সৌদি বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ কী
দেশের যেসব প্রকল্পে বিনিয়োগে সৌদি আরব সম্মত হয়েছিল, তার মধ্যে দু-একটি ছাড়া বাকিগুলোয় বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। ঠিক কী কারণে সৌদি আরবের বড় এই বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না, তা জানতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে এ মাসেই চিঠি দিচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি খাতে মোট ২৫টি প্রকল্পে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ব্যাপারে সৌদি আরবের সঙ্গে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। গত বছরের ৮ মার্চ ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুই দেশের নীতিনির্ধারকেরা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী পৌনে দুই বছর ধরে সৌদি বিনিয়োগ প্রস্তাব শুধু প্রক্রিয়ার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিডার কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দেশেরই প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে অগ্রগতি নেই। যেমন একবার বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে যাচ্ছে তো সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদল এ দেশে আসছে। যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সৌদি আরবের জন্য অর্থনৈতিকভাবে কতটা লাভজনক, তা নিয়ে এখনো হিসাব-নিকাশ চলছে। শুল্কমুক্ত সুবিধা ও সরাসরি পদ্ধতির দরপত্র প্রক্রিয়া (ডিপিএম) নিয়েও জটিলতা আছে। জমি অধিগ্রহণ নিয়েও সমস্যা আছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাব।
এদিকে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ এবং একক দেশ হিসেবে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায় বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। তারা নিজেদের কারখানাগুলো চীন থেকে অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কিন্তু তাদের কাউকেই বাগে আনতে পারছে না বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বিডার কর্মকর্তারা বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন। সেগুলো হচ্ছে চীন থেকে বেরিয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলোকে ধরতে বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেসব প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল, তার চেয়ে বড় বা আকর্ষণীয় প্রস্তাব বাংলাদেশ দিতে পারেনি। বাংলাদেশের প্রণোদনার বিষয়টিও ছিল আলোচনার মধ্যেই। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চীনের কয়েক দফা আলোচনাও হয়ে গেছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে সৌদি আরবের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। তবে বিনিয়োগের বিষয়ে দেশটির আগ্রহ আছে। আমরা লেগে আছি দেশটির বিনিয়োগ কাজে লাগানোর জন্য।’ চীন থেকে কেউ বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তর করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, চীন থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত হয়নি।
‘এটা ঠিক যে সৌদি আরবের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। তবে বিনিয়োগের বিষয়ে দেশটির আগ্রহ আছে। আমরা লেগে আছি দেশটির বিনিয়োগ কাজে লাগানোর জন্য।
সিরাজুল ইসলাম , বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান
বিডা থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, লালমনিরহাটে উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের যৌথ সম্মতিতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পে ৭০ কোটি থেকে ১০০ কোটি ডলার পর্যন্ত অর্থায়নের কথা সৌদি আরবের। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং সৌদি আরবের আল সালাম অ্যারোস্পেসের যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা। বিডার কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল আল সালাম অ্যারোস্পেস কোম্পানির কারখানা পরিদর্শন করে এসেছে। অন্যদিকে আল সালামের একটি প্রতিনিধিদলও ঢাকায় বিমানবাহিনী কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রকল্পটির অগ্রগতি বলতে এটুকুই। গত ২৯ এপ্রিল বিডা থেকে বিমানবাহিনী কল্যাণ ট্রাস্টকে ঝুলে থাকা বিষয়ের দ্রুত সমাধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।