‘আরও একটি শোকবার্তা ও কিছু স্মৃতি’
এবিএম সালেহ উদ্দীন : আশাছিল তিনি ফিরে আসবেন । বড়রকমের কোন জটিল রোগও ছিল না । রাতের নামাজও পড়েছিলেন । ভাবী এবং তার কন্যা বীনা রাতে অনেক্ষণ তার কাছে থেকে, খাইয়ে,কথা বলে বাসায় চলে এলেন । এমন পরিস্থিতি (!)হাসপাতালে আগের মত রোগীর পাশে থাকার সুযোগ নেই ।
ভাবী বললেন, কী হলো, ভাই ? সোমবার সকালে রিলিজ হয়ে ঘরে ফিরে আসার কথা । কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তিনি ফিরে আসলেন না । পাঁচদিন আগে তিনি বুকে সামান্য ব্যথা এবং ইউরিন সংক্রান্ত সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন । বর্ষীয়ান সজ্জন ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন বিনয়ী মানুষটির নাম আলহাজ লেখক নুরুল ইসলাম । রবিবার দিবাগত ১১ জানুয়ারি ২০২১ ভোররাতে ডাক্তারের ভাষ্যমতে হার্টএটাক্ট করে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরকালের জন্য চলে গেলেন ।
ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন । আমার সহধর্মিনী রেজভীন প্রায় প্রতিদিনই ভাবীর সঙ্গে (ইসলামভাই’র সহধর্মিনী ),যোগাযোগ রেখে খবর নিতেন । বয়সগত কারণে স্মরণশক্তি লোপ পাইলেও মুহুর্তেই চিনে ফেলতেন । ক’দিন আগেও কথা হয়েছে । দু:খজনক,হৃদয় বিদারক এবং অনাকাঙ্খিত !
সকালবেলায় অপ্রত্যাশিত খবরটি শুনে হৃদয়টা ভেঙে গ্যাছে । আমি স্তম্ভিত হতচ্যুত হয়ে গেছি । এমন প্রাণবন্ত হাস্যময় মানুষটি কেউকে না জানিয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে শেষ পর্যন্ত যাবেন(?)ভাবতেই শিউড়ে উঠি । মানুষ ত এমনই যখন চলে যায় ;কতজনের বুকে কত বিমুগ্ধ স্মৃতির পাহাড় চাপিয়ে মহাপ্রয়াণ ঘটে ! কত বিরল ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যায় । ইসলামভাই’র সাথে আমার স্মৃতির শেষ নেই । লেখকসূত্রে বহুদিন পূর্বে, ঢাকার একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তারসঙ্গে পরিচয় । তারপর থেকেই আত্মার সাথে সম্পৃক্ত । ইসলাম ভাই’র কারণেই ২৫ বছর আগে শিশু দুই ছেলে ও আমার সহধর্মিনী সাঈদা আখতার রেজভীনকে নিয়ে নিউইয়র্কের আত্মীয় ও বন্ধুসহ কয়েকটি আপন পরিবার থাকার পরও কারো বোঝা না হওয়ার শর্তে প্রাণপ্রিয় বাবার নির্দেশে নিউইয়র্ক আসার আগেই ম্যানহাটনে ইসলাম ভাই’র বাসার কাছাকাছি একটি এপার্টম্যান্ট
(647 Accademy st, Manhattan,NY 10034.)
ভাড়া করিয়েছিলাম । ইসলাম ভাই বাসা কনফার্ম্ড করার পর সেই যে নিউইয়র্ক আমাদের আগমন । সবকিছুই করেছেন ইসলামভাই । তারপর থেকে ক্রমে ক্রমে স্মৃতির পাহাড় গড়ে ওঠেছে ।
তার অনেক আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও গুণগ্রাহী নিউইয়র্ক,নিউজার্জিসহ আমেরিকায় ছড়িয়ে আছেন ।
কতটা বিমর্ষকাতর ও বেদনাহত হয়েছি এবং কষ্ট পেয়েছি তা বুঝানোর ভাষা জানা নেই । আহ! কাছাকাছি থাকলে বারবার ছুটে যেতে পারতাম । যেমনটি আমাদের উভয়ের হতো ম্যানহাটন থাকাকালীন সময়গুলোতে । কাল মঙ্গলবার ১২জানুয়ারি নিউজার্সির প্যাটারসন জামে মসজিদে বাদজহুর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে ।
Address:
61 Van Houten Ave Paterson, NJ 07505
Asalamualaikum. Janazah will be held tomorrow at 1 pm in the Islamic Foundation of NJ – Masjid Jalalabad 61 Van Houten Ave Paterson, NJ 07505.
Burial will be at 2 o’clock at Laurel Grove Cemetery 295 Totowa Rd, Totowa, NJ 07512.
তার রেখে যাওয়া পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি ।
আমি ম্যানহাটনে বিশ বছর ছিলাম । কয়েক বছর আগে ইসলামভাই (৪০ বছর নিউইয়র্ক থাকার পর ) নিউজার্সী বাড়ি কিনে চলে যান । আমাকেও তিনি সেখানে বাড়ি কিনে চলে যাওয়ার জন্য বলতেন । নিউইয়র্কের কাছে হেরে গিয়েছি । ইসলাম ভাই’র এই কথাটি রাখতে পারিনি !
বহুবার তাঁর বাসায় এবং আমার বাসায় যাতায়াত ঘটেছে । অনেক স্মৃতি । তার লেখা সবগুলো বই ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আমাদের প্রকাশনা সংস্থা ‘বাড পাবলিকেশন্স’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ।
আমাকে সালেহ ভাই সম্বোধনের অযুত কন্ঠধ্বনি এখন কেন জানি শুধু প্রতিধ্বনিত হয় । আহ! সিনিয়র হয়েও এত সমীহবোধ ! আমার এবং আমার পরিবারের স্মৃতিকাননেও একাকার হয়ে মিশে আছেন প্রিয় ইসলামভাই ।
সত্যিই, তিনি একজন উত্তম চরিত্রের বিনয়াবনত সমাজ ও মানবিক সচেতন ভালো মানুষ । আমার জানা মতে ,কম্যুনিটিতে তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন । এই কম্যুনিটি’র স্বনামধন্য বিশিষ্টজন প্রিয় মানুষ লেখক ইসলাম ভাই ।
একজন ভালো মানুষ । এই সহজ ও সরলভাবে জীবনযাপনকারী সদা হাস্যজ্জ্বল মানুষটি কিভাবে সবার সাথে এত আপনরূপে মিশে গিয়েছিলেন , যা কখনো বিস্মৃত হওয়ার নয় । তিনি চির বিদায়ের মধ্যদিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে, মৃত্যু হচ্ছে মহাজীবনের মহাযাত্রা ।
আপাতত: এখানে সকলের কাছে আমার একান্ত
অনুরোধ । আসুন আমরা এই মহৎ মানুষটির জন্য দোয়া করি । মহান আল্লাহপাক ইসলাম ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন । আমীন ।।।