বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে-তুর্কি রাষ্ট্রদূত
মোঃ শহিদুল ইসলাম (শহীদ) সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান গতকাল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের চেম্বার কার্যালয়ে দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমের সঙ্গে এক মতবিনিময় করেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
মতবিনিময়কালে চেম্বার পরিচালক ও তুরস্কের অনারারি কনসাল জেনারেল সালাহ্উদ্দীন কাসেম খান, চেম্বার পরিচালক মো. জহুরুল আলম, অঞ্জন শেখর দাশ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, মো. আবদুল মান্নান সোহেল, মো. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ও তাজমীম মোস্তফা চৌধুরীসহ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব গাইজেম আয়দিন এরদেম ও কমার্শিয়াল কাউন্সিলর কেনান কালাইছি উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনাকালে পরিস্থিতিতে সমগ্র বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে, তখন বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল উল্লেখযোগ্য; যা অন্যান্য দেশ থেকে এদেশকে আলাদা করেছে। সম্প্রতি ঢাকা এবং আঙ্কারায় দু’দেশের নতুন দূতাবাস নির্মাণ পারস্পরিক সম্পর্কে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উšে§াচনের ইঙ্গিত প্রদান করছে। তাই তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির বিষয়টি অধিক প্রাধান্য পেতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনলাইন বিটুবি সভা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি ওই বিটুবি সভায় অংশগ্রহণের জন্য চিটাগাং চেম্বারকে আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত চট্টগ্রামে তুরস্কের এলপিজি প্রতিষ্ঠান অ্যাইগ্যাজ ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে উল্লেখ করে একটি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানান। এক্ষেত্রে তিনি চিটাগাং চেম্বারের সার্বিক সহায়তা কামনা করেন। এছাড়া চেম্বার কর্তৃক আয়োজিত চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় পার্টনার কান্ট্রি হিসেবে অংশগ্রহণে তুরস্কের আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার আরও সদ্ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের দুই বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রাকে আমরা স্বাগত জানাই। এক্ষেত্রে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রণোদনা কাজে লাগিয়ে তুরস্কের ব্যবসায়ীরা মিরসরাইসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে। উভয় দেশের মধ্যে পিটিএ স্বাক্ষর হলে তা শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। চেম্বার সভাপতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সফরকালে তুর্কি প্রেসিডেন্টকে চট্টগ্রাম ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান। উভয় দেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগে একটি ১০ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করেন মাহবুবুল আলম।
সালাহ্উদ্দীন কাসেম খান প্রায় ৫০০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে তুরস্কে জাহাজ রপ্তানি করা হয়Ñউল্লেখ করে সেই ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে যৌথ বিনিয়োগ কামনা করেন। অঞ্জন শেখর দাশ রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ এবং তুর্কির বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে বাংলাদেশে পরিচিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন উভয় দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি, প্রযুক্তি ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর চট্টগ্রামে তুর্কি ভাষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন এবং বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্সের সঙ্গে তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণের অনুরোধ জানান।
মতবিনিময় শেষে রাষ্ট্রদূত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পারমানেন্ট এঙবিশন হল পরিদর্শন করেন।