আমি উত্তরবঙ্গে এসেছি আপনাদের কথা শোনার জন্য, পরে যা বললেন : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
মোঃ লায়ন ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: বিগত সময়ে উত্তরবঙ্গের মানুষ আশানুরূপ উন্নয়ন পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট গ্রোয়ার্স মার্কেটে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমি উত্তরবঙ্গে এসেছি আপনাদের কথা শোনার জন্য। আপনাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার কথা শোনার জন্য। আপনাদের এলাকার কি কি উন্নয়নের প্রয়োজন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য এসেছি। আমরা জানি উত্তরবঙ্গের মানুষ, শীতে কষ্ট পায়, সেজন্য শীতবস্ত্র উপহার নিয়ে এসেছি। এই উপজেলার যা যা প্রস্তাবনা দিয়েছেন, তা দ্রুত বাস্তবায়ন পাবেন। বিগত সময়ে উত্তরবঙ্গের মানুষ আশানুরূপ উন্নয়ন পায়নি। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অঞ্চল সমুহের উন্নয়ন হয়েছে। যে এলাকায় নেতা থাকে, সে এলাকার উন্নয়ন হতো। যে এলাকায় নেতা নেই, সে এলাকার উন্নয়ন হতো না। আমার মন্ত্রণালয় থেকে উত্তরবঙ্গের জন্য গুরুত্ব আরোপ করবো। উত্তর বঙ্গের জন্য বিশেষ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে। বাংলাদেশর সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে উত্তরবঙ্গে বিনিয়োগ করার জন্য এবং শিল্প কলকারখানা স্থাপন করার জন্য সরকারি ভাবে বিশেষ প্রনোদনা বৃদ্ধির জন্য উচ্চ পর্যায়ে কথা বলবো।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আমি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারাও আবার নতুন করে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব করে নতুন করে বাংলাদেশে দুঃশাসনের মধ্যে ফেলবেন না। আপনারা দেখেছেন চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিকারীদের কি পরিনতি হয়। আপনারা যদি নিজেদের সেই পরিনতি না চান, তাহলে সেখান সরে আসুন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদেরকে প্রাণভরে গ্রহণ করবে। আপনারা ইতিমধ্যে শুনেছেন যে, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য দিল্লিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ছাত্রজনতার আন্দোলনে যারা শহীদ করেছেন, তাদের এই বাংলার মাটিতে বিচার হবে।
তিনি আরো বলেন, আপনাদের নিশ্চিত করে যেতে চাই, আগামী বছর উত্তরবঙ্গে উন্নতমানের একটি স্টেডিয়াম করার উদ্দ্যোগ গ্রহণ করবো এবং আশা করি আগামী বছরে সেই স্টেডিয়ামে বিপিএল অনুষ্ঠিত হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এতো রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদি এ দেশের মানুষ ভোগ করতে পারে, সেজন্য সরকার সকল সেক্টরে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আপনারা আপনাদের মতামত ও সমর্থন দিয়ে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন এবং কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান, সেটা আমাদের কে আমাদের কমিশন গুলোকে জানাবেন। কমিশনগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে পরামর্শ নিবে এবং আপনারা তা দিবেন।
বাংলাদেশের মানুষ যেমন বাংলাদেশ চায় তেমন বাংলাদেশ দেওয়া হবে। স্বাধীনতার পর এমন একটা সুযোগ বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিরল হয়ে এসেছে। এছাড়াও অবশ্যই নির্বাচন হবে এবং জনপ্রতিনিধিগণ সরকারে যাবে। তবে যে সুযোগ বাংলাদেশের মানুষের কাছে এসেছে আমাদের সকলকে একসাথে মিলে সেই সুযোগকে বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজনৈতিক দলসহ সকলকে সংস্কার কার্যক্রমে সরকার কে সহযোগিতা ও জাতীয় কার্যক্রম ধরে রাখতে কোন ফ্যাসিবাদি শক্তি যেন, কোন ধরনের পরাশক্তির সাহায্য নিয়ে পুনর্বাসন না হয়, সেজন্য সরকারকে সহযোগিতা করুন।
এর আগে তিনি কাহারোল উপজেলা থেকে হেলিকপ্টার যোগে খানসামা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামেন এরপর মরিয়ম বাজারে ভাঙা ব্রিজ পরিদর্শন শেষে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোতে পুলিশের একটি দলের গার্ড অব অনার গ্রহণ করে উপজেলা কমপ্লেক্স হলরুমে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক আবু জাফর, উপদেষ্টার একান্ত সচিব আবুল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত আশিক আহমেদ, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজমূল হক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজিজার রহমানসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।