কবি বিচিত্র কুমার এর “একগুচ্ছ কবিতা”
ধূসর প্রহরের গল্প
-বিচিত্র কুমার
জীবন এক চিরন্তন মায়ার খেলা,
বাঁশির সুরে ভেসে আসা সুখের মোহ,
কিন্তু বাতাসে মিলিয়ে যায় প্রতিটি স্বপ্ন।
সময় যেন এক অদৃশ্য কারিগর,
প্রতিটি মুহূর্তের সাথে গড়ে তোলে জীবনের সেতু,
কিন্তু সেই সেতু ভাঙে বৃষ্টির জলে,
মানুষের আকাঙ্ক্ষা পড়ে থাকে ভিজে পাতা হয়ে।
প্রত্যাশার পাহাড়ে চূড়া খোঁজে মানুষ,
তবু স্রোতের বিপরীতে হাঁটা কঠিন,
জীবনের গন্তব্য জানে না কেউ,
ধূসর প্রহরের গল্পে আঁকা আছে আমাদের পথ।
মাটির কাছাকাছি এসে বোঝা যায়—
সব পথই ফিরে যায় এক চিরকালীন শূন্যতায়।
২.
অস্থির নগরীর নৈঃশব্দ্য
-বিচিত্র কুমার
শহরের কোলাহলে হারিয়ে যায় কণ্ঠস্বর,
প্রত্যেক মুখ এক নীরব যাত্রা,
সম্পর্কের সূক্ষ্ম সুতো ছিঁড়ে যায় ক্ষুদ্রতম ঝড়ে।
নগরীর আকাশে জমা মেঘের মতো অস্থিরতা,
কিন্তু সেই মেঘ বৃষ্টিহীন, শুধুই অশ্রু ঝরায়।
চোখের সামনে ভেসে ওঠে মানুষের প্রতিচ্ছবি,
তবু সেগুলোও একেকটি ছায়া মাত্র।
নির্জন রাতের আঁধারে কেউ খুঁজে না কাউকে,
ঘুমন্ত রাস্তায় ছড়ানো থাকে শুকনো জীবনের কণা,
প্রত্যাশা মিশে যায় ধুলার সাথে।
অস্তিত্বের নিরবতা তখন আমাদের সবচেয়ে বড় সঙ্গী,
নগরীর সেই নৈঃশব্দ্যে হারিয়ে যায় আমাদের আত্মা।
৩.
ক্ষয়িষ্ণু চেতনার মেঘ
-বিচিত্র কুমার
পাহাড়ের ওপার থেকে ভেসে আসে এক দীর্ঘশ্বাস,
মনে হয় যেন প্রকৃতি নিজেই কাঁদছে,
মানুষের চেতনার মেঘে ঢেকে গেছে পৃথিবীর আলো।
আমরা হাঁটছি এক অনন্ত রাতের পথে,
যেখানে সূর্য ওঠে না আর আশা ফিরিয়ে আনে না।
প্রত্যেক মুহূর্তের গর্ভে লুকানো থাকে ব্যথা,
তবু মানুষ বাঁচে আশা আর স্বপ্নের ফানুস নিয়ে।
পাহাড়ের নিচে দাঁড়িয়ে প্রতিক্ষণ শোনা যায় নদীর গান,
তবু সেই সুরে লুকানো থাকে এক অস্পষ্ট হাহাকার।
পথের ধারে ঝরে পড়া পাতার মতো
অস্তিত্বের প্রতিটি মুহূর্ত শেষ হয়ে যায় নিঃশব্দে,
আকাশের নিচে আমরা সবাই অপেক্ষা করি শেষের ঘণ্টা।
৪.
ভাঙা স্বপ্নের কারিগর
-বিচিত্র কুমার
আমাদের হাতের কাজ যেন বালির ঘর,
এক মুহূর্তেই ভেঙে যায় সমুদ্রের ঢেউয়ে।
স্বপ্নগুলো সাজিয়ে তুলি নক্ষত্রের মতো,
কিন্তু সেই তারাগুলো ঝরে পড়ে অন্ধকারে।
জীবনের পৃষ্ঠা ঘুরতে থাকে বাতাসের স্রোতে,
প্রতিটি গল্প শেষ হয় এক নিঃশেষ অধ্যায়ে।
তবু আমরা স্বপ্নের কারিগর,
ভাঙা ইচ্ছার রঙে আঁকি নতুন দিনের ছবি।
কিন্তু সেই ছবিও একদিন ম্লান হয়ে যায়,
সময়ের রুক্ষ হাতে।
স্বপ্নের ভেতর যে রঙ ছিল,
তা আজ কেবল স্মৃতির মলিন ছায়া।
আমরা বাঁচি, তবু জানি—
আমাদের ভাঙা স্বপ্নই সবচেয়ে সত্য।
৫.
শেষ প্রহরের অপেক্ষা
-বিচিত্র কুমার
সমুদ্রের ঢেউ ফিরে আসে প্রতিবার,
ঠিক তেমনি আমাদের জীবনও ফিরে আসে শেষ প্রহরের দিকে।
দিনের আলো ফুরিয়ে যায় ধীরে ধীরে,
রাতের আঁধার ছুঁয়ে ফেলে প্রতিটি প্রাণ।
জীবনের রূপকথা শেষ হয়,
তবু আমরা অপেক্ষা করি নতুন শুরুর।
আশার দীপ্তি ম্লান হয়ে যায় প্রতিক্ষণে,
তবু তার ছায়া পড়ে থাকে মনের গভীরে।
বাতাসে ভেসে আসে অজানা কোনো সুর,
তবু সেই সুরে মিশে থাকে নীরবতার এক অন্তহীন বেদনা।
শেষ প্রহরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে,
আমরা খুঁজে ফিরি জীবনের চিরন্তন অর্থ,
যেখানে বেঁচে থাকার মানে শুধুই অপেক্ষা।