ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় রায়হানের মায়ের
সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে মো. রায়হান আহমদকে হত্যার ঘটনার তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর মা সালমা বেগম। মামলার আসামিদের সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার খাতির রয়েছে, অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আকবরকে পালাতে সহায়তাকারীদের বিচারের আওতায় না আনলে মূল রহস্য উদ্ঘাটিত হবে না। পিবিআইয়ের তদন্তে ন্যায় বিচার পাওয়ার কোনো আশাই দেখছি না।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবের সামনে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ আয়োজিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের শোভাযাত্রা ও মানববন্ধনে একাত্ম হয়ে এসব কথা বলেন ছালমা বেগম। এ সময় তিনি ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে পোস্টার প্রদর্শন করেন।
সিলেট নগরীর আখালিয়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরদিন ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঞাসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়।
বিজ্ঞাপন
সালমা বলেন, ঘটনার মূল হোতা ফাঁড়ির বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঞা ধরা পড়ার সময় ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছে, রিমান্ডে নেওয়ার পর সেসব কথা আর বলেননি। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে রায়হান হত্যার দুই মাস হলে চলল। কার ইন্ধনে, কার ইশারায় আমার ছেলেকে ধরে ফাঁড়িতে নেওয়া হলো, কী কারণ ছিল, তা বের হয়নি। আমার ছেলেকে যে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেসব পুলিশ সদস্য ধরে নিয়ে গিয়েছিল, সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু ধরা পড়া কেউ আদালতে জবানবন্দি দেননি। এতে আমি বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দিহান। কিছুই বের করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।’
সালমা পিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আওলাদ সাহেব (পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা) একদিন আমার বাসায় আসেন। সেখানে আমার সঙ্গে কথা বলার সময় বাতেন (বরখাস্ত হওয়া পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা) ফোন দেন। আওলাদ আমার সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়ে বাতেনের সঙ্গে কথা বলে যান। এতেই প্রমাণ হয় পিবিআই বরখাস্ত পুলিশকে বাঁচাতেই তদন্ত করছে।’
সালমা বলেন, তাঁর কাছে পিবিআইয়ের তদন্ত রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তাঁরা অভিযোগপত্র দিতে গিয়েও বারবার সময় নিচ্ছে। এ অবস্থায় তদন্ত সুষ্ঠু হবে না। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের কথায় চলছেন। প্রধান আসামিকে যাঁরা পালাতে সহায়তা করল, ওরা কি অপরাধী না? খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকারী না? তাহলে তাঁদের সঙ্গে আওলাদের (পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা) খাতির কেন?
অধিকার-এর সিলেটের সমন্বয়ক আইনজীবী মুহিবুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী বক্তব্য দেন।
পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আওলাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। রায়হানের মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরখাস্ত হওয়া পুলিশের প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা বাতেনের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়েও কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে, জানতে চাইলে ‘চলছে’ বলেন।
তবে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান জানিয়েছেন, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঘটনাস্থল পুলিশ ফাঁড়ির কিছু ডিভাইস পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে। এ কাজটি হয়ে গেলে তাঁরা অভিযোগপত্র দাখিল করতে সক্ষম হবেন।