ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ১১:০৯ অপরাহ্ন

সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কংগ্রেস ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বিল পাস

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Thursday, December 24, 2020 - 1:43 am
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 76 বার
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কংগ্রেস ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বিল পাস করেছে। এর মধ্যে ৯০০ বিলিয়ন ডলার করোনভাইরাস ত্রাণ বিল এবং ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার সরকারি ব্যয় তহবিল রয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা শেষে গত ২১ ডিসেম্বর সোমাবার কংগ্রেস ও সিনেটে বিলটি পাস হয়।
সিনেটে ৯২-৬ ভোটে বিলটি পাস হয়। গত এপ্রিলের পর এই প্রথম কংগ্রেস অতিরিক্ত সহায়তা পাস করলো। বিলটি এখন স্বাক্ষরের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো সময় প্রেসিডেন্ট বিলটিতে স্বাক্ষর করতে পারবেন। বিলে তার স্বাক্ষর করার পর এটি আইনে পরিনত হবে। তবে প্রেসিডেন্ট ২২ ডিসেম্বর টুইট করে বলেছেন তিনি এই বিলে স্বাক্ষর করবেন না। কারণ তিনি অবশেষে ২.৩ ট্রিলিয়ন।
৯০০ বিলিয়ন ডলারের এই প্রনোদনা প্যাকেজ পাস হলো। এছাড়া ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের সরকারি ব্যয়ের বিলের ওই অর্থ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সরকারের ব্যয় তহবিলে অর্থ যোগান দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই বিলটি ২০ ডিসেম্বর রোববার পাস হতে পারে এমন সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
৯০০ বিলিয়ন ডলারের কোভিড-১৯ রিলিফ নতুন প্রনোদনা প্যাকেজে বেকার ভাতার সঙ্গে আন এমপ্লয়মেন্টে রয়েছেন এমন সকল বেকারের জন্য ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ৩০০ ডলার, যোগ্য সকল এডাল্ট ও ডিপেন্ডেন্টদের জন্য এককালীন ৬০০ ডলার, পিপিপি লোন, ইআইডিআই লোন, ভ্যাকসনি সরবরাহ ও প্রদান, রেন্ট রিলিফ, ইভিকশন বন্ধ, স্কুল ও কলেজের ফান্ডসহ বিভিন্ন প্রনোদনা রয়েছে। তবে নেই অ্যাসেনশিয়াল ওয়ার্কারদের জন্য কোনো ধরণের প্রনোদনা। নেই স্টুডেন্ট লোন মওকুফের কোনো বিষয়ও। সিটি ও স্টেটের জন্য আশানুরূপ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এছাড়াও প্রত্যাশিত আরও এমন অনেক কিছুই নেই।
দ্বিতীয় স্টিমুলাস বিল নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে নানা টানাপোড়েন চলে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচিত হয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট। আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিবেন জো বাইডেন। আর বিদায় নিবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দলই সব সময় স্টিমুলাস বিল পাসের পক্ষে ছিল। তারপরও সমঝোতা হচ্ছিল না। সবসময়ই সমস্যা ছিল অ্যামাউন্টের। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে বিল পাস করা হয়েছে একাধিকবার। রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকেও আলাদা বিল পাস করা হয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় কেনোটিই শেষ পর্যন্ত টিকেনি। এবার হাতে সময় ছিল খুব কম। আগামী কয়েকদিন পর অনুষ্ঠিত হবে জর্জিয়ার দুটি সিনেটের নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগেই পাস হলো দ্বিতীয় স্টিমুলাস বিল।
গত কয়েকদিন ধরেই এনিয়ে চলে আলোচনা। শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় উপনীত হন উভয় দলের সমঝোতাকারীরা। ২২ ডিসেম্বর সোমবার কংগ্রেসে ভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। দুই পক্ষ এই বিল পাসের ব্যাপারে একমত হয়। নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও (ক্যালেফোর্নিয়ার সিনেটর হিসেবে আগামী মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন) ভোট দেন।
নতুন বিল পাস হলেও সেখানে সাধারণ মানুষের সবার আশা আকাঙ্খা পূরণ হয়নি। সবাই চিন্তা করেছিলেন স্টিমুলাসের চেকের পরিমাণ প্রথম বারের মতো জনপ্রতি ১২০০ ডলার হবে। কিন্তু সেটি হয়নি দেওয়া হবে এরচেয়ে কম ৬০০ ডলার। ৯০০ বিলিয়ন ডলারের বিলে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে স্মল বিজনেস সহায়তা, স্কুল এবং বেকারদের জন্য প্রণোদনা।
নতুন স্টিমুলাস অনুযায়ী বেকার ভাতার সঙ্গে সপ্তাহে ৩০০ ডলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে বেকাররা তাদের আন এমপ্লয়মেন্টের সঙ্গে পাবেন আরও ৩০০ ডলার করে। এর আগে ফোডারেল থেকে এই খাতে ৬০০ ডলার করে গত জুলাইয়ের ৩১ তারিখ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল। এরপর ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে দেওয়া হয়েছিল ১২ সপ্তাহের জন্য ৩০০ ডলার করে। এই দুইখাতে মানুষ চিন্তা করেছিল এই গ্র্যান্ট আগের মতোই হবে কিন্তু সেটা হয়নি। আগামী দিনে বেকার ও সাধারণ মানুষরা কিভাবে তাদের জীবন-যাপন করবেন সেই ব্যাপারে ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ এখন আবার করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আগামী তিন মাসে এটা আরও বাড়তে পারে। পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। লোকজনের প্রানহানির সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়তে পারে। এই অবস্থায় মানুষ অনেকটাই দিশেহারা। এই ভাতা মার্চ মাস পর্যন্ত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
স্টিমুলাস চেকে আগে ১২০০ ডলার থাকলেও এখন বলা হয়েছে প্রতি এডাল্ট ও চাইল্ডকে ৬০০ ডলার করে দেওয়া হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঠানোর জন্য ডাইরেক্ট পেমেন্টের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যাদেও আয় ৭৫ হাজার ডলার এককভাবে ও কাপল হিসাবে ১৫০ হাজার ডলার তারা স্টিমুলাসের অর্থ পাবেন। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিফেন মুনুচেন বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব স্টিমুলাস চেক দেওয়া হবে। এটা আগামী সপ্তাহে দেয়া শুরু হবে।
সিএনবিসির কাছে তিনি বলেছেন, এটা একটি বড় বিল। এই বিলে সবার জন্য কিছু না কিছু রাখা হয়েছে।
ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য লোন : বিলে ৩২৫ বিলিয়ন ডলার লোনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পেচেক প্রোটেকশনের জন্য ২৭৪ বিলিয়ন ডলারের কথা বলা হয়েছে। পেচেক প্রোটেকশনের বিষয়টি যদিও বলা হয়েছে ফরগিভ্যাবল। এছাড়াও ১৫ বিলিয়ন ডলার ফান্ড রাখা হয়েছে বিভিন্ন ভেন্যু, মুভি থিয়েটার এবং কালচারাল ইন্সিটিউটের জন্য।
টান্সপোর্টেশন খাতের জন্য ৪৫ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্টেট টান্সপোর্টেশন ডিপার্টমেন্ট ও অ্যামট্রাকও রয়েছে।
বাড়িওয়ালাদের অনেকেই সংকটের মধ্যে রয়েছেন। ভাড়াটিয়রাও অনেকেই রয়েছেন। আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভাড়াটিয়াদের ইভিকশন করা যাবে না এমনটি নিয়ম করা হচ্ছে। এর আগে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইভিকশন করা যাবে না এমনটাই নিয়ম করা হয়েছিল। ভাড়াটিয়াদের এর আগে এক দফা রেন্ট রিলিফ দেয়া হয়েছে। আগামীতে আর একদফা দেওয়া হতে পারে। সেখানে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে রেন্টাল অ্যাসিসটেন্টন্স ও ইভিকশন বন্ধ করার জন্য। এটি দেওয়া হবে স্টেট গভর্মেন্টের মাধ্যমে।
এয়ারলাইন্স, ছোট ব্যবসায়ী ও স্কুলের জন্য উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এতে করে ওই প্রতিষ্ঠান ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। ৮২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে স্কুল ও কলেজের জন্য। নিরাপদে স্কুল খোলার জন্য এই খাতে সহায়তা রয়েছে। ১০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে চাইল্ড কেয়ার অ্যাসিসটেন্সের জন্য।
১৩ বিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্ন্যাপের জন্য। সেখানে বলা হয়েছে সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিসটেন্স প্রোগ্রাম ও চাইল্ড নিউট্রেশন বেনিফিট হিসেবে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। যারা স্ন্যাপ পাচ্ছেন তাদের সহায়তা ১৫ শতাংশ বাড়বে।
এছাড়াও ৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্যান্ডামিকের সময়ে আমেরিকানরা যাতে কানেন্ট থাকতে পারে সেই জন্য ব্রডব্যান্ডে এ্যাস্কেসের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়।
এছাড়াও ৮.৫ বিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন প্রদান করার জন্য। তবে কেউ কেউ বলছেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি আরও একটি স্টিমুলাস বিল দিতে পারেন। তবে এটা নির্ভর করবে আগামী সিনেটের দুটি আসনের নির্বাচনের উপর। এখন হাউস ডেমোক্র্যাটদের দখলেই আছে। কিন্তু সিনেটের দুটি আসন ডেমোক্র্যাটরা পেলে তখন সিনেটে বিল পাস করানো সহজ হবে। এর আগে প্রথমটি ছাড়া বাকি সবগুলো বিল সিনেটে গিয়ে আটকে গেছে। প্রেসিডেন্টকে একাধিক নির্বাহী আদেশেও স্বাক্ষর করতে হতে পারে।
মূলত ক্রিসমাসের আগে ও নতুন বছরের শুরুতে আমেরিকানদের যাতে কোনো ভোগান্তি না হয়, সরকার শাটডাউন না করে এবং অর্থনীতি সচল রাখা সম্ভব হয় সেই কারণেই এই বিল পাস করা হয়। এছাড়াও সরকারের শাটডাউনেরও একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সব মিলিয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামলা দেওয়া হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির আরও অনবিত হলে নতুন করে বাইডেন প্রশাসনকে প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে চিন্তা করতে হবে ২০২১ সালেই।
ডেমোক্র্যাটদের বড় অংকের অ্যামাউন্টের স্টিমুলাস বিলে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল সিনেট ম্যাজরিটি লিডার মিচ ম্যাককনেলের। তিনি স্টিমুলাস দিতে চাইলেও তা কখনো যাতে বড় অংকের না হয় সেটাই লক্ষ ছিল। এবার তিনি ১ ট্রিলিয়ন ডলারের কম বিলের ব্যাপারে সম্মত হন। উভয় কক্ষে ৯০০ বিলিয়ন ডলারের কোভিড রিলিফ বিল পাস হয়।
ফেডারেল গভর্নমেন্ট শাটডাউন এড়ানোর লক্ষে ৭ ডিসেম্বর ৯০৮ বিলিয়ন ডলারের বাইপার্টিসান কোভিড-১৯ রিলিফ পরিকল্পনা বিল অনুমোদন করে। কিন্তু নানা চড়াই-উৎরাইর শেষ পর্যন্ত উভয় কক্ষে ৯০০ বিলিয়ন ডলারের সুইপিং রেস্কিউ (পুনরুদ্ধার) প্যাকেজ অনুমোদন করেন মিচ ম্যাককনেল।
অনুমোদিত অর্থের সাহায্যে প্রত্যেক বেকার শ্রমিক-কর্মচারিকে সপ্তাহে অতিরিক্ত ৩০০ ডলার হিসেবে আরও ১৬ সপ্তাহ বেনিফিট প্রদান করার পাশাপাশি উক্ত প্যাকেজের অর্থ ফুড ব্যাঙ্ক সাহায্য, রেন্ট রিলিফ, স্টুডেন্ট ঋণ মওকুফ এবং পেরোল প্রটেকশন প্রোগ্রাম সম্প্রসারণেও ব্যবহৃত হবে।
২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত উক্ত অর্থায়ন অব্যাহত থাকবে। আর অবশিষ্ট অর্থ নিয়োগ কর্তাদের লাইঅ্যাবিলিটি প্রটেকশন (দেনা সংরক্ষণ) এবং স্টেট ও স্থানীয় সরকারকে সাহায্য হিসেবে প্রদান করা হবে। প্রত্যেক স্টেট সর্বনিম্ন ৫০০ মিলিয়ন সাহায্য পাবে।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বিলটি অনুমোদনের পর হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলসি এবং সিনেট মাইনরিটি লিডার সিনেটর চার্লস চাক শ্যুমার ঘোষণা করেন যে আমরা অবশ্যই সর্বনাশা করোনাভাইরাস মহামারি নির্মূল করব।