সখীপু্রে মানব পাচারকারীর বিষ্ণু একাধিক যুবকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা
সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:টাঙ্গাইলের সখীপু্রের একাধিক যুবক মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে দিশেহারা। পৌর শহরের ৩ নং ওয়ার্ড আদিবাড়ি রোডের বাসিন্দা বিষ্ণু সাহার কাছে বিদেশে যাওয়ার টাকা দিয়েই নিঃস্ব হয়েছে ওই যুবকরা। ওই আদম ব্যবসায়ী বিষ্ণু সখীপুর পৌর শহরে বসবাস করলেও তার পৈতৃক ভিটা পার্শ্ববর্তী বাসাইল উপজেলার ডুমনিবাড়ি এলাকায়।
বলছিলাম উপজেলার দেওবাড়ি এলাকার শাহিন মিয়াসহ একাধিক যুবকের কথা। ইতিমধ্যে মূল মানব পাচারকারী বিষ্ণু সাহাসহ ভুক্তভোগীরা যাদের মাধ্যমে বিষ্ণুর সাথে একাধিকবার টাকা লেনদেন করেছে তাদের মোট পাঁচজনকে আসামী করে সাখীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শাহিন মিয়া ও অন্যান্যরা বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কারণ তারা আদম ব্যবসায়ী।প্রায় ২ বছর আগে সাখীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর দেওবাড়ী এলাকার আব্দুল জলিল মিয়ার ছেলে মো. শাহিন মিয়ার কাছ থেকে প্রধান অভিযুক্ত বিষ্ণু সাহা গ্রীস নেওয়ার কথা দিয়ে ৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা নেয়। শাহিনের এক বন্ধু একই উপজেলার কীর্তনখোলা ধুমখালীপাড়া এলাকার হাফিজ উদ্দিনের ছেলে রাসেল মিয়ার কাছ থেকেও নেন ১১ লক্ষ টাকা। রাসেল মিয়াকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে কাতারসহ বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে আরো ৬ লক্ষ টাকা খরচ করিয়ে বাংলাদেশে ফেরত আনেন। যাতে রাসেল মিয়া ১৭ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। রাসেল মিয়াকে বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে আনলেও হতভাগা শাহিনকে বিদেশ না নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিষ্ণুসহ অন্যা অভিযুক্তরা করছেন তালবাহানা। অভিযুক্তরা হলেন, বিষ্ণু সাহা (৩৮) , সুবিধ সাহা (৩৪), কৃষ্ণ সাহা (৪৮), তুলসী (৩৪) ও সুকুমার সাহা (৬০)।
অভিযোগকারী মো. শাহিন মিয়াসহ অন্যান্যদের সাথে কথা বললে এ বিষয়ে তারা জানান, আমরা বিদেশ গিয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মানব পাচারকারী বিষ্ণু আমাদের জীবনটাই শেষ করে দিল। আমরা বিভিন্নভাবে ধারদেনা, এনজিও থেকে লোন ও সুদের মাধ্যমে টাকা নিয়ে তাকে দিয়েছিলাম। এখন আমাদের সাথে দালাল বিষ্ণুর যোগাযোগের কোন উপায় নেই।
তারা আরো জানান, শাহিন এবং রাসেল ছাড়াও স্বপন কর্মকার ৩ লাখ ৫০ হাজার, সজিব ১ লাখ ৫০ হাজার ও শফিকুল ইসলাম বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে দালাল বিষ্ণুকে ৬ লাখ টাকা দিয়েছে। এভাবে সুখীপুর থেকে অনেকের টাকা নিয়ে দালাল বিষ্ণু সাহা এখন লাপাত্তা।
যদি আমাদের টাকা আমরা ফেরত না পাই তাহলে আমাদের মরা ছাড়া আর কোন পথ নাই। আমরা আমাদের টাকা ফেরত, চাই আমরা বাঁচতে চাই। সখীপুর উপজেলা প্রশাসন এবং সখীপুর থানার ওসি সাহেবের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি। আমরা বাঁচতে চাই। আপনাদের কাছে অনুরোধ দয়া করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করে আমাদের বাঁচার সুযোগ করে দিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বিষ্ণুর এক সহযোগীর মুঠোফোন নাম্বার দেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণকারী ওই ব্যক্তি সাইফুল ইসলাম।তিনি মুঠো ফোনে বলেন, আমি বিষ্ণুর কাছে টাকা পেতাম। বিষ্ণু আমাকে রাসেলের কাছ থেকে টাকা নিতে বলে। আমি আমার পাওনা টাকা নিয়েছি। বিদেশ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।
প্রধান অভিযুক্ত বিষ্ণুর চাচাতো ভাই আরেক অভিযুক্ত সুধিব সাহার বক্তব্যের জন্য তাকে খোঁজ করলে পাওয়া যায়নি। সুধিবের বাবা স্বপন সাহা বলেন এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা আর আমার ছেলে ঢাকায় চাকরি করে।
ভুক্তভোগীদের হাত থেকে একাধিকবার টাকা গ্রহণকারী অভিযুক্ত বিষ্ণুর ভাই আরেক অভিযুক্ত কৃষ্ণ সাহা বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। ইদানিং আমার কাছে বিভিন্ন ব্যক্তি টাকা পয়সা লেনদেন ও বিদেশ বিষয়ে বলেছে। কৃষ্ণর সাথেও আমার কোন যোগাযোগ নেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান অভিযুক্ত বিষ্ণুকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইল সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসাইন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।