ঢাকা | ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪ - ১২:১২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কারা ২০২৪ সাল হতে পারেন?

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Saturday, January 2, 2021 - 10:29 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 77 বার

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুধীজনেরা সবসময়ই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে যারা জয়ী হয়েছেন তাদের মধ্যে কারা ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়েও তাদের ভাবনার কমতি নেই। বিশ্লেষকদের মতে যারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন আগামী চার বছরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট এই দুটি বড় দলের কর্মকাণ্ডে তাদের ব্যাপক ভূমিকা দেখা যাবে । দল ও সরকার পরিচালনায় দক্ষতা প্রমাণের জন্য তারা এখন থেকেই প্রস্তুতি নেবেন। 

এখন ২০২০ সাল শেষ এবং ২০২১ সালের শুরু। বড় দুটি রাজনৈতিক দলেরই দুজন প্রেসিডেন্ট আছেন। একজন বিদায়ী, আরেকজন নবনির্বাচিত। দুই প্রেসিডেন্টেরই অনুগত ও ঘনিষ্ঠ দুজন ভাইস প্রেসিডেন্টও আছেন। তারা আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার সম্মুখ সারিতে রয়েছেন। তবে প্রাইমারিতে অবশ্য বিজয় লাভ করতে হবে তাদেরও। দুই দলেরই আছে দক্ষ গভর্নর, সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান। দলের প্রয়োজনে তারা যেকোনো সময় যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন।

তবে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারা হবেন প্রার্থী- এ নিয়ে এখন কথা বলাটা খুব বেশি আগাম হয়ে যায়। বর্তমান এ ধারণার ব্যাপক ব্যত্যয়ও ঘটতে পারে। তবুও বলতে হয় ২০২০ সালের টালমাটাল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উত্তাপ প্রায় শেষ। এখন ২০২৪ সালে কারা হবেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, কাদের অবস্থান ভালো এবং আগামী দিনে কি দেখা যেতে পারে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত তুলে ধরেছেন।

সংক্ষিপ্ত আকারে তাদের ধারণা তুলে ধরা হলো :

জো বাইডেন : নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হলেও আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে তিনি প্রতিযোগিতা করবেন তা নিয়ে বাইডেন কখনো কোনো কথা বলেননি। অনেকেরই ধারণা তিনি পুনর্নির্বাচন করবেন না। কারণ ২০২৪ সালে তার বয়স হবে ৮২ বছর। এ কারণে তিনি এক মেয়াদেই দায়িত্ব পালন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন। তবে আগামী চার বছর জো বাইডেনকে রিপাবলিকানদের রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প : এবারের নির্বাচনে হারলেও মার্জিন ছিল খুবই কম। তিনি পেয়েছেন ৭৪ মিলিয়ন ভোট। আগে কোনো প্রেসিডেন্টপ্রার্থী এত বিপুল সংখ্যক ভোট পাননি। শুধু তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন এবার তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। ছযটি ব্যাটেলগ্রাউন্ড-আরিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও ওয়াশিংটন স্টেটের প্রতিটিতে তিনি হেরেছেন। তবে ভোটের ব্যবধান ৩ শতাংশেরও কম। আর একটু ভালো করলেই তিনি আবার জিতে যেতে পারতেন। তাই কট্টরপন্থী রিপাবলিকানদের সমর্থনে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারেন এমনটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প যদি সত্যি প্রার্থী হতে চান তাহলে তিনি দলীয় কাজে বরাবরই সম্পৃক্ত থাকবেন।

মাইক পেন্স : ভাইস প্রেসিডেন্ট বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারিতে জয় লাভ করে থাকে। সাধারণত ভাইস প্রেসিডেন্টরাই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অনুরুপ আল গোর, জর্জ হারবার্ট ওয়াকার বুশ, ওয়াল্টার মন্ডাল, হুবার্ট হামফ্রে ও রিচার্ড নিক্সনও ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তারা পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পেয়েছিলেন। বলা যায় একই ধারায় মাইক পেন্স আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকার দলীয় প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হবেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হওয়ার জন্য গো ধরেই থাকেন তাহলে মাইক পেন্স আবার জিওপির ফ্রন্টরানারই থাকবেন।

