ইউএনও’র চেষ্টায় বদলে যাচ্ছে তারাকান্দার প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র
ষ্টাফ রিপোর্টারঃএকজন ইউএনও’র চেষ্টায় বদলে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজাবে রহমত এর উদ্যোগে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ার হার রোধ হচ্ছে।
বদলে যাচ্ছে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র। তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজাবে রহমত প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন সাধন করে সকল মহলে নজর কেড়েছেন। সরকারি এই কর্মকর্তা তারাকান্দায় যোগদানের পরপরই সকল সুধীজন ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেন। এর অংশ হিসেবে শিক্ষকদের মাসিক সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ তাদের কার্যক্রম, ইনোভেশন ও শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে দিক নির্দেশনা দেন। তিনি পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সে শিক্ষকদের পারদর্শিতা ও সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত মনিটরিং করেন। এছাড়াও আকস্মিক স্কুল পরিদর্শন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার পর্যবেক্ষণ ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে পাঠদানের পরামর্শ দেন।
সম্প্রতি তার উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়া রোধকল্পে ও জরাজীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর সংস্কারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে উঠোন বৈঠকের কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইউএনওর ব্যক্তিগত অর্থায়নে বিভিন্ন স্কুলের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ, শিক্ষা উপকরণ, টিফিন বক্স বিতরণ করছেন। ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝে আইসিটির দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য করছেন কর্মশালা।
‘আওয়ার ফউচার’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পান। এ আয়োজনে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও সুন্দর জীবন গঠনে সহায়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়াও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পঠন ও লিখন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সুন্দর হাতের লেখা, ‘ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড’ ও সাবলীলভাবে পঠন দক্ষতা যাচাই প্রতিযোগিতা ব্যবস্থা নিয়েছে। এ সব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃজনশীল ও সুন্দর হাতের লেখা, শব্দ ও বাক্যের গঠন এবং ভাষা প্রয়োগের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের জন্য বেঞ্চ উপহার,খেলাধুলার জন্য মাঠ সংস্কারসহ সার্বিক কর্মকান্ডসহ প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে যুগান্তকারী নানামূখি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন: ইউএনও মিজাবে রহমত।
ঘোষণা, প্রতিশ্রুতি, চুক্তি এবং বাস্তবায়ন প্রতিটি শব্দ ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। মানুষ প্রতিনিয়ত নানামূখি প্রতিশ্রুতির কথা শোনে কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না, সেই অপেক্ষায় থাকে মানুষ। তবে ইউএনও মিজাবে রহমত প্রতিশ্রুতি দিলে অপেক্ষা করতে হয়না,সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন করেন তিনি।
শিক্ষার মানোন্নয়নে উপজেলাধীন প্রতিটি বিদ্যালয়ের নিয়মিত সার্বিক খোঁজ নিয়ে যতধরনের সমস্যা আছে প্রতিটি সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করছেন তারাকান্দা-ফুলপুরের জাতীয় জাতীয় সংসদ সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ইউএনও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় খুশী তারাকান্দার শিক্ষার্থীরা।
উপজেলার গালাগাও ইউনিয়নের বহেরাকান্দি নব-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কোন ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দেখেন বিদ্যালয়ের পুরাতন একটি টিনসেড গৃহ থাকলেও অবস্থা নাজেহাল। পুরাতন শ্রেনিকক্ষের গৃহটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ইউএনও মিজাবে রহমত।
এ কাজটি ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন তহবিল দ্বারা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান তালুকদারের প্রতি তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজাবে রহমত জানান, এসকল কর্মকাণ্ড সফল করতে সরকারী বরাদ্দের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে করা হয়।
ইউএনও মিজাবে রহমত বলেন, ‘এ সকল গৃহীত উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৪ নম্বর লক্ষ্য, ‘মানসম্মত শিক্ষা’, ও পরোক্ষভাবে অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করছে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ইউএনওর অবদান নিয়ে উপজেলার কয়েকজন শিক্ষক জানান, তারাকান্দা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। তার ওই সকল কার্যক্রম চলতে থাকলে শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।