য ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের-কন্যা।
কয়েকদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিনশোর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ‘ঢাকা চলো’ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। ওইদিন সকাল ১০টা নাগাদ পুলিশের আইজিপি ও তিন বাহিনীর প্রধানকে ডেকে পাঠানো হয় গণভবনে। হাসিনা একপ্রস্ত বৈঠক করেন তাঁদের সঙ্গে। হাসিনার উপদেষ্টাও সেখানে ছিলেন। সেনাবাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না, তা নিয়েও উষ্মাপ্রকাশ করেছিলেন হাসিনা। তখন পুলিশ প্রধান তাঁকে বলেন, পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে পুলিশের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু সেটা মানতে চাইছিলেন না হাসিনা। ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন।
তখন আধিকারিকরা শেখ রেহানার সঙ্গে পৃথক ঘরে আলোচনায় বসেন। পরিস্থিতি বিপদের দিকে যাচ্ছে, বিষয়টি হাসিনাকে বোঝানোর জন্য তাঁকে অনুরোধ জানানো হয়। সেই সময় বিদেশে থাকা হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও কথা বলেন এক শীর্ষকর্তা। এরপর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন জয়। তারপর পদত্যাগে রাজি হন হাসিনা। ততক্ষণে গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারেন আন্দোলনকারীরা গণভবনের অভিমুখে রওনা দিয়েছে।
সেই পরিস্থিতি বিচার করে হাসিনাকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে দেশ ছাড়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। মুজিব-কন্যা পদত্যাগ করতেই তাঁকে এবং রেহানাকে কপ্টারে করে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। বেলা আড়াইটে নাগাদ বাংলাদেশ সেনার বিমানে চাপেন তাঁরা। গন্তব্য ভারত। শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে রহস্য ।কোন দেশে শেষ পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন?গোপনীয়তা এবং অনিশ্চয়তা চরমে।
সোমবার শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ভারতের কাছে চাওয়া হয়েছিল অন্তর্বর্তীকালের ট্রানজিট। সেইমতো ভারতীয় ফাইটার জেটের প্রহরায় হাসিনার এয়ারক্রাফ্ট এসে নেমেছিল গাজিয়াবাদের এয়ারফোর্স বেসে। ভারতকে জানানো হয়েছিল, ভারতে কয়েক ঘণ্টার লে ওভারের পরই তিনি চলে যাবেন লন্ডন। বোন শেখ রেহানা ব্রিটেনেরও নাগরিক। তিনি হাসিনার সঙ্গী। কথা ছিল, রাত একটায় তাঁরা উড়ে যাবেন লন্ডন। কিন্তু ব্রিটেনের নীরবতা থমকে দেয় হাসিনাকে।
সারারাত তাঁকে কাটাতে হয় হিন্দন এয়ারবেসের একটি অতিথিশালায়। মঙ্গলবার দিনভর অপেক্ষার পরও আসেনি ব্রিটেনে প্রবেশ এবং আশ্রয়ের বার্তা। বিকেলের পর ব্রিটেনের লেবার পার্টির সরকার জানায়, তাদের পক্ষে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অথবা দেশীয় কোনও অপরাধের তদন্ত হলে, আইনগত সুরক্ষা দেওয়ার নিয়ম নেই ব্রিটেনের। অথচ হাসিনা এবং ভারত  মনে করেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সঙ্কেত পেলে হাসিনার জন্য দরজা খুলে দেবে ব্রিটেন।
কিন্তু না। মার্কিন সিলমোহর দূরঅস্ত, হাসিনার ভিসাই বাতিল করে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। নেপথ্যে একের পর এক ইঙ্গিতবাহী ঘটনা এবং আসন্ন নির্বাচন। মঙ্গলবার সকালে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি কনস্যুলেটে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘হাসিনা বিরোধী’ একটি দল। প্রশ্ন উঠেছে, ছোট একটা দল যথেচ্ছাচার চালাল, অথচ মার্কিন নিরাপত্তা এজেন্সি নীরব দর্শক! দুপুরের পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নেয়।
স্পষ্ট হয়ে যায় যে, হাসিনাকে ব্রিটেন-আমেরিকা কেউই আশ্রয় দেবে না। তাদের আশঙ্কা, মুজিব-কন্যার পাশে দাঁড়ালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাজে লাগিয়ে অশান্তি বাধানো হবে। তাই তারা ঝুঁকি নিতে নারাজ। ফলে সঙ্কট ভারতের… এরপর কী? মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত হিন্দন এয়ারবেসের বাইরেই আনা হয়নি হাসিনাকে। জানা যাচ্ছে, আরও ৪৮ ঘণ্টা ভারতে থাকার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, ফিনল্যান্ডের মতো ইউরোপের অন্য কোনও দেশে আশ্রয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
তবে নিশ্চিন্ত নয় ভারতও।
হাসিনার ভারতে আসা এবং তার আগেই বাংলাদেশে তৈরি হওয়া নৈরাজ্যের ইস্যুতে সর্বদল বৈঠক ডাকে ভারত সরকার। সংসদ ভবনের ওই বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংরা বিরোধীদের জানান, বাংলাদেশে ঠিক কী ঘটছে। বৈঠকে রাহুল গান্ধী জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করেন, খালেদা জিয়া কিংবা অন্য বিরোধীদের এই মুহূর্তে ভূমিকা কী? গোটা ঘটনায় কি বহিরাগত শক্তির হাত থাকতে পারে? তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়ান বিদেশমন্ত্রীকে জানান, বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তার সবথেকে বড় প্রভাব পড়তে পারে বাংলায়।
তাই যে কোনও পদক্ষেপ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যেন আলোচনা করা হয়। বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ সমন্বয় রেখে চলবে রাজ্য।
সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে। সংসদের দুই কক্ষে বিদেশমন্ত্রী বিবৃতিও দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও নরেন্দ্র মোদি ছিলেন না! অথচ ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ক্রাইসিসে সর্বত্র প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীই—ইন্দিরা গান্ধী।