কমলা হ্যারিস : কমলা হ্যারিস খুবই সৌভাগ্যবতী। বাইডেন আগামীবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী না হলে কমলাই হবেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্টপ্রার্থী। আর এ ক্ষেত্রে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তিনি তেমনটাই প্রস্তুতি নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিক্কি হ্যালি এবং টিম স্কট : সাউথ ক্যারোলাইনার দুই বাসিন্দা সাবেক গভর্নর এবং জাতিসংঘে ট্রাম্পের রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি ও সিনেটর টিম স্কটও রিপাবলিকান দল থেকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন। তারা ইতিমধ্যে বাইডেনের ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট থেকে বিজয় লাভ করে রিপাবলিকানদের ভিত আরও মজবুত করেছেন এবং রিপাবলিকান সমর্থকদের আস্থা অর্জন করেছেন। দুজনই পরিশীলিত বক্তব্যের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন। হ্যালির বাবা-মা ভারত থেকে অভিবাসিত হন। আর স্কট মার্কিন সিনেটে একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকান।

ল্যারি হোগান, ক্রিস ক্রিস্টি এবং বেন সাসি : ম্যারিল্যান্ড গভর্নর ল্যারি হোগান, নিউজার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি ও নেব্রাস্কার সিনেটর বেন সাসি তাদের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জন্য রিপাবলিকান দলে বেশ শক্ত ভিত গড়েছেন। তারা ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারনে।

এ ছাড়া ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও, জস হাউলি, টেড ক্রুজ, টম কটন ও রিক স্কটের ভোটারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। নিজ নিজ অবস্থানে তারা বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। তারাও ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন।

আছেন রিপাবলিকান অধ্যুষিত রেড স্টেট গভর্নর সাউথ ডাকোটার ক্রিস্টি নোয়েম, ফ্লোরিডার রন ডিসান্টিস ও টেক্সাসের গ্রেগ অ্যাবোট। আর ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত বিগ ব্লু গভর্নর নিউইয়র্কের অ্যান্ড্রু কুমো ও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। এমনকি ডেমোক্র্যাট বার্নি স্যান্ডার্সের উত্তরাধিকারী কংগ্রেসউইমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্টেজের নামও উঠে এসেছে এই তালিকায়। জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব ‘দ্য প্রাইম-টাইম ফক্স নিউজের হোস্ট রিপাবলিকান টুকার কার্লসনের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

আছেন আলোচিত ব্যবসায়ী মাইক লিন্ডেল। যিনি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় রিপাবলিকান ব্যবসায়ী। মাইপিলোর সিইও মাইক লিন্ডেল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিজয় উল্টে দেয়ার জন্য এখনো মরিয়া। ট্রাম্পের পক্ষে ‘স্টপ দ্য স্টিল’ র‌্যালি এবং আইনী লড়াইয়ের জন্য এক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। গত ১৯ ডিসেম্বর এক টুইটে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সাতটি সুইয়িং স্টেটে সামরিক আইন বলবৎ করার এবং সেখানকার ভোটিং মেশিনগুলো জব্দ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। অবশ্য পরে তিনি এই টুইট ডিলিট করে দেন।

দলের প্রতি তার চরম আনুগত্য দেখে মানুষ এখন খোলাখুলিভাবেই ২০২২ সালে মিনেসোটার গভর্নর প্রার্থী হিসেবে তাকে বিবেচনা করছে। ওই নির্বাচনে তিনি হারেন কিংবা জিতেন তাতে কিছু আসে যায় না। ট্রাম্প এবং পেন্স প্রার্থী না হলে তিনি যে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এমনটাই পরিষ্কার।

শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্পই কোনো পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন না করে সরাসরি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সেলিব্রেটি ব্যবসায়ী নন। তার আগে ১৯১২ সালে সাবেক গডফাদারস পিজা সিইও হারমান কেইন, ১৯৪০ সালে ইউটিলিটি এক্সিকিউটিভ ওয়েনডেল উইলকি এবং ১৯৯৬ ও ২০০০ সালে ম্যাগাজিন পাবলিশার স্টিভ ফোর্বসও রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রাইমারিতে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।