করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে “বড়ুয়া বৌদ্ধদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে প্যারিসে”
হাকিকুল ইসলাম খোকন সিনিয়র সংবাদদাতা : “চলো চলো প্যারিস চলো” এই স্লোগান সামনে রেখে,করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পর পরইবাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংগালী (বড়ুয়া) বৌদ্ধদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে। গত ১০ই জানুয়ারি এ বিষয়ে প্রথম একটি আন্তর্জাতিক ভার্চ্যুয়াল (জুম্ মিটিং) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, সুজারল্যান্ড, ইতালি, এবংযুক্তরাষ্ট্র থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য কয়েক জন বড়ুয়া বৌদ্ধ নেতা অংশ গ্রহণ করেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাঙ্গালী বৌদ্ধদের আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের গুরুত্ব এবং বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমেঃ অধ্যাপক ডঃ বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, অধ্যাপক দীপানন্দ ভিক্ষু, মানবাধিকার নেতা উদয়ন বড়ুয়া ও অরুন বড়ুয়া, ইঞ্জিনিয়ার সুমেধ তাপস বড়ুয়া, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ নেতা রণবীর বড়ুয়া। ভার্চ্যুয়াল সভার সঞ্চালক ছিলেন বোষ্টনের সুহাস বড়ুয়া।বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বাংগালী বৌদ্ধরা সংখ্যা লঘু তকমা পেলেও বাংলাদেশই হলো বাংগালী বৌদ্ধদের আদি এবং একমাত্র দেশ, যেখানে রয়েছে বৌদ্ধদের আড়াই হাজার বছরের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। বাংলাদেশ নামক এই স্বাধীন ভূখণ্ডে প্রথম বৌদ্ধ রাজা বিম্বিসার থেকে শুরু করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান দেশ শাসনে বাংলার বৌদ্ধরাও দেশ ও জাতির সেবায় সদা সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বুদ্ধের বাণী অনুশরন করে বাংলাদেশ নামক এই দেশটির মানুষ আড়াই হাজার বছর আগে থেকে জাত, বংশ, বর্ন, পেশা ইত্যাদি ভুলে গিয়ে ক্রমশ একটি বৈষম্যহীন সংঘবদ্ধ জাতি হিসাবে আত্ম প্রকাশ করতে থাকে।
৭৫০ইং সনে দেশের এক ক্রান্তিকালে প্রাচীন বাংলার জনগণবাংলার বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে সম্ভ্রান্ত বৌদ্ধপাল বংশের গোপাল পালকে গনতান্ত্রিক ভাবে রাজা নির্বাচিত করে দেশ শাসনের দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। বাংগালী বৌদ্ধ রাজা গোপাল থেকে পাল বংশের ৪০০ (চার শত) বৎসরের স্বর্ণালী শাসন কালে তাঁরা প্রোটো-বাংলা ভাষা ও লিপি এবং প্রাথমিক বাংলা সাহিত্যের বিকাশের জন্য বাংলার ইতিহাসে তাঁদের অবদান অমর হয়ে আছে। পাল রাজারা প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক সীমানার বাইরে কখন অন্যদেশ দখল করেনি এবং জনগণকে জাত, কুল,বংশ ভেদাভেদ হীন, বৈষম্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা উপহার দিয়েছিলেন। শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সমগ্র দেশে মহাবিহার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে একটি স্বতন্ত্র এবং মেধাবী জাতী স্বত্বা গড়ে তোলেন, যা সমগ্র এশিয়া এবং ইউরোপের মানুষকে জ্ঞান-শিক্ষায় জাগিয়ে তোলে।
দুর্ভাগ্য ধর্মান্ধ অবাঙালি এবং বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনে প্রাচীন বাংলার হাজার বছরের শিক্ষা-সভ্যতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরি, বই -পুস্তক, হাজার বছরের টেকসই নান্দনিক সকল স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। তাঁরা তৎকালীন পৃথিবী বিখ্যাত বৌদ্ধ শিক্ষক এবং সাধকদের হত্যা করে পাল রাজাদের গড়ে তোলা পূর্ণাঙ্গ সুসভ্য একটি জাতিসত্বাকে অস্তিত্বহীন করে ফেলে। পরবর্তীতে একের পর এক বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের দখলভুক্ত হয়ে প্রাচীন বাংলার জনগণ বিদেশী ভাষায় ধর্ম শিক্ষার নামে ক্রমাগত নিরক্ষর ও মেধাহীন জাতিতে পরিণত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই হাজার বছরের বাংগালী জাতিকে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ত্ব দিয়ে আবারো সমৃদ্ধ জাতি হওয়ার সুযোগ করে দেন। বক্তারা বলেন, প্যারিস সম্মেলনে বাংলাদেশের আদি বাঙালি বৌদ্ধদের হাজার বছরের কালজয়ী ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং বর্তমান আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরা হবে। প্যারিস সম্মেলনে বড়ুয়া বৌদ্ধ তথা বাংগালী বৌদ্ধসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয়, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় নেতা, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী,কুটনীতিক, ইতিহাসবিদ, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি ও সর্বাত্তক সফল করার জন্য সকল বড়ুয়া বৌদ্ধ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণের সাথে ধারাবাহিক ভার্চ্যুয়াল সভা চলমান থাকবে।