মু,হেলাল আহম্মেদ(রিপন)পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি: মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও নেই দু’বেলা দুমুঠো খাবারের নিশ্চয়তা। পরিবারের উপার্জনক্ষম কোনো সদস্য না থাকায় অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটছে এক অসহায় পরিবারের। এর উপরে আছে প্রতিমাসে কয়েক হাজার টাকার ঔষধের বোঝা। এমনই মানবেতর জীবনযাপন করছে পটুয়াখালীর বাউফলে আসলাম হাওলাদার নামের এক যুবকের পরিবার।
স্থানীয় ও আসলামের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আ. জলিল হাওলাদারের একমাত্র ছেলে আসলাম হাওলাদার (২৮)। বছর কয়েক আগেও ভালো ভাবেই চলছিল আসলামদের পরিবার।
২০১২ সালে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে এইচএসসি দেয়া আসলামের জীবন হঠাৎ আকস্মিক ঝড়ে সব এলোমেলো হয়ে যায়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নিজ বাড়িতে গাছের ডাল কাটতে যেয়ে গাছ থেকে পড়ে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে যায় আসলামের। প্রথমে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে সেখান থেকে বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বরিশালে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকা ক্রিসেন্ট পপুলার হাসপাতালে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিয়ে ও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি আসলাম। সেই থেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে বেঁচে আছে আসলাম। অন্য দিকে আসলামের বয়োবৃদ্ধ বাবা জলিল হাওলাদার এপর্যন্ত ৩বার ব্রেইন স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী।
প্রতিবেশী ও স্বজনদের সহায়তায় ১টি গরু পালন করে কোন ভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলেন আসলামের মা তাছলিমা বেগম। কিন্তু বিপদ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না পরিবারটির। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বাচ্চা প্রসবের সময় বাচ্চা সহ গরুটি মারা যায়। অসহায় পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবারটি।
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে কান্না বিজারিত কন্ঠে আসলামের বাবা আ. জলিল হাওলাদার বলেন, আমার পঙ্গু ছেলেকে নিয়ে কিভাবে বাচঁবো? আমি সরকারের কাছে সাহযোগিতা কামনা করছি।
প্রতিবেশী মনির হাওলাদার বলেন, জলিল ভাই অসুস্থ মানুষ তার ছেলেটাও পঙ্গু। তাদের কোন আয় রোজগার নাই। সরকারি সহযোগিতা পেলে সে হয়তো বেঁচে থাকতে পারবে।
অপর প্রতিবেশী লিটন হাওলাদার বলেন, অনুদান পাওয়া ১টি গরুর দুধ বিক্রি করে পরিবারটি চলতো কিন্তু আজকে গরুটি মারা যাওয়ায় তারা খুব অসহায় হয়ে গেছে। সরকারি কোন আর্থিক সহযোগিতা পেলে পরিবারটির উপকার হবে।
দৈনিক. আনন্দ বাজার পত্রিকার মাধ্যমে সমাজের বিত্তবান মানুষ ও সরকারের মানবিক সহায়তা চেয়ে আসলাম বলেন, আমাদের সংসারে হাল ধরার কেউ নাই। ঔষধ খেতে পারি না, খাবারেও কষ্ট। আমার বাবা মাকে নিয়ে আমি বাঁচতে চাই।
এ বিষয় বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী আসলামের পরিবারকে ১টি গরু কিনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আনন্দ বাজারকে বলেন, প্রতিবন্ধি আসলামের পরিবারের যে কোন সহায়তা বাউফল উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের করা হবে।