চরফ্যাশনে মধুমতি ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
এম, নোমান চৌধুরী চরফ্যাশন(ভোলা) প্রতিনিধি : চরফ্যাসন মধুমতি ব্যাংক শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক রেজাউল কবিরের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ১৪ জানুয়ারি বর্তমান ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইয়াসিন উদ্দিন সোহেল চরফ্যাসন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মধুমতি ব্যাংক চরফ্যাসন শাখা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্নসাৎ কারী রেজাউল কবির তার অপকর্ম আড়াল করতে গত বুধবার ভোলা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলন তিনি নিজেকে রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টায় অন্যদের ওপর কাল্পনিক ও অবাস্তব দায় চাপানোর কৌশলে লিপ্ত হন।
জানা যায়, চরফ্যাসন থানায় সাধারণ ডায়েরির পর দুর্নীতিবাজ টাকা আত্মসাৎকারী সাবেক ম্যানেজার রেজাউল সংবাদ সম্মেলনে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দৈনিক ৫/৬ কোটি টাকা নিয়ে যাওয়ার উদ্ভট অভিযোগ করেন।
অথচ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সাবেক ম্যানেজার রেজাউল কবির প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভোলার গুইংঘার হাটে একটি গরুর খামারসহ প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এছাড়া তিনি ব্যাংকের টাকা তসরূপ করে জেলা সদরের অনেক প্রভাবশালীদের কাছে সুদের ওপর টাকা লগনি করেছেন। তার এক ভগ্নিপতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি। তার সহযোগিতায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে দূরভিসন্ধিমূলক সংবাদ সম্মেলন করার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন বলে অনেকে জানিয়েছেন।
মধুমতি ব্যাংক চরফ্যাসন শাখা সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের ভোল্টে টাকা রাখার অনুমোদিত লিমিট মাত্র ১ কোটি টাকা। তাছাড়া বিধি বহির্ভূত কোন টাকা কাউকে দেয়ার এখতিয়ার কোন ব্যাংক কর্মকর্তার নেই। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে যে ক’জন গ্রাহকের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন তাদের কারোই ওই ব্যাংকের শাখায় কোন লোন অ্যাকাউন্ট নেই। ব্যাংক একটি সুরক্ষিত ও বিধিবদ্ধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকে টাকা দুইভাবে আত্মসাৎ করা যায়। এক- কোন গ্রাহক লোন নিয়ে তা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করা, দুই- ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ করা। এর বাইরে অন্য কারও বা সাধারণ কোন গ্রাহকের পক্ষে টাকা আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই। কোন ব্যাংকে ৫ হাজার টাকার অনিয়ম হলেও তা ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর বর্তায়।
মধুমতি ব্যাংক চরফ্যাসন শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. ইয়াসিন উদ্দিন সোহেল জানান, ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অডিট টিমের নজরে আসার পর গত রোববার সাবেক ম্যানেজার রেজাউল কবিরের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সমঝোতা করতে তার কাছে আত্মীয় একজন ভোলার সাংবাদিকসহ তার কিছু স্বজন দু’দফা ব্যাংকের শাখায় এসেছিলেন। তাদের স্বজনরা টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত আছে এমন সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চরফ্যাসন থানায় ৭ জনকে আটক করা হয়েছিল। বিষয়টি হেড অফিসকে জানানো হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা তারাই নিবেন। অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
চরফ্যাসন থানার ওসি মো. মনির হোসেন মিয়া জানান, নতুন পাস হওয়া আইন অনুযায়ী টাকা আত্মসাতের মামলা গ্রহণের এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের। এ ব্যাপারে ব্যাংকের নতুন ম্যানেজার জানান, ইতোমধ্যে বরিশালের দুদক কার্যালয়ে সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক রেজাউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শুরু হবে।