স্লিপ অ্যাপনিয়া কেবল ঘুমের রোগ নয়
ঘুমের উপর্যুপরি ব্যাঘাত ঘটায় স্লিপ অ্যাপনিয়া। যেকোনো মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। কিন্তু যাঁদের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তাঁদের বারবার রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা, ক্লান্তি বা বিষণ্ন লাগে। সব কাজেই বিরক্ত লাগতে পারে। ঘুমানোর সময় খুব বেশি নাক ডাকা এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। আক্রান্ত ব্যক্তির রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায়, আর সারা দিন ঘুম ঘুম ভাব হয়। দিনের
বেলা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না। এমনকি কাজের সময় বা পড়তে পড়তে ঘুমিয়েও পড়তে পারেন।
কিন্তু স্লিপ অ্যাপনিয়া মানেই যে কেবল ঘুমের সমস্যা তা নয়; এর সঙ্গে শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটে, বেড়ে যায় হৃদ্রোগ ও অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি। আসলে এটি শরীরের সব অংশের ওপরই বিরূপ প্রভাব ফেলে।
বিজ্ঞাপন
কেন হয়
অনেক ক্ষেত্রে রোগটির কারণ অজানা থাকতে পারে। তবে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটার কারণে এ রকম হয়। ঘুমানোর সময় আমাদের শ্বাসনালি শিথিল হয়ে যায়, তবে যাঁদের এই শিথিলতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘটে, তাঁদের ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত ওজন এই রোগের অন্যতম একটি কারণ।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাক-কান-গলার গঠনগত কিছু ত্রুটির কারণেও এ রোগ হতে পারে। আবার মস্তিষ্কের যে অংশ ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে, সেই অংশে কোনো সমস্যা হলেও স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন
স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীর সমস্যাগুলোর বিস্তারিত ইতিহাস জানাতে হবে চিকিৎসককে। রোগী তাঁর নিজের সমস্যাগুলো নিজে অনেক ক্ষেত্রে বুঝতে পারেন না। যিনি তাঁর পাশে ঘুমিয়ে থাকেন, অধিকাংশ সময় তিনিই লক্ষণগুলো খেয়াল করে থাকেন। লক্ষণ অনুযায়ী সন্দেহ হলে চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে থাকেন।
স্লিপ অ্যাপনিয়া নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করার জন্য পলিসমনোগ্রাফি বা স্লিপ টেস্ট করানোর প্রয়োজন পড়ে। দেশেই এখন এই পরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে। এমনকি হোম-বেসড পলিসমনোগ্রাফির মাধ্যমে রোগী বাড়িতে থেকেই এই পরীক্ষা করাতে পারেন।
আজীবনের রোগ?
স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের ওপর। নাক, কান ও গলার কোনো গঠনগত ত্রুটি থেকে থাকলে সেটির পুনর্গঠনমূলক অস্ত্রোপচার (রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি) করিয়ে নিলে স্লিপ অ্যাপনিয়া সেরে যায়। আবার স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়ে থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে এগুলো ছাড়া অন্য কারণে স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়ে থাকলে এটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয় না, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সি-প্যাপ নামের যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় (যেমন রাতে ঘুমের সময় কিংবা দিনের বেলা বেশ খানিকটা সময়) এ যন্ত্রটি লাগিয়ে রাখতে হয়, যা ঘুমের সময় রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এতে রোগের লক্ষণগুলো কমে আসে এবং রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। সারা জীবন যন্ত্রটি ব্যবহার করতে হবে বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি চিকিৎসাব্যবস্থা মাত্র, যা রোগীর জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।