বৈচিত্র্যময় ২০২০
লেখিকা- জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা : আজ কথা বলবো ২০২০ সাল নিয়ে। ২০২০ সাল আমার দেখা একটি বৈচিত্রময় বছর। যে বছরটি কেড়ে নিয়েছে শত শত তাজা প্রান, আবার সেই বছরটিতেই শুরু হয়েছে হাজারো লোকের জীবনের নতুন অধ্যায় । ২০২০ সালটি যখন এসেছিলো তখন সবাই নতুন বছরকে সুন্দর ভাবে বরণ করে নিয়েছিলো। বিশ সালের বিষময়তা নিয়ে তখন কেউ ভাবেনি। ২০২০ সালটি প্রথম প্রথম সবার ভালো কাটলোও ধীরে ধীরে বিশ সালটি হয়ে উঠে বিষময়। আবার কারো কারো জীবনে ২০২০ নিয়ে এসেছিলো নতুন জীবনের বার্তা। ২০২০ সালে মৃত্যু হার যেরকম বেশি ছিল, তেমনি জন্ম হারও ছিল বেশি। কারো কারো সংসারের প্রিয় লোকটি হারিয়ে যায় এ বছর আবার কারো কারো ঘর আলোয় আলোকিত হয়ে এসেছে নতুন অতিথী । তাই বিশ সাল সবার জন্যই অদ্ভুত একটি বছর। আমার দেখা ২০২০ সালের কিছু সত্যি ঘটনা নিয়ে আজ আমি লিখতে বসেছি।
বছরের শুরুটা সবার জন্যেই ছিল ভালো, সবকিছুই ঠিক ছিলো। সবাই সবার মত করে জীবন পাড় করে যাচ্ছিলো। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত ছিল। নতুন বইয়ের আগমনে বাচ্চাদের মনেও ছিল আনন্দ আর উল্লাস, কেউ আবার নতুন স্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে শুরু করেছিলো নতুন অধ্যায়। সবটা যেন ঠিক ছিল কিন্তু হঠাৎ করেই সবার মনে শুরু হলো করোনা আতঙ্ক আর মৃত্যু ভয়। অন্যান্য দেশ ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে করোনা ছড়িয়ে পরতে লাগলো বাংলাদেশেও। আর তখনই বন্ধ হতে লাগলো স্কুল, কলেজ, কোচিং, ইউনিভার্সিটি, কর্মসংস্থান। এমনকি যানবাহন, নৌ পরিবহন, বিমান পরিবহন কোনো কিছুই বাদ যায়নি তখন । সকল কিছুই যেন থমকে যেতে লাগলো ধীরে ধীরে।
তারপর শুরু হয়ে যায় লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন। যে নামগুলোর সাথে ২০২০ সালে এসেই মানুষ পরিচিত হয়েছে। ঘরে ঘরে শুরু হয় আতঙ্ক আর মৃত্যু। সকল কাজকর্ম বন্ধ থাকায় মধ্যবিত্ত এবং গরিব অসহায় মানুষগুলো যখন ক্ষুধার জ্বালায় ঘরের কোনে পরে থাকে তখন এক ধরনের ভুক্তভোগী লোকেরা সাহায্যের নাম করে নিজেদের স্বার্থ আদায় করে নেয়। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় জনসমাগম হয় এমন সব অনুষ্ঠান বন্ধ করতে সরকারি নির্দেশ থাকায় আটকে যায় হাজারো বিয়ে, ভেঙ্গে যায় তাদের স্বপ্ন। এভাবেই শত শত দুঃখের খবরগুলো চলছিল প্রতিনিয়ত। তখন দেশ- বিদেশে চলছিল যেন শত শত মৃত্যু মিছিল। অন্যান্য সবার মতো ২০২০ সালে আমাদের পরিবারেও পড়েছিলো কিছু অশুভ ছায়া। যার কারনে ঝড়ের মতো দুঃখ এসে ধরা দিয়েছিল আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে। ধীরে ধীরে আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা কাটিয়ে উঠেছি আমাদের ফ্যামিলির খারাপ সময়গুলো। এই ২০২০ সালেই আমি হারিয়েছি আমার অত্যন্ত কাছের একজন বন্ধুকে। যাকে কখনো ভোলার নয়। এছাড়া এই বিশ সালেই হারিয়েছি আমার অনার্স লাইফের শিক্ষক সম্মানিত কথা সাহিত্যিক নুরুল করিম নাসিম স্যার কে। কখনো ভাবিনি অন্যান্য সবার মতই আমার ও কোনো প্রিয় মানুষের নাম থাকবে ২০২০ সালের এই মৃত্যু খাতায়।
২০২০ সালের যেমন অনেকটাই খারাপ দিক রয়েছে তেমনি অনেকটা ভালো দিকও রয়েছে। করোনার কারনে সকল কিছু বন্ধ থাকার কারনে প্রতিটি মানুষ পুরো বছরটা জুড়ে তাদের ফ্যামিলির পাশে থাকতে পেরেছে। সুখে- দুঃখে ফ্যামিলির পাশে থেকে জীবনটাকে নতুনভাবে উপভোগ করতে পেরেছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে বই- প্রেমিরা বই পড়ার অনেক সময় পেয়েছে এবং লেখকরা লেখালেখি চালিয়েছে পুরোদমে। যেমন আমি নিজেও এই বছরে আমার লেখালেখির কাজটা এগিয়ে নিতে পেরেছি। লেখালেখি করার ফলে এই বছরেই আমার নিজের লেখা কবিতা, গল্প প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন ম্যাগাজিন এবং পত্রিকায়। এছাড়া এ বছরেই আমি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আর্কাইভস ও গ্রন্থাগারে লেখক হিসেবে আওতাভুক্ত হয়েছি। করোনার কারনে বাড়িতে থাকার ফলে এবছরেই আমি জীবনের আরেক নতুন অধ্যায়ে পদার্পণ করেছি। তেমনি এ বছরেই মানুষের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
অবশেষে সকল দিক থেকে বিবেচনা করে আমার মতে, ২০২০ সালটি আসলেই একটি বৈচিত্র্যময় বছর। যে বছরটির খারাপ ভালো দুটো দিকই রয়েছে। যে বছরটি অন্য সকল বছর থেকে সম্পূর্ন আলাদা। এখন একটাই কামনা, ২০২১ যেন সবার জন্য হয়ে উঠে অনেক অনেক ভালো। আর কোনো অভিশাপ যেন না পড়ে মানুষের উপর। করোনার থাবা থেকে যেন মুক্তি পায় প্রতিটি মানুষ।