অবসর নেয়া শ্রমিককে সংবর্ধনা দিলেন তাঁত মালিক, অনন্য উদাহারন
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : ৩০ বছর ধরে অনন্য নৈপুণতায় শাড়ি তৈরি করা তাঁত শিল্পে কর্মরত শ্রমিক আব্দুস সালাম বেপারী (৬০) কে অবসরজনিত কারণে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। ‘তাঁত কুঞ্জ’ খ্যাত সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার খামারগ্রামের লাভলু বাবলু কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হোসেন লাভলু ও এম ডি তোফাজ্জল হোসেন বাবুল তাকে সংবর্ধনা দেন। সালাম ব্যাপারী নাটোর জেলার নলডাঙ্গা থানার মদনহাটের মৃত জসিম উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে। তিনি সততা ও নৈতিকতা নিয়ে একটানা ভারতের বাজারে সমাদৃত এ কারখানার শাড়ি তৈরিতে দক্ষ নৈপুণ্য কারিগর হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন টানা ৩০ বছর। রবিবার দুপুরে তাকে কারখানার অফিস চত্বরে এ সম্মাননা হিসেবে শুভেচ্ছা স্মারক, শাড়ি লুঙ্গি ও নগদ অর্থ অতিথি হিসেবে তুলে দেন কারখানার মালিকদ্বয়। তখন আব্দুস সালামের বহুদিনের শতাধিক সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর একুশে টেলিভিশনের পক্ষ থেকেও দরিদ্র এ তাঁত শ্রমিককে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেয়া হয়। এরপর আব্দুস সালাম সহ সকল শ্রমিক কর্মচারীকে করানো হয় মিষ্টিমুখ।
দেশে প্রথমবারের মত কারখানা মালিকের দেয়া তাঁত শ্রমিক হিসেবে এমন সম্মাননা পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আব্দুস সালাম। তিনি জানান, ৩০ বছর আগে এখানে কারখানা করার প্রথম থেকেই শাড়ি তৈরিতে নিয়োজিত ছিলাম। কখনো মনে হয়নি লাভলু বাবলু সাহেব আমাদের মালিক এবং আমরা কর্মচারী। দুই ঈদে যেমন তারাই তাঁত শ্রমিকদের একমাত্র ঈদ বোনাস দিতেন, পাশাপাশি সারা বছরই যথাযথ সময়ে শ্রমের মজুরি পরিশোধ ও নানা সমস্যায় সহযোগিতা করতেন। শেষ বেলায় তাদের কাছ থেকে এমন সহযোগিতা ও ভালোবাসা পাবো তা কখনো কল্পনা করিনি।
তিনি আরো জানান, তাঁত শ্রমিক হিসেবে কাজ করলে মজুরি পাবে, কাজ না করলে পাবে না। এটাই নিয়ম। এখানে কোন অবসর নেই। বাড়িতে গিয়ে এখান থেকে কাজ করে টাকায় কেনা ৩ বিঘা জমি জমি চাষাবাদ করব বলে জানালে মালিক লাভলু সাহেব
আমাকে আরো আর্থিক সহায়তা ও সম্মাননা দেয়ায় তার প্রতি চির কৃতজ্ঞ। বাকি জীবন আল্লাহ পাকের খেদমত ও বিয়ে উপযুক্ত দুই মেয়েকে বিয়ে দেব এবং অন্য কাজ করে চলতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন।
এদিকে জাতীয় কারুশিল্পী পদক পাওয়া ভারত-বাংলার প্রসিদ্ধ তাঁত ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন লাভলু জানান, খুব কষ্ট করে আজকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছি। এতে আব্দুস সালাম সহ সকল তাঁতি ও শ্রমিক ভাইদের সহযোগিতা রয়েছে। তাই তাদের ছাড়া আমি কেউ নই। তাঁত শ্রমিক আব্দুস সালাম ভাইকে কিছুটা হলেও সম্মান দিতে পেরে আমরা গর্বিত।
এদিকে এমন আয়োজনের খবর শুনে একুশে টেলিভিশনের পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি স্বপন মির্জা গিয়ে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন অবসর নেয়া তাঁত শ্রমিক আব্দুস সালামের হাতে।
তিনিও তাঁত মালিক আফজাল হোসেন লাভলু ও তোফাজ্জল হোসেন বাবুলের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন।