মুহূর্তেই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ওষুধের পরীক্ষা চলছে
মোঃ নাসির, বিশেষ প্রতিনিধিঃ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এমন ওষুধের পরীক্ষা চলছে। এ ওষুধটি আক্রান্তের শরীরে মুহূর্তেই শুধু প্রতিরোধ গড়ে তুলবে না, এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরে থাকবে দীর্ঘ দিন। গবেষকরা বলছেন, এ ওষুধটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় জরুরি ওষুধ (ইমার্জেন্সি ড্রাগ) হিসেবে দেয়া যাবে।
ল্যাবরেটরিতে কার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পর এবার ১০ জনের ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগের পরীক্ষা চলছে। তারা আশা করছেন, পরীক্ষা সফল হলে হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাবে ওষুধটি। যারা করোনা আক্রান্তদের সেবাযত্ন করবেন, আক্রান্ত না হলেও ওষুধটি দেয়া হলে তাদের মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ব্রিটেনের ডেইলি মেইল এ-সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট ছেপেছে গতকাল শনিবার। গার্ডিয়ানও এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট করেছে।
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন হসপিটালের (ইউসিএলএইচ) বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ পরীক্ষা সফল হলে বিশ্বব্যাপী এক হাজার ১২৫ জনের মধ্যে ওষুধটি পরীক্ষা করা হবে। যে ১০ জন ইতোমধ্যে নতুন এই ডোজটি নিয়েছেন, তাদের পরপর দু’টি ডোজ ওষুধ দেয়া হয়েছে ইনজেকশনের মাধ্যমে। গবেষকরা এটিকে ‘স্টর্ম চেজার’ বলছেন। তারা আশা করছেন, এই ওষুধটি দেয়া হলে মানুষের শরীরে ছয় মাস থেকে এক বছরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
ইউসিএলএইচের বিজ্ঞানীরা করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার জন্য প্রোভেন্ট নামে একটি দ্বিতীয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (পরীক্ষা) শুরু করেছেন, যারা করোনার ভ্যাকসিন থেকে উপকার পাননি অথবা যাদের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করে না অথবা যারা করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
যে ১০ জনের মধ্যে নতুন এ ওষুধটির পরীক্ষা চলছে তাদের মধ্যে ইউসিভার্সিটির ছাত্র ও মেডিক্যাল স্টাফ রয়েছেন। তৃতীয় ট্রায়ালের অংশ হিসেবেই এই ১০ জনের ওপর ওষুধটির পরীক্ষা চলছে।
এই পরীক্ষার পরবর্তী টার্গেট গ্রুপের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, অনেকে একত্রে একই বাসায় থাকে এমন শিক্ষার্থী এবং সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি, যারা করোনা রোগীদের দেখাশোনা করেছেন, সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং শিল্পকারখানার শ্রমিক।
ওষুধটির এখনো কোনো নাম দেয়া হয়নি। সাঙ্কেতিক ‘এজেডডি৭৪৪২’ নামক এই অ্যান্টিবডিটি ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা তৈরি করেছে। এ কোম্পানিটিই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) তৈরির কাজ করছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরবর্তী পরীক্ষায় বয়স্ক ব্যক্তি, ক্যান্সার আক্রান্ত, এইচআইভি আক্রান্ত এবং যারা দীর্ঘমেয়াদি কেয়ার হোমে থাকছেন এমন ব্যক্তিদের প্রোভেন্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হবে। এনএইচএস ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল মেডিক্যাল পরিচালক প্রফেসর স্টিফেন পউয়িস বলেছেন, ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তিনি বলেন, ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগীদের ক্ষেত্রে যারা ভ্যাকসিন থেকে উপকার পাবেন না, তাদের জন্য এটি বিকল্প চিকিৎসা হতে পারে।
স্টর্ম চেজারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউসিএলএইচের ভাইরোলজিস্ট ড. ক্যাথরিন হোলিহান। তিনি বলেন, এ অ্যান্টিবডির সংমিশ্রণটি ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। তাই আশা করছি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই চিকিৎসা দেয়া হলে আক্রান্তদের টিকা দিতে দেরি হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে করোনা ছড়ানোর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
ইউসিএলএইচ সংক্রামক রোগের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ড. নিকি লংলি প্রোভেন্ট ট্রায়াল করছেন। তিনি বলেন, টিকা যাদের মধ্যে কাজ করে না তাদের আশ্বাস দিতে চাই এই ওষুধ তাদের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ পল হান্টার বলেন, স্টর্ম চেজার ট্রায়ালের নতুন চিকিৎসা হাজারো জীবন বাঁচাতে সহায়তা করতে পারে। তিনি বলেন, কেয়ার হোমে করোনা প্রতিরোধ এবং গুরুতর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঝুঁকির মুখোমুখি লোকদের বাঁচাতে এটি কাজ করবে। কারণ এমন জরুরি ওষুধ না হলে এ ধরনের রোগী বাঁচার সম্ভাবনা কম।