খানসামায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সংবর্ধনার নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

মোঃ লায়ন ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, খানসামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের সংবর্ধনার নামে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
ইতিপূর্বেও ক্লাস্টার পর্যায়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করার পরেও পুনরায় সংবর্ধনা নামে চাঁদা আদায়কে করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকারি চাকুরীর ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছে না বলে একাধিক শিক্ষক এমন জানিয়েছেন।
জানা যায়, আগামী ১৫ এপ্রিল খানসামা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স হলরুমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আয়োজন সংশ্লিষ্টরা।
এরই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কিছু শিক্ষক নেতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী
উপজেলার ১৪৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ৬০০ টাকা করে বাধ্যতামূলক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। এরপরই এটা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে চাঁদার টাকা দিতে অনেক প্রধান শিক্ষক অস্বীকৃতি জানালেও কর্মকর্তাদের ভয়ে বাধ্য হয়েই ৬০০ করে টাকা দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, ক্লাস্টার পর্যায়ে টিও (উপজেলা শিক্ষা অফিসার) এবং এটিও (সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা) স্যারেরা যোগদানের পরেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। পুনরায় জেলার স্যারদেরসহ উপজেলা স্যারদের সংবর্ধনা প্রদানের জন্য ১৪৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৬০০ টাকা করে বাধ্যতামূলক চাঁদা দেওয়ার জন্য মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে। ক্লাস্টারের দায়িত্বরত এটিও স্যার ও কিছু শিক্ষক নেতা এই চাঁদা প্রদানের জন্য প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করতেছে। তাই নিরুপায় হয়ে সেই চাঁদা দিতে হচ্ছে। আর সংবর্ধনা দিলেও এত টাকার প্রয়োজন হয় না।
তবে কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় কর্মকর্তারা আসবেন এটা ওনাদের দায়িত্ব। সেখানে চাঁদা তুলে এত টাকা খরচ করে সংবর্ধনার যৌক্তিকতা কথায়? আমাদের মত নিরীহ শিক্ষকদের টাকা তুলে অফিসারদের তোষামোদি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য দেখতেছি না।
চাঁদা সংগ্রহের বিষয়ে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, কাজল চন্দ্র রায় ও হোসনে মোবারকের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এমনটা আমরাও জেনেছি। তাঁরা আরো বলেন, সংবর্ধনার আয়োজক শিক্ষকরা। সংবর্ধনায় কাকে কি দিবে, কত করে চাঁদা ধরেছে এটা আমরা জানি না। কোন জানার থাকলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন এক কর্মকর্তা।
সম্প্রতি যোগদান করা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির তালুকদার চাঁদা সংগ্রহ করে সংবর্ধনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ কোন কিছু জানায়নি। চাঁদা সংগ্রহের ঘটনা ঘটলে সেটার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)
ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান সরকার বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে চাঁদা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই ঘটনার সত্যতা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারী দায়িত্ব হিসেবে মাসিক সমন্বয় সভায় খানসামা যাওয়ার কথা রয়েছে। সংবর্ধনার বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি। এর আগে নিয়মিত পরিদর্শনে জেলার ১২ টি উপজেলায় গিয়েছি। কোন উপজেলায় সংবর্ধনা গ্রহণ করেনি। সেখানে চাঁদা তুলে
সংবর্ধনা আয়োজন করলে সেই সভায় যাব না। তিনি আরো বলেন, চাঁদা আদায়ের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।